চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

রক্তপিপাসু বর্মী জেনারেলদের সাজা দিতে চায় ইইউ

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কিছু অবরোধ আরোপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চালানো হত্যাযজ্ঞের সাজা দেয়ার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হামলা ও নির্যাতনে ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এই মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিশেষভাবে দেশটির শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়াসহ বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটন, ইয়াঙ্গুন এবং ইউরোপে কর্মরত ১৫ জনেরও বেশি কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেয়ার পর এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা হচ্ছে।

একমাস আগেও নিষেধাজ্ঞা বা শাস্তি – এমন কোনো প্রসঙ্গই ওঠেনি কোনো আলোচনায়। কিন্তু ক্রমবর্ধমান সহিংসতা এবং বাংলাদেশে বাড়তে থাকা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা পশ্চিমা নীতি নির্ধারকদের ওপর একটা বড় ধরণের চাপে ফেলে দিয়েছে।

রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রসঙ্গে বারবার মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির পদত্যাগের দাবি উঠে আসলেও পশ্চিমা কূটনীতিকরা আপাতত তার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প দেখছেন না দেশটির জন্য। কেননা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিরচিত সংবিধান অনুসারে, সু চি দেশটির সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করেন না। উল্টো তারাই দেশের সিংহভাগ ক্ষমতার অধিকারী।

তবে এখন পর্যন্ত পশ্চিমা দেশগুলো এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলমান আলোচনা থেকে মিয়ানমারের সেনানায়কদের সাজা দিতে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত ওয়াশিংটন এবং ব্রাসেলস বিরত থাকতে পারে।

আগামী ১৬ অক্টোবর মিয়ানমার ইস্যুতে ইইউ পররাষ্ট্র মন্ত্রিপরিষদ আলোচনায় বসবে বলে জানিয়েছেন উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক ড্যানিশ মন্ত্রী উল্লা টোর্নাইস। তবে এর মধ্যেই অবরোধ আরোপ বিষয়ক কোনো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে, এমন কিছু আশা করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

শাস্তি ছাড়াও সহিংসতা কবলিত রাখাইনে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার পরিমাণ বাড়ানোর ব্যাপারেও দেশগুলোর মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।রোহিঙ্গা-সাজা-সেনাবাহিনী৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত ৫ শতাধিক মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।