গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) দুই শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আক্কাস আলীকে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের পদ থেকে আজীবনের জন্য অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া আগামী ৪ বছর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক/একাডেমিকসহ সকল কাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ বিষয়ে গঠিত ৪ সদস্যর তদন্ত কমিটি।
আগামী জুলাই মাসের প্রথম থেকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রফেসর ড. মো. নুর উদ্দিন আহম্মেদ শুক্রবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান: তদন্ত কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বৃহস্পতিবার রাতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
আপিল করার কোন সুযোগ আছে কিনা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপিল করার কোন সুযোগ নাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. আশিকুজ্জামান ভুইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন: চলতি মাসের প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী অধ্যাপক মো. আক্কাস আলীর বিরদ্ধে ফেসবুক ও কিছু পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়া যৌন-হয়রানীর একটি সংবাদ ও বেনামি একটি লিখিত একটি অভিযোগপত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপ্রাপ্ত বিদায়ী এক ছাত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ প্রকাশ পায়। প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আক্কাস আলীর অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
‘‘আন্দোলনরত শিক্ষাথীদের বিক্ষোভের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই না করে তাৎক্ষণিক ওই শিক্ষককে সংশ্লিষ্ট পদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কমকাণ্ড থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়ে ঘটনার সত্যতা তদন্তে ৪ সদস্যর একটি তদন্ত টিম গঠন করে ৫ কর্ম-দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
ওই ২ ছাত্রীর লিখিত কোন অভিযোগপত্র না থাকা সত্বেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করেন। তদন্ত কমিটির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন আব্দুর রহিম গত ৯ এপ্রিল বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের বিদায়ী ওই ২ ছাত্রীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ব্যাপক তদন্ত ও বিশ্লেষণ শেষে শিক্ষক আক্কাস বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিসের শেষ বর্ষের বিদায়ী সনদপত্র প্রাপ্ত ওই শিক্ষার্থী ফোনে তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন: স্যার আক্কাস আলী বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে যৌন-নিপীড়ন করেছে। যা একজন শিক্ষকের কাছ থেকে কাম্য নয়। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারে আমি ও আমার পরিবার সন্তষ্ট। তাকে দেয়া শাস্তির মাধ্যমে এমন কাজে লিপ্ত সকল শিক্ষক নিজেদের সংশোধন করে নেবেন বলে আমি মনে করি।
মো. আক্কাস আলী তদন্ত কমিটির দেয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে বলেন: এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে ওই ২ ছাত্রী সাটির্ফিকেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যাওয়ার পর একই বিভাগের ২ শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন ও মো. নেশারুল হকের মাধ্যমে বেনামি একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা অন্যায়।
‘‘বলা হয়েছে, ২৫ জানুয়ারী ওই ২ ছাত্রীকে আমি যৌন হয়রানী করেছি। তাই যদি হয় তাহলে জানুয়ারীর মাসের ঘটনা দেখিয়ে বেনামি অভিযোগপত্র এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে জমা দেয়া এই ৪ মাস তথ্য গোপন রাখার দায়ে এবং পদের জন্য ওই ২ ছাত্রীকে গোপনে সহায়তা করার অভিযোগে ওই ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধেও শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আশা করবো আমার বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা অভিযোগে ব্যবস্থা বাস্তবায়নের আগে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিবেন কর্তৃপক্ষ।’’
আক্কাস আলী আরো বলেন: আইন বিভাগের শিক্ষক ড. রাজিউর রহমান, ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক মো. মশিউর রহমান, ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক মুক্তাসহ বামপন্থী সিন্ডিকেটের সদস্যরা ওই ২ ছাত্রীকে আমার পেছনে লেলিয়ে দিয়ে আমার পদ দখল ও জাতির পিতার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করার জন্য অপপ্রচার রটিয়েছে।