বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা, বিসিএস ও বিশ্ববিদালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কীভাবে জালিয়াত চক্রের কাছে যায় এবং পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে, তা জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।
তিনি বলেন: ‘অনেক ছাত্র আছে যাদের পরীক্ষা দেওয়ার বয়স আছে, কিন্তু ছাত্র ভালো না। তাদের মধ্য থেকে একজনকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হলে প্রবেশ করানো হয়। ডিভাইসের মাধ্যমে বলে বা যেকোন ভাবে প্রশ্নটা বাইরে পাঠানোই তার দায়িত্ব। প্রশ্ন পাওয়ার পর কয়েকজন মিলে এর সমাধান করে টার্গেট পরীক্ষার্থীদের উত্তর সরবরাহ করতো তারা। পুরো প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতারক চক্র ২-৩ লাখ টাকা নিতো।’
প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং বিভিন্ন পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত এমনই একটি প্রতারক চক্রের ১০ জনকে আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ওরফে সুমন, সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস, কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা সোহেল আকন্দসহ এই ১০ জনকে আটক করা হয়।
পুলিশ বলছে, সম্প্রতি অনার্সের ইংরেজী পরীক্ষায় রাজবাড়িতে তারা জালিয়াতির আশ্রয় নেন এবং এইচএসসি পরীক্ষাতেও এটা শুরুর চেষ্টা করছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন: ‘‘ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ‘মাস্টার কার্ড’ ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন ব্যাংকে। তারপর নিজেরাই সেই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে বৃহৎ পরিসরে প্রতারণা শুরু করেন।
ক্রেডিট কার্ডের মতো দেখতে একটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস তারা নিজেরা তৈরি করে। এর ভেতরে সিমকার্ড প্রবেশ করানো যায় এবং কল রিসিভ করা যায়। তবে ওই ডিভাইস থেকে কল করা যায় না।
পরীক্ষার আগে যেসব পরীক্ষার্থী চুক্তিবদ্ধ হবেন তাদেরকে এই ডিভাইস সরবরাহ করে চক্রটি। এর সঙ্গে ছোট একটি এয়ারফোন থাকে। তারা হলে প্রবেশ করার পর বাইরে থেকে চক্রের সদস্যরা প্রশ্নের সমাধানগুলো বলতে থাকেন এবং হলে সেসব পরীক্ষার্থীরা এয়ারফোনের মাধ্যমে শুনে উত্তর দিতে থাকেন।’’
গোয়েন্দা পুলিশের এই উপ-কমিশনার বলেন: ‘চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত। নিয়োগ পরীক্ষাগুলো সাধারণত শুক্রবারে হয়। পরীক্ষাকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার তারা ঢাকায় আসেন এবং পান্থপথে একটি রুমে মিলিত হন। পরীক্ষার দিন ওই রুম থেকেই প্রশ্নপত্র সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে কাঙ্খিত পরীক্ষার্থীদের উত্তর সরবরাহ করা হয়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের এডি আবু জাফর মজুমদার এ চক্রের অন্যতম সদস্য উল্লেখ করে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন: এর মূলহোতা পুলকেশ দাস নিজেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরিচয় দেন। কিন্তু আসলে এই জালিয়াতিই তার একমাত্র কাজ। সে তার বিশ্বস্ত সহযোগী কার্জনের সহযোগিতায় ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাসগুলো সংগ্রহ করেন। তাদের দু’জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।