একাত্তরের জননী খ্যাত লেখিকা রমা চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি আছেন। ডাক্তার শমিরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে তার। তবে অর্থাভাবে দীর্ঘসময় ধরে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে রমা চৌধুরীর বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দিন খোকন এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আলাউদ্দিন খোকন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: রমা চৌধুরীর অবস্থা খুবই খারাপ। গত ২৪ ডিসেম্বর নিজের পোষা বিড়ালকে ধরতে গিয়ে পড়ে যান রমা চৌধুরী। এই ঘটনায় তার কোমরের হাড় ভেঙ্গে গেছে। এখন তিনি সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী। এছাড়া গত ছয়মাস যাবত পিত্তথলির পাথর, ব্রংকাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
‘শারীরিক দুর্বলতা ও অন্যান্য সমস্যা থাকায় পিত্তথলির পাথর অপসারণ সম্ভব হচ্ছে না। তার দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দরকার। তবে আমরা কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। রমা চৌধুরীর চিকিৎসায় এগিয়ে আসার আর্জি জানাতাম প্রধানমন্ত্রীর নিকট। আমরা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কামনা করছি’, বলেন আলাউদ্দিন খোকন।
তিনি বলেন: নিজের লেখা বই নিজেই ফেরি করে বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালাতেন রমা চৌধুরী। এখন অর্থাভাবে দীর্ঘসময় ধরে তার চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে না। এর আগেও সংবাদ ছাপা হয়েছে। অনেকে ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবু কোথাও থেকে সাড়া পাইনি। প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি, এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি।
রমা চৌধুরী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত একজন বীরাঙ্গনা। ১৯৪১ সালে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার পোপাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
১৯৭১ সালের ১৩ মে ভোরে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিজ বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হন। সম্ভ্রম হারানোর পর পাকিস্তানি দোসরদের হাত থেকে পালিয়ে পুকুরে নেমে আত্মরক্ষা করেছিলেন এই নারী।
হানাদাররা গানপাউডার লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় তার ঘরবাড়িসহ যাবতীয় সহায়-সম্পদ। পরবর্তীতে তিনি তার উপর নির্যাতনের ঘটনা একাত্তরের জননী নামক গ্রন্থে প্রকাশ করেন। স্বাধীনতার পরে লেখালেখিকেই নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দা রমা চৌধুরী ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে বেছে নিয়েছিলেন।
‘৭১ এর জননী’, ‘এক হাজার এক দিন যাপনের পদ্য’, ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’সহ ১৮টি বই লিখেছেন রমা চৌধুরী।