জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্তে বেপরোয়া হত্যাযজ্ঞে মেতেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এরইমধ্যে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের হামলায় আহত হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ।
কিন্তু এমন নির্মমতাকে বৈধতা দিতে নির্লজ্জভাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যা বলেছেন, তা আরো বেশি ভয়ঙ্কর। এমন হামলায় যুক্তি তুলে ধরে নেতানিয়াহু বলছেন, তারা যা করেছে সেটা আত্মরক্ষার জন্যই করেছে।
নির্লজ্জতা দেখানোর এমন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই ইসরায়েলের লালন, পালন এবং রক্ষাকর্তা হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। এক্ষেত্রে তারা আরো এক ধাপ এগিয়ে হানাহানির জন্য ফিলিস্তিনিদের সংগঠন হামাসকে দায়ী করে বলেছে, নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষার অধিকার রয়েছে ইসরায়েলের।
মার্কিনী নির্লজ্জতার এখানেই শেষ নয়। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ইসরায়েলের প্রতি ধারাবাহিক অন্ধ সমর্থন প্রকাশে জেরুজালেমে দূতাবাস খোলার দিন হিসেবে ঠিক সেই দিনটিকেই বেছে নিয়েছে তারা, ৭০ বছর আগে যে দিনটিতে ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড দখল করে ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
দূতাবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। উপস্থিত ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প এবং তার স্বামী জ্যারেড কুশনার, যারা হোয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা। আরো ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিফেন মিউচিন ও উপ-পরাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভান। আবার উপস্থিত না থেকেও ভিডিও বার্তায় নিজের সমর্থন ব্যক্ত করে ইসরায়েলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ট্রাম্প।
আমরা জানি, তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের সোমবার হামাসের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনিরা যে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল তার নাম দেয়া হয়েছিল ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ বা ‘প্রত্যাবর্তনের মহামিছিল’। কারণ জেরুজালেম তাদের কাছে জীবনের চেয়েও বড় বিষয়। কোনোভাবেই এই শহরকে হাতছাড়া করতে চায় না তারা।
শুধু ধর্মীয় কারণেই নয়, ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের রাজনীতিতেও জেরুজালেম গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর একটি শহর। বিশেষ করে মুসসলিম, ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের পবিত্র কয়েকটি ধর্মীয় স্থাপনার অবস্থান এই শহরেই। তাই দুটি দেশই জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী ঘোষণা করেছে। বলা হয়, এই শহরই এখন ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় বাধা। এ বিষয়ে কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নয়।
তাহলে কি এভাবেই যুগের পর যুগ রক্ত ঝরবে ফিলিস্তিনিদের? এই অন্যায়ের বলি হবে ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোর-কিশোরীরা? এসব প্রশ্নে নীরব বিশ্ব মোড়লরা। জাতিসংঘ নিন্দা জানালেও সংস্থাটির জোরালো অবস্থান নেই। নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক ডাকলেও ইসরায়েলের বিপক্ষে কোনো প্রস্তাব পাস হবে না সেটা আন্দাজ করা খুব সহজ। কারণ যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
এই অঞ্চলে শান্তির অন্তরায় ইসরায়েল নিজেই। অসলো চুক্তি বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরায়েলের অন্যায় দখলদারিত্ব আর অত্যাচার। যতদিন দেশটির এমন নির্মম অত্যাচার চলবে, ততদিন এই অঞ্চলে অশান্তিও থাকবে।