অফিসে নারী কর্মীদের যৌন হয়রানি এবং এর পরবর্তী ব্যবস্থার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে টেক জায়ান্ট গুগলের সবগুলো কার্যালয় বর্জন করে বেরিয়ে আসছেন কর্মীরা।
গুগল কর্মীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগগুলোকে সামলানোর পদ্ধতিতে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়ে নজিরবিহীন এই পরিকল্পিত ওয়াকআউটের আয়োজন করা হচ্ছে।
পরিবর্তনগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার ব্যবস্থার অবসান। এটি বন্ধ হলে হয়রানির শিকার কর্মীরা প্রয়োজনে মামলা করার সুযোগ পাবেন।
বড় পরিসরে এই ক্ষোভের শুরু গত সপ্তাহে, যখন সবাই জানতে পারে, একজন উচ্চপদস্থ নির্বাহী কর্মকর্তা চাকরি ছাড়ার সময় কোম্পানি থেকে ৯ কোটি মার্কিন ডলার পেয়েছেন। যদিও তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের ‘বিশ্বাসযোগ্য’ অভিযোগ রয়েছে বলে মনে করে গুগল প্রশাসন নিজেই।
অভিযুক্ত অ্যান্ডি রুবিনকে বলা হয় অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের ‘স্রষ্টা’। তিনি যৌন হয়রানির অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।
গত মঙ্গলবার আবার রিচার্ড ডেভল নামে কোম্পানির এক্স রিসার্চ ল্যাবের এক নির্বাহী যৌন হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগ করেন। ডেভলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চাকরির ইন্টারভিউ নেয়ার সময় চাকরিপ্রার্থী এক নারীর সঙ্গে তিনি আপত্তিকর আচরণ করেছেন।
রিচার্ড ডেভল পদত্যাগের পর এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে এর আগে ঘটনাটিকে ‘বিবেচনাগত ভুল’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
এর প্রতিবাদেই শুরু হয় বিশ্বজুড়ে গুগল কর্মীদের পরিকল্পিত ওয়াকআউট। প্রথম ওয়াকআউটটি হয়েছে বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির সিঙ্গাপুর কার্যালয়ে। এভাবে একে একে প্রতিটি গুগল কার্যালয়ে স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় কর্মীদের কাজ বর্জন চলতে থাকবে।
সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওয়াকআউটকারী প্রত্যেক কর্মী অফিস ছেড়ে বের হওয়ার সময় ডেস্কে একটি চিরকুট রেখে যাবেন: ‘আমি আমার ডেস্কে নেই কারণ আমি অন্যান্য গুগলার ও কনট্রাক্টরদের সঙ্গে বের হচ্ছি যৌন হয়রানি, নিপীড়ন, স্বচ্ছতার অভাব এবং এমন একটি কর্মক্ষেত্র সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে, যা সবাই মেনে নিতে পারছেন না।’
হয়রানির শিকার কর্মীদের ব্যবস্থা নেয়ার অধিকারকে সমর্থন করেন বলে জানিয়েছেন গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই। সব কর্মীদের উদ্দেশ্য করে পাঠানো ইমেইল বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি আপনাদের অনেকেই কী পরিমাণ ক্ষুব্ধ আর হতাশ।’
‘আমিও এমনটাই অনুভব করি, এবং আমি এই বিষয়টির অগ্রগতিতে পূর্ণভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এটি এমন একটি ইস্যু, যা খুব বেশি সময় ধরে আমাদের সমাজে, এবং গুগলেও টিকে আছে।’
এ পর্যন্ত যৌন হয়রানির অভিযোগে অন্তত ৪৮ জন কর্মীকে শাস্তি হিসেবে চাকরি ছাড়ার সময় পাওনা অর্থ না দিয়েই বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিচাই।