চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘যে সম্মান পেয়েছি তা ছিল টাকার চাইতেও বেশি’

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের হীরকখচিত দিন ১৩ এপ্রিল। ২০ বছর আগে ১৯৯৭ সালে এইদিনে বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছিল ক্রিকেটে নিজেদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। জিতে নিয়েছিল আইসিসি ট্রফি। সেই জয়ের ২০ বছর পর বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) ‘আইসিসি ট্রফি জয়ের ২০ বছর’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে। যাতে বসেছিল সাবেকদের মিলনমেলা। সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে জাভেদ ওমর বেলিম বলে গেলেন, জয়ের পর প্রত্যেকে যে সম্মান পেয়েছিল, তা ছিল টাকার চাইতেও অনেক বেশি।

১৯৯৭ সালে এইদিনে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিলাত ক্লাব মাঠে কেনিয়াকে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ২ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। যার মধ্য দিয়ে আইসিসির আসরে লাল সবুজ পতাকা উড়েছিল পতপত করে।

‘আইসিসি ট্রফি জয়ের ২০ বছর’ সেমিনারে বক্তারা সেদিনের কথাই স্মরণ করলেন। বললেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের আজকের যে শক্তিশালী অবস্থান, তার গোড়াপত্তন করেছিল ওই জয়। যাতে খেলেছিলেন আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদিন, আমিনুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, খালেদ মাসুদ, মোহাম্মদ রফিক, সাইফুল ইসলাম আর হাসিবুল হোসেন শান্তরা।

স্মৃতিচারণে আইসিসি ট্রফি জেতা দলটির তৎকালীন ম্যানেজার গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, ‘আসলে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় সবার সম্মিলিত একটা প্রয়াস। সবাই মেহনত করেছিলেন। কোচ, খেলোয়াড়, ম্যানেজমেন্ট, সাংবাদিকরা- সবাই। এভাবেই আমরা বাঙ্গালি জাতিকে গর্বিত করেছিলাম।’

‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের অগ্রগতি হয় ১৯৯৫ সালে। এর ফসল ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়’ -কথাগুলো বললেন তৎকালীন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ আশরাফুল হক। তিনি বলেন, ‘১৯৯৫ সালে আমি আইসিসির ডেভেলপমেন্ট কমিটির সদস্য ছিলাম। মালয়েশিয়ায় আইসিসি ট্রফি হলে আমাদের গেম ডেভেলপমেন্ট কেমন হতে হবে সেই চিন্তা করি আমি আর সাবের হোসেন চৌধুরী। পরের বছর এসিসি ট্রফি জেতার পর মালয়েশিয়াতেই কোচ গর্ডন গ্রিনিজের সঙ্গে পরিচয় হয়। বাংলাদেশকে কোচিং করাতে রাজি হন তিনিও। আর দেশীয় কোচ ওসমান ও জালাল অনেক পরিশ্রম করেছিলেন।’

সৈয়দ আশরাফুল আরো বলেন, ‘সরকারের প্রত্যক্ষ নজর ছিল, বিশেষ করে ওই সময়ে আওয়ামী লিগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ক্রীড়া মন্ত্রী ছিলেন, ওনার মাধ্যমে অনেক সাহায্য পেয়েছি।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট স্বাধীনতার পর থেকে হাঁটি-হাঁটি পা করে এগিয়ে গেছে। তার পেছনে বিশেষ অবদান ক্রিকেট সংগঠক সৈয়দ রইসউদ্দিনের। তিনি বললেন, ‘ওই সময় আমাদের কাছে পকেটে কোন টাকা পয়সা ছিল না। বিমানে চাকুরী করার সুবাদে লন্ডনে খেলোয়াড়দের যাওয়া আসার খরচ জোগাড় হয়। ওই সময় এমসিসি চাইত যেকোনো দলের ভালো মাঠ, ভালো কোচ আর খেলোয়াড় থাকতে হবে।’

সে সময়কার খেলোয়াড়দের কষ্টের কথা জানিয়ে সৈয়দ রইসউদ্দিন বললেন, ‘তখনকার আমলে খেলা হলে খেলোয়াড়দের ৫০ টাকা দিতাম। নেট প্র্যাকটিস থাকলে রেডক্রস থেকে দুধ আর হাই-প্রোটিন বিস্কুট খাওয়াতাম। এরপরও খেলোয়াড়রা উৎফুল্ল চিত্তে হাসিমুখে সব কষ্ট সহ্য করে খেলে গেছেন। আমরা নিজেরাও মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ করেছি।’

আইসিসি ট্রফি জয়ের ম্যাচে খেলা জাভেদ ওমর বেলিম বললেন, ‘এই জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের দৃশ্যপট পরিবর্তন করে দিয়েছিল। আমরা প্রত্যেকে যে সম্মান পেয়েছি তা ছিল টাকার চাইতেও অনেক বেশি।’

এদিন স্মৃতিচারণের অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার জাহিদ চৌধুরী। মালয়েশিয়ার কিলাত ক্লাবের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ফিরে আসে সেমিনারের ডিজিটাল প্রোজেক্টরের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানের শেষদিকে আইসিসি ট্রফি নিয়ে ২০ বছর আগে নিজের একটি গান পরিবেশন করেন সঙ্গীত শিল্পী শাহেদ।