মিশকাত শরীফের হাদিস আমাদেরকে নিশ্চিত করে, রমজানের তিন দশক তিন ভাগে বিভক্ত: রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত। তুলনামূলকভাবে রহমত ও মাগফেরাতের চেয়ে নাজাতের গুরুত্ব বেশি। বাকি দুই দশকের সাথে নাজাতের পার্থক্য কী? নাজাতের বিশেষত্ব কী? নাজাতের বিশেষত্ব নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা। তিনটি পয়েন্টে আমাদের এ আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকবে।
শবে কদরের নেয়ামত প্রাপ্তির সুযোগ
রমজানের শেষ দশক তথা নাজাতের দশ দিন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ববহ হবার প্রধান কারণ শবে কদর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিচ্ছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল-কদর তালাশ করো”। (বুখারী শরীফ: ২০২০) আরও স্পষ্ট করেছেন অন্য বর্ণনায়, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বে-জোড় রাতসমূহে লাইলাতুল-কদর তালাশ করো”। (বুখারী শরীফ: ২০১৭)বুখারী শরীফের বর্ণনার মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের জবান থেকে খোশ-খবর শোনা যায়, “যে ব্যক্তি লাইলাতুল-কদরের রাতে ইমান ও সোয়াবের আশা নিয়ে ইবাদত-বন্দেগী করবে তাঁর অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে”।
হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, শবে কদরের রাত নির্দিষ্ট নয়; তবে আমরা কীভাবে তালাশ করবো? কবে কদর তালাশ করতে আমাদের শেষ দশকে অধিকতর একনিষ্ঠতার সহিত বিরতিহীনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করা জরুরী। আরও স্পষ্ট করে বললে, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি বে-জোড় রাত্রিতে আমাদের ইবাদতে লিপ্ত থাকা এক প্রকার আবশ্যক। সেজন্য, শবে কদরের মহা-মর্যাদাবান রাতের পূর্ণ ফযিলত হাসিল করতে আমাদেরকে অবশ্যই রমযানের শেষ দশকে ইবাদত এবং একনিষ্ঠতায় অধিক গুরুত্ব দেওয়া ব্যতীত গত্যান্তর নেই।
শেষ দশকে অধিক ইবাদত করা সুন্নত
রমজানের শেষ দশকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য দশকের তুলনায় অধিক পরিমাণে ইবাদত করতেন। একাধিক হাদিস শরীফ থেকে রাসূলে খোদার এ সুন্নত প্রমাণিত। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন:“রমজানের শেষ দশকে প্রিয় নবী যত পরিশ্রম করতেন, অন্য দশকে তা করতেন না” অর্থাৎ, তিন দশকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি পরিশ্রম করতেন শেষ দশকে, আর তা অবশ্যই ইবাদতের মাধ্যমে। (মুসলিম শরীফ: ১১৭৫) আম্মাজান আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা অন্য বর্ণনায় ইরশাদ ফরমান: “শেষ দশক আরম্ভ হলে প্রিয় নবী পূর্ণরাত জেগে থাকতেন, পরিবারের সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে দিতেন এবং নিজে কোমর-বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হতেন”। (বুখারী শরীফ: ২০২৪)
উক্ত দু’টি হাদিস শরীফ থেকে অত্যন্ত প্রকট যে, শেষ দশকে অধিক পরিমাণে ইবাদত করা সুন্নত। আর প্রিয় নবী যা করেছেন তাতে যে বিশেষ মঙ্গল নিহিত আছে এ ব্যাপারে মুসলমান-মাত্রই নিঃসন্দিহান। আমাদের অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে শেষ দশকে ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া উচিত এবং পরিবারের সদস্যদেরকে ও এ সুন্নতের বরকত অর্জনে শামিল করা উচিত।
নাজাতের সওগাত পেতে
রমযানের শেষ দশকে আল্লাহ তায়ালা অধিক পরিমাণে গুনাহগার বান্দাদেরকে ক্ষমা তথা নাজাত দেন বলেই মূলত এ দশকের নামকরণ ‘নাজাত’ হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা তো মাধ্যম বা কারণ ছাড়া কিছু করেন না। তো এ সূত্রে আমাদেরকে অবশ্যই নাজাত পাবার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে; রমজানের শেষ দশকে নাজাতী বান্দার পরিমাণ বেশি থাকে বলেই এ দশকে আমাদেরকে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করতে হবে এবং কায়মনো বাক্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
আর এ দশকের মধ্য দিয়েই রমজান আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। পরবর্তী এক বছর পূর্বে আর রমজানের দেখা আর আমরা পাইনা। পরবর্তী রমজানে বেঁচে থাকবো কি-না সে নিশ্চয়তাও কারোরই নেই; সব মিলিয়ে রমজানকে বিদায় দেওয়ার দিনগুলোতে রমজানের প্রতি এক ধরনের আপ্লুতকর, মর্মস্পর্শী অনুভূতি আমাদের ধর্মবোধে প্রগাঢ় হয়। এ প্রগাঢ় মর্মস্পর্শী অনুভূতির দাবিতেই রমজানকে সর্বোচ্চ একনিষ্ঠতাপূর্ণ ইবাদতের মাধ্যমে বিদায় জানানো উচিত। মুসনাদে আহমদের হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে খোশ-খবর দেন, “রমজান কেয়ামতে রোজাদারের জন্য সুপারিশ কারী হবে”। (মুসনাদে আহমদ: ৬৬২৬)।