চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

রাজনীতির ট্রাম্পকার্ড ভারতবিরোধিতা কি ডেড ইস্যু?

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির এক বড় ট্রাম্পকার্ড ভারতবিরোধিতা। বিষয়টি ঘিরে রাজনীতি চলেছে অনেক বছর। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাশার দান অনেকটাই উল্টে গেছে। ভারতবিরোধী হিসেবে যারা পরিচিত তাদের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও আর আগের মতো ভারতবিরোধী অবস্থানে নেই।

তবে, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা সংকটে ভারতের সরাসরি সমর্থন না পাওয়ায় কিছু প্রশ্ন উঠেছে। আবার ভারত এটাও বলতে চায়, তার কাছে প্রতিবেশীরা আগে হলেও সবার আগে বাংলাদেশ।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশে কথিত ভারতিবেরোধিতাকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করার পুরনো দিন থেকে এক ধরনের গুণগত উত্তরণ ঘটেছে, যেখানে বিরোধিতার নামে বিরোধিতা না করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থরক্ষার তাগিদ আছে। তাদের কেউ কেউ এটাও মনে করছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতবিরোধিতার বিষয়টি একটি ডেড ইস্যু হতে যাচ্ছে।

আসলেই কি তাই?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আশেকা ইরশাদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও সেই মেসেজটাই পেয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে , ওই ধরনের ভারতের বিরোধিতা করে এখন আর সেভাবে লাভবান হওয়া যাবে না।

আশেকা ইরশাদ
আশেকা ইরশাদ

‘বিশ্বে গ্লোবালাইজেশন যেমন হচ্ছে, তেমনি রিজিওনালাইজেশনও হচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক এ সম্পর্ক বিশ্লেষক মনে করেন: ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না রাখলে প্রতিবেশি দেশগুলো যে সমস্যায় পড়তে পারে সেই উপলব্ধিও দেশের অনেকেরই হয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে বুঝতে হবে ভারতের পজিশনটা কী এবং আমাদের পজিশনটা কী। সেই অবস্থান থেকেই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে পলিসি তৈরি করতে হবে।

‘কোন কারণ ছাড়া ভারতবিরোধিতাকে একটি বার্নিং ইস্যু করে তোলা যাবে, এমনটা আর হবে বলে মনে হচ্ছে না।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়্যারম্যান ড. অরুণ কুমার গোস্বামী বলেন, শুধু বাংলাদেশের না, সব দেশের পররাষ্ট্রনীতিই নির্ধারিত হয় সেই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে। বাংলাদেশে ভারতের একটি বড় স্বার্থ আছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে

ড. অরুণ কুমার গোস্বামী

বাংলাদেশ যখন চীনের সঙ্গে আলোচনা করছে তখন বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে আলোচনা করলেই পারে, ভারতের সঙ্গে কথা বলে কেন?  আওয়ামী লীগ যেমন চীনের সঙ্গে একটু আলোচনার কথা বলছে, তেমন ভারতও চিন্তা করছে তাহলে আমরা বিএনপির সঙ্গে একটু কথা বলি।

পররাষ্ট্রনীতির এই জায়গাটা কোন দিকে টার্ন নেবে সেটা বুঝতে অনেকটা সময় লাগবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, এখন এটা কোনদিকে টার্ন নেবে সেটা বুঝতে আরো অনেকটা সময় লাগবে। সেটা বুঝতে হলে অন্তত আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ নির্বাচনের আগে আগেই মূলত বিষয়গুলো বেশি বেশি আলোচনায় আসে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করেন, বাংলাদেশ ও ভারত একটি ছোট ও বড় রাষ্ট্র। ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে আমাদের সম্পর্কে প্রবল বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশকে সমর্থন দিলে বাংলাদেশের

হুমায়ুন কবির

ভারতবিরোধিতার কারণ দেখি না। আর সমর্থন না করলে, আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের কথা বলতেই পারি।

‘যেহেতু দুটি দেশই পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতা অনেক বেশি, তাই দু’ দেশের সম্পর্কের জায়গাটা জেনারালাইজ না করে অবস্থার প্রেক্ষাপটে সেটা নির্ধারণ করা দরকার হবে,’ বলে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে মন্তব্য করেন তিনি।

কূটনৈতিক প্রতিবেদক হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া একটু ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেন অবস্থানটা: ভারতের সমর্থন আমরা পাওয়ার চেষ্টা করছি। তারা বলছে, তারা আমাদের সাপোর্ট করছে, কিন্তু কার্যত কী করছে? রোহিঙ্গা সমস্যা শুরু হয়েছে আরো অন্তত এক বছর আগে। এর মধ্যে দৃশ্যমান কিছুই করেনি ভারত। তারা কোন দূত পাঠায়নি, ভারতে মিয়ানমারের অ্যাম্বাসাডরের সঙ্গে কথা বলতেও দেখিনি আমরা।

‘বাংলাদেশ খেলায় জিতলে মোদি প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন, এই বিষয়ে এখানো কোন ফোন করেছেন? ভারতের রোহিঙ্গা বিষয়ে অবস্থান বুঝতে বেশিদূর যেতে হয় না। চলমান রোহিঙ্গা সমস্যার মধ্যেই তারা তাদের দেশে থাকা ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ডিপোর্ট করার চেষ্টা নেয়।  এটা বাংলাদেশের জন্য একটা পলিটিক্যাল মাইলেজ।’

হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া

আগের ঘটনার বর্ণনা করে চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, মোদি যখন সেপ্টেম্বরের ৫-৭ তারিখে মিয়ানমার সফরে যান, তখনও তিনি রাখাইন অভিযানকে সমর্থন করেন। সেসময় রোহিঙ্গাদের দুর্দশাও স্বীকার করলেন না। সেটা একটা নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করেছে। এবং সেটা বাংলাদেশকে খুব বেকায়দায় ফেলেছে।

‘ভারত সবসময় বলে বাংলাদেশ আগে, সুষমা স্বরাজও বললেন, বাংলাদেশ প্রথমে। তাই বাংলাদেশ চেষ্টা করছে ভারত যেন সমর্থনটা দেয়। সেটা না হলেও তারা যেন মিয়ানমারের পক্ষে না যায়।’