দেশপ্রেম আর জাতির প্রতি বিশ্বাসে অটল থাকায় যেখানে খুন হয়েছিলেন জাতীয় চার নেতা, রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের সেই পুরান কারাগারে জেলহত্যা দিবসে তাদেরকে শ্রদ্ধার আর ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে।
শনিবার সকালে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারের অভ্যন্তরে চার নেতার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, মহিউদ্দিন খান আলমগীর, বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, চার নেতার একজন সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম, আইজি প্রিজন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এবং রাজনৈতিক নেতারা।
এর আগে আগত অতিথিরা কারাগারের অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর ও চার নেতার স্মৃতি সংরক্ষিত জাদুঘরে ঘুরে দেখেন তারা।
এছাড়াও দিবসটিকে কেন্দ্র করে সকাল সাড়ে ৯টায় পুরাতন জেলখানায় যেখানে চার নেতা নিহত হয়েছিলেন সেই কক্ষে এক মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মিলাদ মাহফিলে আগত অতিথিসহ নিহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মিলাদ মাহফিল শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ৩ নভেম্বর সারাদেশ ও বাঙ্গালীরা যথাযোগ্য মর্যাদায় জেল হত্যা দিবস পালন করে থাকে। সেটাই এখানে চলছে, এখানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা আছেন, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা আছেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকালীন আমাদের যে নির্বাচন কমিশন আছে তাদের দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা। আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের দিক দিয়ে অনেক সক্ষমতা অর্জন করেছে। কাজেই কেউ যদি বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা মোকাবেলা করবে।
মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম বলেন, পনেরোই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা, এরপর জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের সকল আসামির বিচার হয়নি। তাদের অতি দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হোক। এই হত্যাকাণ্ডের অন্তরালে যে সকল মুখোশধারী লোক রয়েছে তাদেরও বিচার হোক। এই সব লোকজনদের সম্পর্কে দেশ জাতি জানতে চায় ও তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চায়।
কারা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র উপভোগ করেন আগতরা। যেখানে দেখানো হয় জাতীয় চার নেতা হত্যার সঠিক ইতিহাস।
প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন শেষে আইজি প্রিজন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, এই কারাগার মুক্তিযুদ্ধের ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেক স্মৃতি বহন করছে। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকেও ভাবনা হচ্ছে এটিকে একটি বিনোদন কেন্দ্র ও জাদুঘরে পরিণত করার। যেটা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এখনো তিনটি জাদুঘর এখানে রয়েছে তবে তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত না। বিশেষ বিশেষ দিবসে একটি খুলে দেওয়া হয়। আশা করছি ২০২০ সালের মধ্যে এই জাদুঘর ও বিনোদনকেন্দ্রের প্রকল্প সম্পন্ন হবে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল সংগঠনের উদ্যোগে সারাদেশে পালন করছে শোকাবহ এই দিবস।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা শহীদ জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এদিন বিকাল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
পচাঁত্তরের পনেরোই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় আজকের দিনটি।
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাক আহমদের প্ররোচণায় এক শ্রেণীর উচ্চাভিলাসী মধ্যম সারির জুনিয়র সেনা কর্মকর্তারা ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিভৃত প্রকোষ্ঠে বন্দি অবস্থায় জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং আবু হেনা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে হত্যা করে।
ষড়যন্ত্রকারীরা প্রথমে গুলি এবং পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। জাতীয় এ চার নেতা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাতে আটক বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও নেতৃত্ব দান করেন।