১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও চট্টগ্রামের রাউজান স্বাধীন হলো আজ। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী রাউজানে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করেছিলেন, সেটার অবসান ঘটলো এতোদিনে। চ্যানেল আই অনলাইনকে এমনটাই বললেন নতুন প্রজন্মের কাছে সাকা চৌধুরীর একাত্তরের ঘৃণ্য অপরাধ তুলে ধরা সাংবাদিকদের একজন অম্লান দেওয়ান।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকার খবরে অম্লান দেওয়ান বলেন: চট্টগ্রামের রাউজানে আমার বাড়ি। সেখানেই সাকা চৌধুরীর পৈতৃক ভিটা। দুটো গল্প বলি, তাহলেই বুঝবেন সাকা চৌধুরী ও তার বংশের লোকেরা রাউজানে কি ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করেছেন।
তিনি জানান: ইলেকশনের আগে আগে সাকা চৌধুরী ভোটারদের বাড়িতে যেতেন। গিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করতেন, তোমরা তো আমাকেই ভোট দিবা, তাই না? অনেকে ভয়ে বা অন্য কোনো কারণে হয়তো বলতো ‘হ্যাঁ দিবো।’ জবাবে সাকা বলতেন, তা হলে ভোটকেন্দ্রে আর তোমাদের যাওয়ার দরকার নেই। তোমরা বলেছো, আমরা ভোট নিয়ে নিবো।
আর একটি ঘটনার কথাও শোনালেন ফরাসী দূতাবাসের সাবেক এই কর্মকর্তা। বললেন, ইলেকশনের আগে বস্তায় করে ১০ টাকা ৫ টাকার নোট নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। রাস্তায় যখন জিজ্ঞেস করা হলো বস্তায় কি? সাকা জবাব দিলেন, কাঁঠালপাতা। ইলেকশন এলেই ছাগলরা কাঁঠালপাতা খাইতে চাই, তাই নিয়ে যাচ্ছি।
‘একটা সময় এই ছিলো রাউজানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার আগে এলাকায় প্রায় ১০০ জন খুন হয়েছেন। পরে তো আর একটাও হয়নি। সাকা চৌধুরীর একটা নিজস্ব ‘কিলার গ্রুপ’ই ছিলো। তারা যাকে টার্গেট করতো তাদের নাম লিস্ট করা থাকতো। যাকে নিকট ভবিষ্যতে মারা হবে, তার নামের নিচে লাল দাগ দিতো তারা। পরে গিটারের ব্যাগে করে অস্ত্র নিয়ে গিয়ে সরাসরি মেরে রেখে আসতো,’ বলে জানান ৯০ দশকের শুরুতে সাপ্তাহিক বিচিন্তা এবং প্রিয় প্রজন্মে সাকার ভয়ংকর রূপ তুলে ধরা অম্লান দেওয়ান।
তিনি বলেন: এসব বিবেচনা করলে বলা যায়, সেই অত্যাচারী যুগের অবসান হলো আজ। সৃষ্টি হলো নতুন ইতিহাস, দেশের জন্যও আজ নতুন একটা যুগের শুরু হলো। এই লোকটির ফাঁসি হবে কিনা সেই বিষয়ে অনেকের মনেই সংশয় ছিলো, সেটাও আজ একেবারে দূর হয়ে গেলো.’ বলেই মনে করছেন অম্লান দেওয়ান।
যে সময়ে সাকা চৌধুরী এক আতঙ্কের নাম, সেই সময়ে তাকে নিয়ে সাপ্তাহিক বিচিন্তা ও প্রিয় প্রজন্মে ক্রমাগত লিখেছেন অম্লান দেওয়ান। সেসময় তাকেও কম বিপদে পড়তে হয়নি। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি শোনালেন তেমনই আর একটি ঘটনা।
‘একবার সাকা চৌধুরী আমাকে ডাকলেন। গেলাম ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য। টেপ রেকর্ডার নিয়ে গেলাম। টেবিলে রাখতেই তিনি প্রশ্ন করলেন, এটা কি? বলতেই, নানান এলোমেলো কথা-বার্তা বলে বললেন, যাও পারলে লিখ। পরে লেখা ছাপা হলো আনন্দবাজার পত্রিকায়। এরপর আমার উপর শুরু হলো ক্রমাগত হুমকি, নানান সময়ে লোক পাঠানো, এমনকি আত্নীয়-স্বজনের ক্ষতি করার প্রচেষ্টা।’
এসবের মধ্যে দিয়েই চলমান ছিলো পরে চট্টগ্রামে ‘কোয়েপাড়া মডেল গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা অম্লান দেওয়ানের সাংবাদিকতা। সাকা চৌধুরীর ভয়াবহ সব কর্মকাণ্ডের শাস্তি মিলেছে আজ। তবে এই দিনে অম্লান দেওয়ানের চাওয়া, সরকার সাকা চৌধুরীর বাড়ি ‘গুড হিলস’কে অধিগ্রহণ করে গণহত্যার স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ করুক।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘গুড হিলস’ ছিলো একটা টর্চার সেল। একাত্তরেতো বটেই, তারপরও সেখানে এতো মানুষের উপর অত্যাচার এবং এতো হত্যা হয়েছে যা ধারণা করা যায় না।