দেশে বড় বড় রাঘব বোয়াল আছেন যারা ব্যাংক লুট করে ফেলল, অথচ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে গত ২০ বছরে কোটি টাকার উপরে ঋণ খেলাপি, ঋণের সুদ মওকুফ, অর্থপাচার ও অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে প্রতিবেদন না পেয়ে উষ্মা প্রকাশ করে আজ এ মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
এসময় আদালত বলেন, ‘আমরা দেখছি ব্যবস্থা না নিয়ে আরো বেশি করে ঋণ দেওয়ার সুযোগ করে হচ্ছে। এটা কেন?’ ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারির বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে করা এক সম্পূরক আবেদনের শুনানিতে মঙ্গলবার এমন মন্তব্য আসে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে।
আজ আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আজ শুনানির এক পর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলো তা কার্যকর করছে না।’
ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধে কমিশন গঠন ও গত ২০ বছরে কোটি টাকার উপরে ঋণ খেলাপি, ঋণের সুদ মওকুফ, অর্থপাচার ও অর্থপাচারকারীদের তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের জন্য গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ সচিব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্ণরসহ ছয় বিবাদীকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।
কিন্তু বিবাদীরা ওই তালিকা দাখিল ও কমিশন গঠন না করে খেলাপি মুক্ত থাকার সময় তিন মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এসময় এক আইনজীবী বলেন, এ ধরনের সময়সীমা বাড়ানোর কারণে ঋণ খেলাপিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামানকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলে, ‘সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) রিপোর্টে যখন নাম আসছে না, তখন ঋণ খেলাপিদের অন্য ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
ঋণ খেলাপিদের তালিকা চেয়েছি সেটা যাতে দাখিল করতে না হয় সেজন্য কি এই সময়সীমা বাড়ানো? বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর কাছে প্রশ্ন রাখেন আদালত। এক পর্যায়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ঋণ খেলাপিদের তালিকা যাতে ছোট থাকে সেজন্যই হয়ত এই পদক্ষেপ।
তখন ব্যাংকের আইনজীবী বলেন, এটা সত্য নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল ব্যাংকের কাছে ঋণ খেলাপিদের তালিকা চেয়েছে। আদালত তখন জানতে চায় ৩০ দিনের মধ্যে আমরা কমিশন গঠন করতে বলেছিলাম। সেটার কি অবস্থা?
আইনজীবী বলেন, এটা এখনো আদেশ পাইনি। আদালত বলেন, এভাবে উচ্চ আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করবেন? আমরা যদি কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখি সেটা কি শোভনীয় হবে? আপনি তো আদালতের আদেশ ঠিকভাবে পড়েননি। তাহলে কিভাবে ক্লায়েন্ট ডিফেন্ড করবেন।
এরপরই কমিশন গঠনের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ব্যাংকের আইনজীবীকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।