জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার কথিত ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ফোনালাপের কথিত অডিও ক্লিপ ফাঁস হলে তা মুহুর্তেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ গোলাম রাব্বানীর ওই ফোনালাপকে ঘিরে ইতিমধ্যে আলোচনা-সমালোচনা এবং আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কথোপকথনের বিষয়টি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ফাঁসাতে করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা।
কথোপকথনের শুরুতেই মধ্যস্ততা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামজা রহমান অন্তর, কথা হয়েছে অন্তরের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন দিয়ে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা হামজা রহমান অন্তর দাবি করছেন, তিনি ওই অডিও রেকর্ড ফাঁসের সঙ্গে জড়িত নন। এবিষয়ে প্রক্টরকে তিনি জানিয়েছেন: এটি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে থেকেও ঘটতে পারে। অডিও ফাঁসের কথোপকথন সম্পর্কে গোলাম রাব্বানীর বক্তব্য জানতে অনেক চেষ্টার পরও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জাবি ছাত্রলীগ সভাপতির দাবি, মূলত জাবি শাখা ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই সুপরিকল্পিতভাবে পুরো অডিও রেকর্ডটি বানানো হয়েছে।
জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন: রেকর্ডিং যে সাজানো হয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ছোট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এটি করা হয়েছে। আমাদের শাখা ছাত্রলীগেরই দু’জন নেতা এমনটি ঘটিয়েছে এতে আমরা অনেক কষ্ট পেয়েছি। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আমাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও আমরা দাবি জানাবো তাদেরকে যেনো বিচারের আওতায় আনা হয়।
ফোনালাপে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন: ‘আমাদের নেত্রীই তাকে (রাব্বানী) সেন্ট্রাল ছাত্রলীগের সেক্রেটারি বানিয়েছে। আমি তার রাজনীতি করতাম, তার কথা শোনা আমার দায়িত্ব ছিল। তার নির্দেশনা অনুযায়ী যা বলতে বলছে তাই বলছি, সে যা করতে বলছে তাই করছি। অনেক কথাই তার সাথে হয়েছে। আগে-পরের অনেক কথাও তো জড়িত। সে তো এখন সাবেক। আমি আসলে কোন কথার প্রেক্ষিতে এসব বলছি মনে নেই। মনে করে জানাবো।’
কথোপকথনের বিষয়ে রোববার রাতে হামজা রহমান অন্তরের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন, কথোপকথনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর তাকে ফোনে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতিতে তিনি শিক্ষা জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে আছেন। এমতাবস্থায় তার কোন ক্ষতি হলে দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর বর্তাবে।
বিবৃতিতে অন্তর বলেন: গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট সম্পর্কে জানার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ভাই আমাকে ফোন দেন। এক পর্যায়ে ক্যাম্পাস ও শাখা ছাত্রলীগের অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আমি উক্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শাখা ছাত্রলীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ভাইয়ের সাথে কথা বলিয়ে দেই।
বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ তুলে বলেন: উক্ত ঘটনার ফোনালাপ রোববার সন্ধ্যায় ফাঁস ও ভাইরাল হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফিরোজ আল হাসান স্যার আমাকে ফোন দিয়ে হুমকি-ধামকি দেন। প্রচ্ছন্ন হুমকির সুরে প্রক্টর স্যার আমাকে বলেন, আমি কেন অডিও ভাইরাল করেছি! কাজটি ঠিক হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন: এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান-সম্মান নষ্ট করেছে।
এক পর্যায়ে তিনি আমাকে দুর্নীতির প্রমাণ দেখাতে হুমকি প্রদান করলে আমি বলি: ‘এটি জাহাঙ্গীরনগর ও দেশব্যাপী ওপেন সিক্রেট। এবং আমাকেও টাকার ভাগ দেবার চেষ্টা করলেও আমি তা প্রত্যাখান করি। জাবির ৩৮ থেকে ৪৫ ব্যাচের জুনিয়ররাও টাকার ভাগ পেয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফিরোজ আল হাসান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে আমি শুধু তার কাছে অডিও রেকর্ডের বিষয়ে জানতে ফোন দিয়েছি। ফোনালাপটি কখন হয়েছিলো, কীভাবে হয়েছিলো সেটি জানতে। কিন্তু সে আমার বিরুদ্ধে পাল্টা মিথ্যা বিবৃতি দিয়েছে। সে আমার খুবই স্নেহের একজন ছাত্র। সাধারণ কথোপকথন নিয়ে সে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলবে কখনো ভাবিনি।
ফোনালাপের প্রসঙ্গে ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন: অডিওতে আমি টাকা দিয়েছি, এমন গল্প ফাঁদছে। এই মিথ্যাটাকে সত্য প্রমাণ করার দায়িত্ব আমার না। গোলাম রাব্বানী এখন যেহেতু পদে নেই, সেজন্য ষড়যন্ত্র করে তার অনুসারীদের দিয়ে এসব বলাতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত থাকেন, আমরা বাসায় কোনও টাকা-পয়সার কোন কথাই বলিনি, আনিওনি।