চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রাবিতে শিবির সন্দেহ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে ‘মুক্তিপণ’ আদায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিবির সন্দেহে এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতা ও আরেক শিক্ষার্থী।

গত বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ডেকে এনে তিন ঘণ্টা জিম্মি করে তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করে তারা।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক এবং ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সহায়তায় জড়িত দুইজনকে চিহ্নিত করা হয়।

ভুক্তভোগী ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জড়িতরা হলো একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম এবং ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাফিউর রহমান। শাফি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক।

ভুক্তভোগী ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, গত দুই দিন থেকে আমার বিভাগের বড় ভাই নাঈম প্রায় সবসময় আমাকে ফোন দিতেন। সেদিন আমাকে ফোন দিয়ে এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করার কথা বলছিলেন। পরে তার সঙ্গে গেলে তিনি আমাকে সোহরাওয়ার্দী হলের ১৯১ নম্বর কক্ষে শাফির কাছে নিয়ে যান। এসময় তারা আমার কাছ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুকে আমি শিবির করি বলে দাবি করেন। আমি অস্বীকার করলে তারা আমাকে চড়-থাপ্পড় ও রড দিয়ে মারতে থাকে। আমাকে পুলিশ দেয়ার হুমকি দেয়।

ওমর ফারুক আরো বলেন, সেসময় তারা আমার কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করে। পরে তারা আমার পরিবারের কাছে ফোন করে টাকা চাইলে আমার বড় ভাই (ফিরোজ) বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। টাকা পেয়ে তারা আমাকে ছেড়ে দেন এবং বিষয়টি কাউকে না জানানোর হুমকি দেন। পরে বিষয়টি আমার জেলা সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমানকে আমার পরিবার কোনো এক মাধ্যমে জানায়। তিনি সাংবাদিকসহ অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে ঘটনাটি জানালে তারা আজ (গতকাল) রাতের মধ্যে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

বিষয়টি স্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা শাফি বলেন, টাকা নেয়ার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। ওই দিন রাতে আমি রুমে শুয়ে ছিলাম, তখন ফারুককে আমার কাছে নিয়ে আসে নাঈম। ওই সময় ফারুকের গতিবিধি ও আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করি। পরে তাকে শিবির সন্দেহে আটক করি। তবে টাকা নেওয়ার সঙ্গে আমি জড়িত নই।

টাকা নাঈম নিয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এ বিষয়ে নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাকুরগাঁও জেলা সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে ও সাংবাদিকদের বিষয়টি জানাই। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে মধ্যরাত হয়ে গেলেও প্রক্টর কোন ব্যবস্থা নেননি।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়েছি। পরে শুনেছি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি সমাধান করেছে।

তবে ঘটনাস্থলে কোনো পুলিশকে দেখা যায়নি।

রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, বিষয়টি শোনার সময় আমরা মিছিল করছিলাম। পরে মিছিল শেষে আমরা হলে গিয়ে টাকা আদায়ের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হতে পেরেছি। তবে জড়িত দুইজনের মধ্যে যার কাছে টাকা সে পলাতক। তবে আমরা যেভাবেই হোক আজ রাতের মধ্যেই ফারুককে টাকা ফিরিয়ে দেবো এবং ফারুকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। এ অপরাধের সাথে জড়িত থাকার কারণে আমরা ছাত্রলীগ নেতা শাফিকে শোকজ করেছি।