চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রাজনীতিতে সুদিনে বন্ধুর পরিচয়ই কি রীতি হয়ে গেল?

এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তার পতন হলে ১৯৯১ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সে সময়ে বিএনপি দলীয় নেতাদের ক্ষমতার ঔদ্ধত্য ও দলবাজিতে ক্ষিপ্ত হয়ে জনগণ তাদের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ৫ বছর পর জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের অপকর্মের জবাব দেয়। ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তখন এ দলটিতেও ভর করে ক্ষমতাবাজির নেশা ও দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নের অপরীতি। এ সময়ে জনগণ আওয়ামী লীগের প্রতিও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

২০০১ সালে তারা আবার ভোট দেয় বিএনপিকে। যে দল ক্ষমতায় যায় সে দলের নেতাদের দখলেই চলে যায় বিল, হাওড়, বাস টার্মিনাল, হাটবাজার, শৌচাগার, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনসহ সবকিছুই। এভাবেই জনগণ একের অপকর্মে ক্ষিপ্ত হয়ে আরেককে সমর্থন দিয়ে চলেছে। বিএনপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের শাসনামলের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করে কিন্তু নিজেদের দুর্নীতি নিয়ে থাকে নির্বিকার। বিএনপি শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতার এক কিশোরী মেয়েকে ছাত্রদলের ক্যাডাররা ধরে নিয়ে গণধর্ষণ করেছিল। ধর্ষিতা মেয়েটির ধর্ষণচিত্র ক্যামেরাবন্দি করে প্রচারও করেছিল। অবশেষে মেয়েটি আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে লোকলজ্জা ও জীবনযন্ত্রণা হতে রেহাই পায় সেদিন। আজকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে প্রকাশ্য রাজপথে নির্মমভাবে প্রহার করেছিল বিএনপি শাসনামলে।

বিএনপি শাসনামলে পালিয়ে ছিল নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাংসদ শামীম ওসমান। পালিয়ে ছিল ‘দেশটা মামার বরিশালটা আমার’ তত্ত্বের প্রবক্তা সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। পালিয়ে ছিল ফেনীর জয়নাল হাজারী ও লক্ষ্মীপুরের আবু তাহের। আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সাংসদ ডা: ইকবাল ঢাকার মালিবাগে দিনদুপুরে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুঁড়ে চারজন মানুষকে হত্যা করেছিল। প্রতিটা রাজনৈতিক দলেই ক্ষমতার শেষদিকে নমনীয় হওয়ার পরিবর্তে বেপরোয়া হয়ে ওঠার ঘটনা ঘটে চলেছে। ২০০১ সালে ফেনীর সাংসদ জয়নাল হাজারী সাংবাদিক টিপু সুলতানকে নির্মমভাবে পিটিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছিল। সেসময়ে সাংবাদিক আমিনুর রহমান তাজকে বিনা গ্রেফতারি পরোয়ানায় গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটে।

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসা বিএনপি তাদের শাসনামলে খুবই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। সংসদে দাঁড়িয়ে লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছিল। এর পরপরই হুমায়ুন আজাদকে বই মেলায় কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। রাজশাহীতে আবির্ভূত হয় বাংলা ভাইয়ের জঙ্গি কার্যক্রম। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জাতীয় ব্যক্তিদের দেয়া হয় হত্যার হুমকি। ক্ষমতার গন্ধ কেন জানি সকলকেই ক্ষমতার অপব্যবহারের দিকে নিয়ে যায়। বিএনপির ক্ষমতাবাজীর পরিণতিতেই ওয়ান ইলেভেনের সৃষ্টি। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীনকে বিএনপির সবকিছুতে ‘ইয়েসউদ্দীন’ বানিয়ে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করে তারা।

ক্ষমতার অপব্যবহার ও কূটকৌশলের পরিণতি কী হলো? হাওয়াভবন বিভক্ত হলো। এ ভবনের অন্যতম কুশীলব লুৎফুজ্জামান বাবর গ্রেপ্তার হলো। যে দলের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করলো সে দল হতেও বহিস্কৃত হলো। বাবর আওয়ামী লীগ শাসনামলে জেল খাটছে ওয়ান ইলেভেনে দায়ের করা মামলায়। তারেক রহমান নির্বাসিত হলো। দেশে জারি হলো গ্রেফতারি পরোয়ানা। কী ঘটলো ক্ষমতার অপব্যবহার ও ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণের চেষ্টার পরিণতি?

৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অন্যরকম নির্বাচন। অধিক প্রার্থীর দেশে এতে দেখা গেছে প্রার্থী শূন্যতা। বিনাভোটে ও বিনা খরচে জয়লাভ করেছে ১৫৪ জন সাংসদ। সহজে কোন কিছু পেয়ে গেলে ও প্রত্যাশার বাইরে অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে গেলে অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলে। বিনাভোটে জয়লাভকারীরা কেউ কেউ খেই হারিয়ে ফেলছে নাতো? তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় তাই জনগণের প্রতি তাদের দায় কী? এমন চিন্তাও কেউ করছে না তো?

ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে ও নিজের গ্রুপকে শক্তিশালী করতে অনেকেই বিএনপি-জামায়াত হতেও নেতা আমদানি করছেন। আজকে যাদের তারা সুহৃদ বলে বুকে টেনে নিলো সেই সুহৃদদের কী ভূমিকা ছিল বিএনপি শাসনামলে? দুর্দিনে বন্ধুর পরিচয় কথাটাকে উল্টে দিয়ে কেন তারা করে নিচ্ছে সুদিনে বন্ধুর পরিচয়? দুর্দিনে পাশে না থেকেও যদি সুদিনের সঙ্গী হওয়া যায় তাহলে কার দায় পড়বে দুর্দিনের সাথী হতে? আওয়ামী লীগ দলটির প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি। এ দলটির ছোট নেতারা যদি অনায়াসে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নতুন দলের নেতা হয়ে যেতে পারে ও সেদিনের সুফল ও আজকের দিনের সুফল উভয়ই পেতে পারে বড় নেতারা কেন নয়?

যদি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগে যোগ দেয় তখন কেমন হবে বিষয়টা? অনেক ছোট নেতা দল বদল করে মামলা ও হয়রানি হতে মুক্তি পেতে চলেছে। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগে যোগ দিলে তিনিও কি মামলা ও হয়রানি হতে মুক্তি পেয়ে যেতে পারেন? এরশাদ সরকারের সাথে না থাকলে কী হতো তার? নীতিহীন রাজনীতির পক্ষে সবই সম্ভব নয় কি? ক্ষমতার অপব্যবহারের কী পরিণতি হতে পারে এই জিজ্ঞাসাটুকু অপব্যবহারকারীদের মগজে থাকেনা। সেই সাথে চলছে অপব্যবহারকারী ও কুক্ষিগতকারীদের ভোগান্তির রীতি। সবার শুভবুদ্ধি জাগবে কি ভোগান্তিতে ভোগার আগে? নাকি এসবই নিয়তি হয়ে উঠছে?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।