নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে অভিভাবকদের জন্য গাইড বই উন্মোচন করলো গ্রামীণফোন। অভিভাবকরা কিভাবে শিশুদের ইন্টারনেটে নিরাপদ রাখবেন সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া গাইড বইটি প্রকাশ করেছে টেলিনর। এবিষয়ে গ্রামীণফোন দেশের ৫০০ স্কুলে কর্মশালার ঘোষণাও দিয়েছে।
আজিমপুরের অগ্রণী স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে বই উন্মোচনের পর স্কুল অডিটরিয়ামে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অংশগ্রহণে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় বক্তারা ইন্টারনেট বিষয়ে বাবা-মা ও শিশুদের করণীয় সম্পর্কে অর্থাৎ কী করবে বা কি করবে না এ সম্পর্কিত রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করেন। এসব রূপরেখার মাধ্যমে শিশুরা ইন্টারনেটের কোনো নেতিবাচক দিকে বিভ্রান্ত না হয়ে ইতিবাচকভাবে এর অফুরস্ত ব্যবহার করতে পারবে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট বিংশ শতাব্দির রাবণ, যার অসীম ক্ষমতা। এই ক্ষমতাকে ক্ষতির বদলে ভালোর জন্য ব্যবহার করতে হবে। ইন্টারনেটের ‘রাবণ’কে হত্যা করা সম্ভব না। তাই একে পরাজিত করতে হবে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নিজের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ারে শিক্ষার্থীদের যথাসম্ভব সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেন তিনি। ‘সুন্দর হতে হলে সুন্দরের কাছে যেতে হবে’; তাই ইন্টারনেটের খারাপ কন্টেন্ট থেকে দূরে থেকে ভালো এবং শিক্ষামূলক বিষয় গ্রহণের আহ্বান জানান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতনতা তৈরির জন্য বাবা-মার সঙ্গে শিশুদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা খুবই প্রয়োজন বলে মনে করেন ইউনিসেফ এর চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট জামিলা আখতার।
ইন্টারনেটের কু-প্রভাব থেকে সন্তানদের নিরাপদ রাখতে কঠোরভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ না করে ইন্টারনেটের কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ এবং সেটা কীভাবে সন্তানদের সুন্দরভাবে বোঝানো যায়, সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন হতে বলেন জামিলা আখতার।
ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন হওয়া এবং ইন্টারনেটে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সম্মুখীন হলে সে ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানোর আহ্বান জানান অগ্রণী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ রিয়াজুজ্জামান ভূঁইয়া।
শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবকদের সচেতনতার পাশাপাশি শিশুদেরও ইন্টারনেটে নিজেদের গোপনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন ব্র্যাকের কমিউনিকেশনস লিড রনি মির্জা।
গ্রামীণফোনের কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটির প্রধান দেবাশিষ রায় বলেন, কার্যক্রম পরিচালনায় গ্রামীণফোন যে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল, এ গাইড বইয়ের উন্মোচনই তার প্রমাণ। আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ, গ্রামীণফোন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন। তাই তাদের চারপাশে যে জ্ঞানার্জনের উৎস রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে তাদের সম্পূর্ণভাবে জানানোকে গ্রামীণফোন দায়িত্ব মনে করে বলে জানান তিনি।
শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার কীভাবে গঠনমূলকভাবে মনিটর করা যায় সে ব্যাপারে সচেতন করার জন্য ইন্টারনেট এবং অ্যান্ড্রয়েডের বিভিন্ন অ্যাপস সম্পর্কে বইটিতে ধারণা দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের মধ্যে নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য গ্রামীণফোন, ব্র্যাকের সহায়তায় সারাদেশে ৫০০ স্কুলে কর্মশালা আয়োজন করবে বলেও জানান দেবাশিষ রায়।
আলোচনা সভায় শিক্ষক এবং অভিভাবকরাও নিজেদের মতামত এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করেন।
গাইড বইটি বাংলা ও ইংরেজি দু’ভাষাতেই প্রকাশ করা হয়েছে। গ্রামীণফোন টার্গেট গ্রুপের মধ্যে গাইডবুকটি বিতরণ করবে।