মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সেফ জোন’ বা নিরাপদ এলাকা তৈরি করার প্রস্তাব রেখেছে বাংলাদেশ। সেফ জোনগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন পরিচালনা করবে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের দেয়া তথ্য অনুসারে, আগস্টে সহিংসতা শুরু হওয়ার সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। ৪ লাখের মতো রোহিঙ্গা এর আগে থেকেই বাংলাদেশে বসবাস করছে। ফলে ছোট এই দেশের ওপর অতিরিক্ত এই জনগোষ্ঠীর চাপ খুব বেশি হয়ে পড়েছে।
তাই প্রতিনিয়ত নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঢল থামাতে এবং নিজ দেশেই একটু নিরাপদ ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের কাছে এই প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মূল আবাসস্থল রাখাইন রাজ্যের তিনটি অঞ্চল সুরক্ষিত করে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ ও সহিংসতায় বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের সেখানে পুনর্বাসন করা হবে। এলাকাগুলো জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের নজরদারিতে থাকবে।
পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেছেন, সেফ জোন তৈরির এই প্রস্তাবের পেছনে যুক্তি হলো, কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশের ভেতর ঢুকতে পারবে না।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই অনুরোধ মিয়ানমারের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে রেডক্রস। তবে সংস্থাটি এ-ও বলেছে, এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা দুই দেশকে মিলে নিতে হবে।
মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এখনো এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য জানানো হয়নি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রস্তাবে মিয়ানমারের ইতিবাচক সাড়া দেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কেননা দেশটির সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক বলেই স্বীকার করে না। তারা বরাবরই দাবি করে আসছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী। তাই তাদেরকে মিয়ানমারে রাখতে আগ্রহী নয় সরকার।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৪শ’র বেশি মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখো মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।