চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রাঙামাটির পাহাড় ধসে স্বজনহারাদের শোকের মাঝে নতুন শঙ্কা

রাঙামাটি থেকে ফিরে: ভয়াবহ ধসের পর রাঙামাটির পাহাড়গুলো এখন ক্ষত-বিক্ষত।এযাবৎকালের সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত,বজ্রপাথে থরথর করে কেঁপেছে পাহাড়,ধসেছে স্বল্প আয়ের মানুষের ঘর-বাড়ির ওপরে।তাই রাঙামাটির আকাশে ঘন মেঘ জমতে দেখলে আঁতকে ওঠেন রেশমা, রুবেল, নাসিমার মতো স্বজন, সহায়-সম্বলহারা মানুষেরা।দুই সন্তানের জনক সুমন জানেন না যেখানে পুনর্বাসন করা হবে সেখান থেকে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করতে পারবেন কিনা।বাবা-মাকে হারিয়ে মীম-সুমাইয়াদের শেষ ভরসা এখন চাচার আশ্রয়।

কারণ এই কয়দিন টেলিভিশন কেন্দ্র, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (বিএডিসি), বেতার কেন্দ্র, রাঙামাটি সরকারি কলেজ,শিশু একাডেমিতে মাথাগোঁজার ঠাঁই পেলেও স্থায়ীভাবে কোথায় থাকবে তারা এটাই এখন বড় প্রশ্ন।পাহাড়ের কোলে যেখানে তাদের ঘর-বাড়ি ছিল সেখানে এখন টিনের চালটিই শুধু দেখা যাচ্ছে। বাকিসব মাটির নিচে। আবার ভূমি ধসের আতঙ্ক তো আছেই।

এমন শঙ্কার মধ্যেই শোকে পাথর রেশমা আছেন বিএডিসি-তে। স্বামীকে হারিয়ে ৩ বছরের ছেলে এবং গর্ভের ৪ মাসের অনাগত সন্তানকে নিয়ে রেশমা কোথায় যাবেন জানেন না।

রেশমার স্বামীর বড় বোন নাসিমা পশ্চিম মুসলিম পাড়ায় ভাইয়ের ঘরের পাশেই ঘর তুলতে চেয়েছিলেন।ঘর বানানোর টাকা যোগাড় করতে গিয়ে টানাটানির জন্য এবার ঈদে ছেলেকে নতুন জামা দিতে পারেননি তিনি। দিতে পারবেন না আর কোনো দিন।

কান্না চেপে রেখে নাসিমা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন,‘ভাইয়ের ঘরের পাশে ঘর তুলতাম। তাই এবার ছেলেকে বলছিলাম নতুন জামা দিতে পারবো না।১০ বছর বয়স, সে বোঝে। তাই বলেছিলো,“জামা লাগবো না, কিন্তু ১০০ টাকা সালামি দিবা”।’

সংসার চালানো আর ঘর তৈরির টাকা যোগাড়ের জন্য ভাইয়ের বাড়িতে ছেলেকে রেখে বের হয়েছিলেন নাসিমা।তখনই পাহাড় ধসের খবর পান মোবাইল ফোন।এসে দেখেন সব মাটির নিচে। ভাইয়ের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গেলেও তার ছেলেটির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।ঘর করার জায়গাটিই তাই ছেলের কবর হয়ে গেছে নাসিমার কাছে।

বর্ডার গার্ডের সদস্য রুবেল ও তার ছোট ভাইটি কেবল বেঁচে আছে। মা-বাবাসহ পরিবারের ৭ জনকে হারিয়ে রুবেল চিৎকার করে কান্না করার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন।স্ত্রী-সন্তানদের রেখে এসেছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। কবে তাদের নিয়ে কোথায় আবার নিজের বাড়ি হবে আপাতত তা বলতে পারেননি তিনি।


খুব শিগগিরই না হলেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের সরকার নিরাপদ জায়গায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে। এজন্য রাঙামাটির অপেক্ষাকৃত সমতল জায়গায় বসতি নির্মাণের সম্ভাবনার কথা জানান ভেদভেদীর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন,‘আপাতত জুলাইয়ের ১৫ তারিখ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি সকল বরাদ্দ অব্যাহত থাকবে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে অনেকে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও দুস্থ মানুষের জন্য আসা ত্রাণ সামগ্রীর লোভে আশ্রয়কেন্দ্রে আছে।তাই আপাতত প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের সনাক্ত করতে আমরা যাচাই-বাছাই করছি। অনেকেই শহর কেন্দ্রীক পেশার কারণে দূরেও যেতে চায় না। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে আমরা কাউখালীর মতো সমতল এলাকায় তাদের বসতি স্থাপনের কথা ভাবছি। তবে অবশ্যই তাদেরকে আর পাহাড়ের বিপজ্জনক এলাকায় ঘর-বাড়ি করতে দেয়া হবে না।’