নিউজিল্যান্ডের মসজিদে এবং শ্রীলঙ্কার গীর্জায় হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঝুঁকি ছিল জানিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, গেল রমজানে সেটা কিছুটা বৃদ্ধি পায় কিন্তু সেই বৃদ্ধি পাওয়া জঙ্গিবাদের ঝুঁকি আমরা রুখে দিতে পেরেছি।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর লালমাটিয়া মহিলা কলেজে ‘সহিংস উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১৯’ বিজয়ী দলগুলোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
মনিরুল ইসলাম বলেন: নানা কারণে বাংলাদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের ঘটনায় কিছুটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে এক ধরণের ক্রান্তিকাল চলছে যা কিছুদিন থাকবে। এ ঝুঁকি বৃদ্ধি পেলেও আমরা তৎপর আছি। তবে জঙ্গি হামলার ঝুঁকির মাত্রা কম।
নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলংকায় হামলার পর বাংলাদেশে হামলার ঝুঁকি ছিল জানিয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন: রমজানে সেই ঝুঁকি আরও বেশি ছিল। তবে আমরা রুখে দিয়েছি।
দেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন: ঝুঁকি আছে, তবে ঝুঁকির মাত্রা অনেক কম।
মনিরুল ইসলাম বলেন: একদিনের নয়, দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা হয়েছে। সিরিয়া ও ইরাকে আইএস উত্থানের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও সেই ঢেউ এসেছিল। এরপর আমরা দেশবাসীকে নিয়ে জঙ্গিদের যে সংগঠন ছিল সেগুলো ধ্বংস করেছি। তবে মতাদর্শ ধ্বংস করা যায়নি। সেটা রয়েছে। মতাদর্শকে মতাদর্শ দিয়েই ধ্বংস করতে হয়। সেজন্য সমাজের কয়েকটি দিক দিয়ে চেষ্টা করতে হবে।
তিনি বলেন: মতাদর্শ ধ্বংস করতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে বিতর্ক। কারণ একজন যুক্তিবাদী মানুষ কখনও উগ্রবাদী হতে পারে না। সেজন্য তরুণদের যুক্তিবাদী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়াও সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ও ইমাম সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
মনিরুল ইসলাম বলেন: উগ্রবাদ শুধুমাত্র ধর্মের কারণে হয় না। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে সহিংস উগ্রবাদ রুখে দেয়ার জন্য মননশীল মানুষ তৈরি করতে হবে। স্কুল কলেজে পর্যাপ্ত খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। যুক্তি মনস্ক মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীরা যাতে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য বিতর্ক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আরো বেশি বেশি করে করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার নিরপেক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অন্য ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। মনে রাখতে হবে ইসলাম কখনো হত্যা বা সহিংসতাকে সমর্থন করে না। আমাদেরকে প্রিয় নবীর মত সহনশীল ও পরমত সহিষ্ণু হতে হবে। ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
লালমাটিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় আটশত শিক্ষক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজিত এই সহিংস উগ্রবাদবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, রানারআপ ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে যথাক্রমে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা ও সরকারি বাঙলা কলেজ।