চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রানা প্লাজা ট্রাজেডির ছয় বছর: বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে পরিচিত রানা প্লাজা ধসের ছয় বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে গার্মেন্টস কারখানা খুলে এতো শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের কারো এখনও শাস্তি হয়নি।
রানা প্লাজার মামলা চলছেই। নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত শ্রমিকরা নানাভাবে আর্থিক সহায়তা পেলেও সবাই ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে রানা প্লাজার সেই জায়গাটি।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে আটটা। প্রায় একবারে ধসে পড়ে সাভারের ৯ তলা ভবন রানা প্লাজায় থাকা গার্মেন্টস কারখানাসহ এক শ’র বেশি দোকান। সরকারি-বেসরকারি এবং সাধারণ মানুষের আপ্রাণ চেষ্টায় ১৭ দিনে ১ হাজার ১ শ’ ৭৫ জন শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। জীবিত উদ্ধার হয় দু’হাজারের বেশি শ্রমিককে।
এ ঘটনার পর নানা অভিযোগে মামলা হয়েছে মোট ১৪টি। এর মধ্যে রয়েছে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ, রাজউকের করা ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন, নিহত একজন পোশাক শ্রমিকের স্ত্রীর করা খুনের মামলা এবং পুলিশের করা কয়েকটি মামলা। আদালতে অভিযোগপত্র দিলেও বিচারের ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি নেই বলে দাবি করেছেন গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন। তারা বলেছেন, ৪১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছিল যাদের মধ্যে দু’জন মারা গেছেন। মামলার মূল আসামী ক্ষমতাসীন দলের নেতা সোহেল রানা। সে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকলেও অন্য আসামীরা এখন জামিনে মুক্ত। আদালতে ১৪টি মামলা দায়ের হলেও একটি মাত্র মামলায় শুধু রানার সাজা হয়।

মামলাগুলোতে বিভিন্ন সময়ে রানা ও তার পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও সাভারের জনপ্রতিনিধি, প্রকৌশলী, গার্মেন্টস মালিক ও কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জেলে যেতে হলেও বর্তমানে তারা সবাই জামিনে আছেন।

ঘটনার দুই বছর এক মাস পর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৫৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে দুই মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়। ২০১৬ সালের জুন ও জুলাইয়ে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চার্জ গঠন হলেও উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন ২১ জন অভিযুক্ত। তবে ওই হত্যা মামলায় স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ১২ মে।
পাঁচ বছরেও সহস্রাধিক মানুষের হত্যার দায়ে কারো শাস্তি হলো না। তাহলে কি আমাদের বুঝতে হবে- এত বড় হত্যাকাণ্ডের বিচার পাবে না ক্ষতিগ্রস্তরা? দেশের শিল্প ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনায় এখনও আহতদের আহাজারি বাতাসে ভাসে। এখনও পঙ্গু জীবন যাপন করা মানুষগুলোর কান্না শোনা যায়।

এত কিছুর পরও আমরা মনে করি, এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে, এ ধরনের অবহেলায় মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব, বিচার কাজ শেষ করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক–এটাই সরকার ও বিচার বিভাগের নিকট আমাদের চাওয়া।