জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে একজন ইউপি চেয়ারম্যানের যে দায়িত্ব, ঠিক তার বিপরীত অমানবিক কাজের অভিযোগ টাঙ্গাইলের গোপালপুরের হাদিরা ইউপি চেয়ারম্যান কাদের তালুকদারের বিরুদ্ধে। এই চেয়ারম্যানসহ ১১ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।
গোপালপুরে সম্প্রতি সালিশ বৈঠকে পিটিয়ে একই সময়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে শাশুড়িকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছেন অভিযুক্তরা। এ নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। এ ঘটনায় তখন থেকেই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। এরপর শেষ পর্যন্ত বিচার পেতে ভুক্তভোগী নারী আদালতে গেলেন।
ওই প্রতিবেদনে জানা যায়: গোপালপুরের হাদিরা ইউনিয়নের কড়িয়াটা গ্রামের নুরুল ইসলামের স্ত্রী মাজেদা বেগম ও তার মেয়ের জামাতাকে মারধর করে জোরপূর্বক স্বামীর সাথে তালাক দিয়ে মেয়ের জামাতার সাথে বিয়ে দেয়া হয়। এতে হাদিরা ইউপি চেয়ারম্যান কাদের তালুদকার ও ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামসহ প্রভাবশালীরা সালিশি বৈঠকে শাশুড়ির সাথে জামাতার বিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এসময় স্থানীয় কাজী গোলাম মাওলা জিন্না তালাক ও বিয়ে সম্পন্ন করেন।
চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদনে আইনজীবীর বরাতে বলা হয়েছিল, ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইনে একই দিনে তালাক ও বিবাহ দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য। আর ধর্মীয় অনুশাসন ও ইসলামী বিধানে শাশুড়িকে বিয়ে করা হারাম বলে জানিয়েছে টাঙ্গাইল কওমি ওলামা পরিষদ। সমাজপতিরা এমন বিয়ের নামে সামাজিক অনাচার ও ইসলামের বিধানকে অবজ্ঞা করেছেন বলে অভিমত দিয়েছিলেন তারা।
নারীর প্রতি সহিংসতা এবং নির্যাতনের নানা খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে আসে। এসব ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব হচ্ছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। কিন্তু এই ইউপি চেয়ারম্যান তা না করে নিজের শপথ লঙ্ঘন করেছেন বলেই আমরা মনে করি। দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটও এমন ঘটনা সমর্থন করে না। এমনকি এ ঘটনার পর ওই নারী নিজের বাড়িতেও থাকতে পারেননি। চেয়ারম্যানসহ গ্রাম্য সালিশদের এমন কার্যক্রম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এরপরও বিষয়টা যেহেতু আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, তাই আমরা বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে চাই। এমন অপরাধ প্রমাণিত হলে চেয়ারম্যানসহ সব অপরাধী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আসবে বলে আমরা আশা করি।