প্রতিদিন যে মানুষটির সঙ্গে চলাফেরা, বন্ধুত্ব কিংবা প্রেম, সেই মানুষটি যদি হুট করে হারিয়ে যায়? নাহ, এই হারিয়ে যাওয়া মৃত্যু নয়। একদম পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়া। অনেকটা জাদু করে অদৃশ্য করে দেয়ার মতো। পৃথিবীতে কিছু মানুষ ঠিক এভাবেই হারিয়ে গিয়েছে। তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি আজ অবধি। এমনকি কীভাবে হারিয়ে গিয়েছে সেই সম্পর্কেও ধারণা করা যায়নি।
জেনে নিন তেমনই অদ্ভুত কিছু অমীমাংসিত হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কে।
জেমস টেটফোর্ড: ১৯৪৯ সালের ১ ডিসেম্বর তারিখে জেমস টেটফোর্ড নামের একজন ব্যক্তি বেনিংটনের উদ্দেশ্যে সেইন্ট এলবান থেকে বাসে করে যাত্রা শুরু করেন। বাস ভরা যাত্রী ছিলেন। বাসটি পথে কোথাও থামেনি। কিন্তু বাস গন্তব্যস্থলে পৌঁছার পর দেখা গেল, জেমস বাসে নেই। অথচ কিছুক্ষণ আগেও যাত্রীরা তাকে সিটে ঘুমাতে দেখেছেন। টেটফোর্ড অদৃশ্য হয়ে গেলেও তার লাগেজ, ওয়ালেট সব কিছু সিটেই পড়ে ছিল। এই রহস্যের কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
ভার্জিনিয়া ডেয়ার: ১৫৮৭ সালের ১৮ আগস্ট রোয়ানোক কলোনিতে জন্মেছিলেন ভার্জিনিয়া ডেয়ার। আমেরিকায় জন্মানো প্রথম ব্রিটিশ ছিলেন তিনি। তার দাদা জন হোয়াইট এই কলোনি গড়ে ওঠার পেছনের একজন ছিলেন। কিছু কাজে কলোনির বাইরে গিয়েছিলেন জন হোয়াইট। তিন বছর পর ১৫৯০ সালে ফিরে এসে তিনি তার নাতনিকে পাননি। শুধু নাতনিই নয়, পুরো কলোনির কাউকেই পাননি তিনি। দ্বীপের অধিবাসী ৯০ জন পুরুষ, ১৭ জন নারী এবং ১১ জন শিশুর কারোরই কোনো অস্তিত্ব ছিল না। যেন সবাই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছেন। আজও এই রহস্যের কোনো উত্তর মিলেনি।
ওয়েন পারফিট: ওয়েন পারফিট হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। শেপটন ম্যালেটের শহরে বোনের বাড়িতে থাকতেন .৬০ বছর বয়সী প্যারালাইজড পারফিট। ১৯৭৩ এর গ্রীষ্মে একদিন হটাত তিনি হারিয়ে যান। ভাইকে মাত্রই হুইল চেয়ারে দেখে পাশের রুমে গিয়েছিলেন বোন। কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে হুইল চেয়ারটি ফাকা দেখতে পান। ওয়েন পারফিট হাঁটতে পারেন না। তাই কোথাও যাওয়ার সুযোগও নেই। তবুও আশে পাশে খুঁজতে শুরু করেন। বাড়ির সামনের রাস্তার কেউ কিংবা যে ফার্মের মধ্যে দিয়ে বের হওয়ার রাস্তা সেখানের কেউ তাকে দেখেনি। আজ পর্যন্ত ওয়েন পারফিটের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
অ্যামব্রোস বিয়ার্স: এইবিও এর ট্রু ডিটেকটিভ এর প্রথম সিজন এর পেছনে অনুপ্রেরণা যোগানোদের একজন ছিলেন আমেরিকান লেখক অ্যামব্রোস বিয়ার্স। কিন্তু তিনি নিজেও একটা সময়ে বাস্তব জীবনের একটি অমীমাংসিত রহস্যে পরিণত হয়ে গিয়েছেন। ১৯১৩ সালে বিয়ার্স একদিন তার পরিবারকে জানান যে তিনি পঞ্চ ভিলা রিভল্যুশনে যোগ দিতে মেক্সিকো যাচ্ছেন। মেক্সিকো পৌঁছে কিছুদিন চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। তার কিছু দিন পর থেকে তিনি একদম হারিয়ে যান। অনেকে ধারনা করেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন তাকে খুন করা হয়েছে। তবে কোনো যুক্তিই বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ার এখনও বিষয়টি রহস্যই থেকে গেছে।
ব্রিয়ান শাফার: ২৭ বছর বয়সী মেডিকেল স্টুডেন্ট ব্রিয়ান শাফার হারিয়ে গিয়েছিলেন ২০০৬ সালের ১ এপ্রিল। সেদিন রাতে বন্ধুদের নিয়ে কলম্বাস বার-এ ঢুকেছিলেন তিনি। কিন্তু এরপর থেকে আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সিকিউরিটি ক্যামেরায় তার বার-এ প্রবেশের ভিডিও থাকলেও, বের হওয়ার কোনো ভিডিও ছিল না। ফলে এই ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়নি আজও।