বেশির ভাগ সময়ই পোস্টার, টিজার ও ট্রেলার দেখে আগ্রহ তৈরি হলেও পরবর্তীতে মূল কাজ দেখে দর্শকদের হতাশ হতে দেখা যায়। সেই অর্থে হতাশ করেনি বহুল প্রতীক্ষিত ওয়েব সিরিজ ‘কন্ট্রাক্ট’। টিজার, ট্রেলারের মতোই ছয় পর্বের এই সিরিজটি দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। অন্তত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দর্শকের ইতিবাচক মন্তব্য তেমনটাই বলে দেয়।
গত বুধবার দিবাগত রাত থেকেই ভারতীয় স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম জিফাইভে দেখা যাচ্ছে তারকাবহুল ‘কন্ট্রাক্ট’। আর সিরিজটি দেখার পর থেকেই নানা মাধ্যমে প্রশংসা করছেন দর্শক। অনেকে বলছেন, ‘তাকদীর’ এর পর আরো একটি দারুণ কাজ দেখলেন তারা। কেউ কেউ সিরিজটি দেখার পর এই সময়কে বাংলা ওয়েব কন্টেন্ট এর জন্য ‘স্বর্ণালী সময়’ বলছেন, আবার কেউ বলছেন ‘ওয়েব প্লাটফর্মগুলো বাংলার নির্মাতা ও দর্শকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো’।
কিন্তু কী আছে ‘কন্ট্রাক্ট’ এ? কেন এতো প্রশংসা পাচ্ছে ওয়েব সিরিজটি? প্রথমত এটি এমন একজনের গল্প যিনি থ্রিলারধর্মী লেখক হিসেবে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের কাছে ব্যাপক সমাদৃত। বলছি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের কথা। আর এই লেখকের বহুল পঠিত থ্রিলারধর্মী উপন্যাস ‘কন্ট্রাক্ট’। জেফরি-বাস্টার্ড সিরিজের পাঁচটি বইয়ের অন্যতম হলো এটি।
থ্রিলার পড়তে ভালোবাসেন, এরকম পাঠকের কাছে ‘কন্ট্রাক্ট’ একটি দুর্দান্ত গল্পই শুধু নয়, বাংলা সাহিত্যে এটি একটি মাইলফলক। বলা হয় বাংলা ভাষায় মৌলিক থ্রিলারধর্মী রচনায় ‘কন্ট্রাক্ট’ এর স্থান সবার উপরে।
ওয়েব সিরিজ হিসেবে ‘কন্ট্রাক্ট’ দর্শকপ্রিয় হওয়ার কারণ হিসেবে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখার পাশাপাশি আছে বেশ কিছু কারণ। তারমধ্যে ওয়েব সিরিজটিতে গল্প বলার ভঙ্গি, কাস্টিং, দারুণ সব সংলাপ, কালার, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ও সংগীত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সাধারণত পলিটিক্যাল থ্রিলারের গল্প বুনন যেরকম নিঁখুত হওয়া উচিত, ঠিক সেভাবেই সাসপেন্স রেখে ‘কন্ট্রাক্ট’ এর শুরু। যেখানে প্যারালালি দুটি ভিন্ন সময়ের ঘটনা দেখানো হয়েছে। একটি ঘটনা ১৫ বছর আগের, এবং অন্যটি বর্তমান সময়ের। ব্ল্যাক রঞ্জু, যাকে রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের প্রয়োজনে কুখ্যাত সন্ত্রাসী হিসেবে গড়ে উঠতে সমর্থন দেন। পরবর্তীতে সেই ব্ল্যাক রঞ্জুই সকলের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠে। পালিয়ে দেশ ছাড়লেও দীর্ঘদিন পর দেশে আসে রঞ্জু। তখনও কারো কারো জন্য আগের মতোই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে সে। তাকে খোঁজার মিশনেই মূলত বাস্টার্ড এর আবির্ভাব। রঞ্জুর কাছে যেতেই একের পর এক খুন হয় তার কাছের মানুষ। মাঝখানে ঢুকে পড়ে পুলিশ অফিসার জেফরি বেগ, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় গল্পের সাথে জড়িয়ে পড়ে উমা। আর পারিবারিক রাজনীতির চালে ছুটে চলে রুমানা। এতো সব কিছুর পরে একটাই প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত কি রঞ্জুকে ঘায়েল করতে পারে বাস্টার্ড?
তবে সিরিজে শুধু রাজনীতি, থ্রিলার কিংবা ভায়োলেন্সই নয়- এর পাশাপাশি ছোট ছোট এমন হৃদয়স্পর্শী কিছু ঘটনারও সম্মুখিন হবেন দর্শক, যা তাদেরকে ছুঁয়ে যাবে। মূলত ‘কন্ট্রাক্ট’ এর গল্পটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে কারো বিরক্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
তবে গল্প বলার পাশাপাশি এর সংলাপ মন কেড়েছে দর্শকদের। এরমধ্যে কিছু কিছু সংলাপ দর্শকের মুখে মুখে। যেরকম, ‘বড় ভিলেন না হইলে পড়ে বড় হিরো হওয়া যায় না’, কিংবা ‘আমারে টোপ ফালায়ে মাছ ধরলেন, এখন মাছের সাথে টোপও ভাজি করে খেতে চান!’ বা ব্ল্যাক রুঞ্জুর মোবাইলে থ্রেড ‘আমি কিন্তু সবগুলা গাজীরে শহীদ বানায়ে ছাইড়া দিমু’।
ওয়েব ফিল্ম ‘মাইনকার চিপা’র পর দ্বিতীয়বারের মতো এই সিরিজে সংলাপ লিখেছেন তরুণ লেখক আয়মান আসিব স্বাধীন।
তবে ‘কন্ট্রাক্ট’ এ সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো আর্টসেলের কালজয়ী গান ‘অনিকেত প্রান্তর’ এর কিছু অংশের দুর্দান্ত ব্যবহার। ঠিক ঠাক জায়গায় গানটির কিছু অংশ ব্যবহার ওয়েব সিরিজটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
প্রশংসার পাশাপাশি ‘কন্ট্রাক্ট’ নিয়ে আছে কিছু সমালোচনাও। বিশেষ করে যারা বই হিসেবে নাজিম উদ্দিনের কন্ট্রাক্ট পড়েছেন, তাদের অনেকেই কিছুটা হতাশ হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে লেখকের মন্তব্য স্পষ্ট, তিনি ওয়েব সিরিজ ‘কন্ট্রাক্ট’ এর দর্শকদের উদ্দেশে বলছেন, তারা যেন বইটি মাথায় না রেখে সিরিজটি দেখেন!
সিরিজটিতে বাস্টার্ড চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভ, জেফরি বেগের চরিত্রে শ্যামল মাওলা, ব্ল্যাক রঞ্জুর চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, মীনা চরিত্রে জাকিয়া বারী মম, রুমানা চরিত্রে মিথিলা এবং উমা চরিত্রে আয়শা খান। তানিম নূরের সাথে যৌথভাবে সিরিজটি পরিচালনা করেছেন কৃষ্ণেন্দু চ্যাটার্জী।