রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে চাকরিপ্রত্যাশীর কাছে টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে।
অভিযোগকারী এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। এছাড়াও এক প্রার্থীর নিয়োগের যোগ্যতা ছিলো না বলে প্রশ্ন তুলেছেন ওই চাকরিপ্রত্যাশী।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের আলুপট্টির একটি রেস্তোরাঁয় চাকরিপ্রত্যাশী নুরুল হুদা সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ করেন। তবে এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে একটি নিউজ পোর্টালে উপ-উপাচার্য জাকারিয়ার সঙ্গে নুরুল হুদার স্ত্রী তুজ সাদিয়ার নিয়োগ সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখন বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
নুরুল হুদা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি লালমনিরহাট উপজেলায়। তিনি স্নাতকে সিজিপিএ ৩.৬৫ ও স্নাতকোত্তরে ৩.৬০ পান। তিনি আইন অনুষদে সেরা হয়ে ২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পান।
সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হুদা অভিযোগ করেন, উপ-উপাচার্য জাকারিয়া ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর সাক্ষাৎকারের আগে তার স্ত্রী তুজ সাদিয়ার মাধ্যমে তার কাছে টাকা চেয়েছিলেন। তবে এ বিষয়ে গত ১৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানকে জানালেও তিনি এই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে জানান।
‘‘গত ৩ অক্টোবর উপ-উপাচার্য জাকারিয়া আমার কাছে চাকরি ও ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দিয়ে এই বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করতে বলেন। ১১ অক্টোবর এই ব্যাপারটি উপাচার্যকে অবহিত করি। প্রকৃত সত্য হলো, দুই শিক্ষকের মাধ্যমে উপাচার্য আব্দুস সোবহানের পক্ষ থেকে আমাকে সমঝোতায় বসার দিয়ে বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকতে বলা হয়।’’
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর আমার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার নেন। ১৩ নভেম্বর নিয়োগ বোর্ডের সাক্ষাৎকারের আগের দিন ১২ নভেম্বর তিনি টাকা পরিশোধ করেন। টাকার ব্যাপারটি তিনি ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ নভেম্বর সহ-উপাচার্য জাকারিয়ার ভাগ্নে ও ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক গাজী তৌহিদুর রহমানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রেরণ করেন।
এক প্রার্থীর নিয়োগের যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে নুরুল হুদা বলেন, ‘আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্যে এলএলবিতে (অনার্স) আমার ফলাফল (সিজিপিএ-৩.৬৫) সকলের চেয়ে এগিয়ে ছিল। নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজনের অনার্সের ফল হচ্ছে- বনশ্রী রাণী সিজিপিএ-৩.৬৪, সালাউদ্দিন সাইমুম সিজিপিএ-৩.৪৩ এবং নূর নুসরাত সুলতানা ২য় শ্রেণি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অনার্স বা মাস্টার্সের যেকোনো একটিতে ১ম শ্রেণি অথবা ৩.৫০ থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। নিয়োগপ্রাপ্ত নূর নুসরাত সুলতানা স্নাতকে ২য় শ্রেণি এবং স্নাতকোত্তরে প্রাপ্ত ৬৩.৩৩ শতাংশ নম্বরকে ১ম শ্রেণি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। নূর নুসরাত সুলতানা লন্ডনের বিপিপি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্না তকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। বিপিপি’র গ্রেডিং পলিসি অনুযায়ী ৬৩.৩৩ শতাংশ নম্বর ২য় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। তবে এলএলএম-এ প্রথম সারির ফলাফলকে ‘ডিসটিঙ্কশন’ বলা হয়, যা পেতে একজন শিক্ষার্থীকে ৭০ শতাংশ বা তদূর্ধ নম্বর পেতে হয়। এছাড়া, ইউজিসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং পলিসি অনুযায়ী ৬৩.৩৩ শতাংশ নম্বরকে বি-গ্রেড অর্থাৎ ৩.০০ ধরা হয়। তাহলে নূর নুসরাত সুলতানার স্নাতকোত্তরে প্রাপ্ত ৬৩.৩৩ শতাংশ নম্বরকে ১ম শ্রেণি বা ৩.৫০ বিবেচনা করে তাকে নিয়োগ দেওয়া হলো?’
তবে কখনো এই নিয়োগ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গঠন হলে, তিনি কমিটিকে বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ প্রদান করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান এবং সহ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া কেউই ফোন ধরেননি।