কেবলমাত্র সোনালী প্রজন্ম থাকলেই হয় না, দরকার হয় অভিজ্ঞতারও। যেটা ক্রোয়েশিয়া দলটার মাঝে আছে দারুণভাবেই। সঙ্গে আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যয়, এ দুইয়ে মিলে লুঝনিকির ফাইনালে ফ্রান্সকে ধসিয়েও দিতে পারে জ্লাতকো দালিচের শিষ্যরা।
জায়ান্ট সব দলের ভিড়ে ক্রোয়েশিয়ার ফাইনালে ওঠা চমক জাগালেও সেটা কেবল চমকেই সীমাবদ্ধ না রাখতে জোর প্রচেষ্টা থাকবে ক্রোয়েশিয়ার। সঙ্গে আরও তিন কারণ মিলিয়ে ফ্রান্সকে হারিয়ে প্রথমবার শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে মরিয়া থাকবে ক্রোয়েটরা।
সোনালী প্রজন্মের সোনালী সুযোগ
১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সোনালী প্রজন্মের দেখা পেয়েছে ক্রোয়েশিয়া। আর এই সোনালী দল যে তাদের প্রজন্মকে ইতিহাসের শিখরে স্থান করে দিতে চাইবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি কিংবা ইতালির মতো সমৃদ্ধ ফুটবল ইতিহাস নেই ক্রোয়েশিয়ার। ১৯৯৮ সালের পর কেবল একবার ছাড়া নিয়মিতই বিশ্বকাপে খেললেও নকআউটে উঠতে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে দেশটিকে। সঙ্গে পূর্ব ইউরোপিয়ানরা বিশ্বকাপে ভালো নয়, এমন বদনাম তো ছিলই। ক্রোয়েটরা চাইবে সব বদনাম মুছে ফেলে নতুন করে ইতিহাস লিখতে।
আন্ডারডগ তকমা নিয়েই রাশিয়ায় খেলতে এসেছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু তাদের যে একটা গোছানো দল সেটা ভুলে গিয়েছিল অনেকেই। মদ্রিচ-রাকিটিচ-মানজুকিচরা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চাইবেন ফুটবলে নতুন শক্তির আবির্ভাব ঘটতে চলেছে।
‘হারার আগে হারবো না’ মনোভাব
আর্জেন্টিনাকে পেছনে ফেলে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই ক্রোয়েশিয়ার নকআউটে ওঠা। খানিকটা চমক থাকলেও পরের ধাপগুলো পেরনো নিয়ে সন্দেহ ছিল সমালোচকদের। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে সেই দলটির ফাইনাল পর্যন্ত চলে আসা মোটেই চমক নয়।
নক আউটের ম্যাচগুলো প্রমাণ দিচ্ছে নিজেদের স্নায়ু ইস্পাত কঠিন করেই বিশ্বকাপে খেলতে এসেছে ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্ক, কোয়ার্টারে স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও গোল শোধ করে পরপর দুবার টাইব্রেকে ম্যাচ জিতে সেমিতে জায়গা নিশ্চিত করা দারুণ কিছু। পরে ইংল্যান্ডের কাছে ৫ মিনিটেই পিছিয়ে পড়েও ২-১ গোলে জয় চেনায় এক অন্য ক্রোয়েশিয়াকেই।
অধিনায়ক লুকা মদ্রিচও সেই ম্যাচ শেষে জানিয়ে দেন, ‘আমরা দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলাম আমরা কী। আমরা তা পেরেছি।’
মদ্রিচরা আসলেই দেখিয়ে দিয়েছেন এই তো সেই দেশ যারা যুদ্ধের মাঝেও ফুটবলকে ভালোবাসতে পারে। তাই ফুটবলের ক্রোয়েশিয়াকে ভালো না বেসে উপায় আছে? উপায় আছে শিরোপা হাতে না দেখে?
মাঝমাঠের শক্তি আর আত্মবিশ্বাস
যে দলের অধিনায়ক লুকা মদ্রিচ, সেদলের মাঝমাঠে আর কাকে লাগে! রিয়াল মাদ্রিদের মিডফিল্ডারের সঙ্গে জ্লাতকো দালিচ বোনাস হিসেবে পেয়েছেন ইভান রাকিটিচকে। আরেক জায়ান্ট ক্লাব বার্সেলোনার মাঝমাঠের অন্যতম ভরসাকে। সঙ্গে ইন্টার মিলান, জুভেন্টাস, লিভারপুলে খেলা মারিও মানজুকিচ, ইভান পেরিসিচ, দেজান লভ্রেরনরা তো আছেনই।
জায়ান্ট ক্লাবে খেলায় প্রত্যাশার চাপটা ভালভাবেই নিতে পারেন ক্রোয়েট ফুটবলাররা। সবারই বয়স গড়ে ২৭ বছরের কাছাকাছি। সবার সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ফ্রান্সের তুলনায় এগিয়ে রাখবে ক্রোয়েশিয়াকেই।