একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নেতা ও দলের হাকডাক দেখে দেশের জনগণ এক প্রকার আতঙ্কবোধ করছে। কারণ, নির্বাচন আসলেই এইসব দল ও দলের নেতা ও তাদের পেটুয়া বাহিনী দিয়ে যেসব তান্ডব ও ধ্বংসযজ্ঞের অতীত স্বাক্ষী রেখেছে; সামনে কী হবে বা কী হতে যাচ্ছে-এটা নিয়েই সাধারণ জনগণের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে। আর সেই সাথে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষগুলো আছে প্রচণ্ড চাপে, প্রচণ্ড আতঙ্কে!
এই দেশে তথাকথিত রাজনীতিবিদ ও রাজনীতির সাথে আবার তথাকথিত কিছু গণমাধ্যমকেও দেখেছি যারা বিগত সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট প্রদানের ছবি এডিট করে নারীর হাতে শাঁখা আর সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর এক ধরনের ‘নির্যাতন করতে’ বার্তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে। আর এটার সুযোগ পেয়েছে আমাদের নোংরা রাজনৈতিক চরিত্রের কারণে। কারণ, রাজনীতিতে সংখ্যালঘুদের আয়ত্তে আনতে, ভোটের হিসেবে তাদের নিজেস্ব অধিকার কেড়ে নিতে এক ধরনের রাজনীতির নষ্ট চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকে।
আর এখন জোট মহাজোটের মধ্যে নতুন করে যুক্তফ্রন্ট, ঐক্যফ্রন্ট নামক রাজনৈতিক দল ও নেতাদের হাকডাক দেখা-শোনা যাচ্ছে। এই যুক্ত-ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের অতীত কী এটা জাতি বেশ ভালো করেই জানে। তারা আবারও বাংলাদেশকে পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে ষড়যন্ত্র করছে। কারণ তাদের কারো কোনো সুস্পষ্ট রাজনৈতিক আদর্শ নেই। বিগত সময়ে এই রাজনৈতিক দল ও নেতাদের হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এদের প্রত্যেক নেতা রাজনৈতিকভাবে পঁচে গেছে। কারণ দেশের উন্নয়ন বিরোধী কর্মকাণ্ডের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তাদের ষড়যন্ত্রের পদচিহ্ন রেখে গেছে।
এই যেমন পদ্মা সেতুর কথাই যদি বলি, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলে এই যুক্ত-ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের গলা উচিয়ে কথা বলতে শুনেছি। মাঠে মিছিল করতে দেখেছি। বিভিন্ন সেমিনার-আলোচনা সভাগুলোতে শেখ হাসিনার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করেছে; কিন্তু কাউকে দেখেনি দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে একটু চিন্তা করতে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উপর যে কলঙ্ক লেপন করার ষড়যন্ত্র করেছে এখানে এই সব নেতাদের ষড়যন্ত্র ছাড়া বাংলাদেশ, বাংলাদেশের জনগণ, বাংলাদেশের সম্মান-মর্যাদা নিয়ে কাজ করা তো দুরের কথা, চিন্তা-ভাবনা করতেও কেউ কখনো শুনেছে বলে মনে হয় না। মূলত, এই ধরনের যুক্ত-ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র বিতর্কিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ। আর এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা খুঁজে পাবেন যখন তাদের একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন, যখন পঁচাত্তর নিয়ে একেক জনের অবস্থান নিয়ে গবেষণা করবেন। ডক্টর সাহেব, যিনি আবার ডাক্তার সাহেবকে রীতিমত বাসায় ডেকে নিয়ে অপমান, অপদস্থ করে চোরের মতো স্বাধীনতাবিরোধীদের কীভাবে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা দেওয়া যায়, কীভাবে আবারও রাজনীতির নামে, নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণের নামে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে লুকিয়ে-গোপনে অন্যত্রে নীল নকশায় ব্যস্থ হয়ে পড়েন।
আবার ডাক্তার সাহেবও অপমান অপদস্থ হয়ে রীতিমতো নানান হিসাব-নিকাস থেকে বেরিয়ে পড়েন। থাকেন যুক্তফ্রন্ট নিয়ে এবং আহ্বানও জানান, এই যুক্তফ্রন্টে সবাইকে যোগ দিতে যার জন্য দরজা খোলা রেখেছে। আবার ডক্টর সাহেবও ঐক্যফ্রন্টের দরজা খোলা রেখেছে ডাক্তার সাহেবের প্রবেশের আশায়। কারণ এই যুক্ত-ঐক্যফ্রন্টের পঁচে যাওয়া নেতাদের মনে বড় আশা করে বাসা বেঁধেছে, এই দরজা খোলাখোলির মধ্যে ঢুকে দেশের সচেতন জনগণ ভোট প্রদানের মাধ্যমে কাউকে প্রধানমন্ত্রী আবার কাউকে রাষ্ট্রপতি বানিয়ে দিয়ে যাবে!
আমার মতো আপনারাও শুনে থাকতে পারেন, কুকুরের লেজ কখনো সোজা হবার নয়। হাজার বার চেষ্টা করার পরও সেটি লেজের চরিত্রগত অবস্থায় আবার ফিরে যায়। এই যেমন যুক্ত-ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের অভ্যাশগত অবস্থাও সেই কুকুরের লেজের মতো। এই নেতাদের একাত্তর-পঁচাত্তরের চরিত্রগত স্বভাব নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাঝেই তুলে ধরেছে।
ডাক্তার সাহেব স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে ঐক্য করতে আগ্রহী নয়। কিন্তু এই ডাক্তার সাহেবের ‘সাবাস বাংলাদেশ’র কথা আমার মতো আপনাদেরও জানার কথা। কারণ এই ডাক্তার সাহেবের পরিকল্পনায় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারগুলো বিএনপির সাথে আঁতাতা করেছে। তিনি এখন বললেও তখন কিন্তু প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেন। তবে শেষ বয়সে কোনো এক বেসরকারি টেলিভিশন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ‘দুই হাত জোর করে’ তখনকার ব্যাপারে এক প্রকার ক্ষমা চেয়েছেন।
এখন দেখার বিষয়, এটা কী হতাশার কারণে ক্ষমা চাওয়া নাকি সত্যিকারের উপলব্ধি থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। তবে আমি মনে করি, শুধু কোনো এক বেসরকারি টেলিভিশনে নয়, সংবাদ সম্মেলন করে তখনকার অবস্থান নিয়ে পুরোপুরি ব্যাখ্যা দিয়ে একাত্তরে জামায়াতের অবস্থান, পঁচাত্তরে জিয়াউর রহমানের অবস্থান নিয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রকাশ করে দেশ ও জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া। আর তিনি যদি সত্যিই উপলব্ধি থেকে ক্ষমা চেয়ে থাকেন এবং তার পুত্র-সন্তান মাহী বি চৌধুরী জন্য যদি একটি স্বাধীনতাবিরোধী মুক্ত, রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রাজনীতি প্রত্যাশা করেন; ডাক্তার একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাহেব তাই করবেন। আর অন্যদিকে ডক্টর সাহেব নাকি গরম গরম কথা বলে শরম পেয়ে ওই দিনই বিদেশ চলে যান। শরম বলতে ভয় পেয়ে বিদেশ চলে যান-এই চলে যাওয়ার হাজারো তথ্য-উপাত্ত আছে। যদিও তিনি নিজেকে সংবিধান প্রণেতা দাবি করেন। কিন্তু সংবিধান প্রণেতার কমিটিতে যিনি অন্তর্ভূক্ত করেন সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এই ডক্টর সাহেব পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বিদেশের মাটিতে নিরাপদে থাকা অবস্থায়ও বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার বর্বরতা সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববাসীকে জানানোর প্রয়োজনবোধ করেনি। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবার এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহেনা দ্বিতীয়বার অনুরোধ করার পরেও এই ডক্টর সাহেব রীতিমতো এড়িয়ে গেছেন।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে-এই ডক্টর সাহেব যখন বঙ্গবন্ধু বিরোধী ও ষড়যন্ত্রকারীদের মাঝে বসে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্টজন, বঙ্গবন্ধুর কর্মী বলে দাবি করেন; তখন সত্যিই হাসি পায়। আমার নিজের কাছেও লজ্জা লাগে। এতোটাই বঙ্গবন্ধুমুগ্ধ গুণগান করছেন তিনি, যা অবশেষে মির্জা ফখরুল সাহেব ‘লাইভ হচ্ছে’, ‘সময় পাবেন না’ বলে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তখনও ডক্টর সাহেব তার বঙ্গবন্ধুমুগ্ধ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।
ডাক্তার সাহেব কতটুকু স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকারবিরোধী এই আদর্শের সত্যিকারের অবস্থান জানতে হলে আপনাকে-আমাকে সময়ের জন্য কিছুটা অপেক্ষা করতে হতে পারে।
তবে ডক্টর সাহেব বলেন আর ডাক্তার সাহেব বলেন; এদের রাজনৈতিক চরিত্র সেই কুকুরের লেজের মতই। কারণ, আমরা এই তাদেরকে কিছু দিন আগেও দেখিনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভাবতে, কাজ করতে। বরং যিনি ভাবেন, কাজ করেন-সেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশে ও দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র করেছে। দেশের রাজনীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন আর যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থান থেকে ছুড়ে ফেলে দিতে এই নেতাদের কোনো ধরনের ভূমিকা গ্রহণ করতে দেখিনি। এমনকি, রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে উঠা জনগণের সেই গণজাগরণ আন্দোলনে নিজেদের একত্রিত করতেও না।
আর ডক্টর সাহেব তো হাকডাক দিয়েই নেমেছেন এতিমের টাকা মেরে খাওয়া একজন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী খালেদা জিয়াকে উদ্ধার করতে। তাকে এখন আর ‘গণফোরাম’ এর নেতা বলা যাবে না মনে হয়! তিনি এখন বিএনপি-জামায়াতের রক্ষা কবজ হিসেবে মাঠে নেমেছেন। কারণ যেই ডাক্তার সাহেব ডক্টর সাহেবকে টেনে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছিল, সেই ডাক্তার সাহেবকে বাসায় ডেকে অপমান-অপদস্থ করে বিএনপি-জামায়াতের হিসাব-নিকাস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর ছাত্র শিবিরের আদি সংগঠন ছাত্রসংঘের হাত ধরে রাজনীতি করা মাহমুদুর রহমান মান্না বিভিন্ন দলে কান্নাকাটি করে অবশেষে নাগরিক ঐক্য নিয়ে এগুতে চাইলেও, এই দলে কোনো নাগরিক দেখা যায় না-এই কথাটি খোদ ডক্টর সাহেবও বলে ফেলেছে। আর সেই মান্নাকে দিয়েই সকল রাজবন্ধীর নামে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়ার মুক্তি দাবি করে বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরেন।
বুঝতেই পারছেন, ডক্টর সাহেব দাবি করেন যে তিনি সংবিধান প্রণেতা। আর আইন যেখানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা দিয়েছে; সেখানে আইনি লড়াই ছাড়াই মুক্তি দাবি করেন। আর ডাক্তার সাহেব প্রকাশ্যে স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে কথা বললেও ডক্টর সাহেব কিন্তু একটি কথাও বলেননি বরং আমরা দেখছি, তিনি নিজেই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের আবারও রাজনীতির নামে, নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের নামে এই দেশ ও জনগণবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে উঠে-পরে লেগেছেন। সাথে কাকে রেখেছেন? ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, যিনি এক-এগারোর কুশীলবদের অন্যতম! আর এই মইনুল সাহেব মূলত জামায়াতের এজেন্ডা নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে-এটা জনগণের ধারণা। আর এটার প্রমাণও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যায়। আর আপনারা ইতোমধ্যেই দেখেছেন এই মইনুল হোসেনর ঔদ্বত্য। যিনি কথায় কথায় শিক্ষার ছবক দিয়ে থাকেন। বলেন, সাংবাদিকরা নাকি লেখাপড়া করে সাংবাদিকতা করছে না। আবার এক নারী সাংবাদিককে ‘চরিত্রহীন’ বলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে মূলত নিজের চরিত্র উন্মোচন করে এখন আবার ফোনকলে চুুপি চুপি ক্ষমা পাওয়ার আশায় দৌঁড়াচ্ছেন।
ঐক্যফ্রন্ট মূলত বিএনপি-জামায়াতের পুরনো বোতলের নতুন লেবেল। রাজনৈতিক চরিত্র এক ও অভিন্ন। তারা ভাবছে, জোটে ভোট পড়বে। কিন্তু সময় অনেক আধুনিক। অনেক সচেতন জনগণ। এদেশের জনগণ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার করেছে। রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গ্রাম-শহর, পাড়া-মহল্লায় হাতে-হাত ধরে ফাঁসি নিশ্চিত করেছে। এই দেশের জনগণ সকল অপপ্রচার, ষড়যন্ত্রের বাইরে গিয়ে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান করেছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে যুক্ত-ঐক্যফ্রন্ট নয়; একাত্তরের মুক্ত বাংলাদেশ চায় এদেশের জনগণ। তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জঙ্গি-সঙ্গীদের বয়কট করে উন্নয়নের বাংলাদেশ, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)