সামনে ঘোর বিপদ দেখছি, বলতে পারেন আমি অমানবিক, হতাশাবাদী। কিন্তু মনে করি আমি বরং বাস্তববাদী, উচিত কথাটা রাখ-ঢাক না করে বলে দেই। সেই হিসেবেই বলি, এই যে মানবতা দেখিয়ে যাদের জায়গা দিলাম, তারাই নিকট ভবিষ্যতে হয়তো আমাদেরকে বিপদে ফেলবে।
হয়তো ওদেরকে মিয়ানমার নাগরিকত্ব দেবে না, ফিরিয়েও নেবে না। কারো কোনো চাপেই নেবে না। প্রতিদিন হুমকি দিয়েও উত্তর কোরিয়া যেমন টিকে আছে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, তেমনি ওরাও থাকবে। শুধুই সবার কাছে ধর্না দিয়ে নিজেদের ছোট করছি আমরা। তারচেয়ে বড় কথা, ওরা ফিরে যাবার জন্য এসেছে বলেও মনে হয় না। ওদের কেউ কেউ এইডস আক্রান্ত। আর আমরা, নিজেদের নানামুখী যুদ্ধ রেখে এখন ব্যস্ত অন্যের লড়াই লড়তে!
ওরা দিব্যি খাচ্ছে-দাচ্ছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে, বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ছাড়াই সিম কিনে ফোনে কথা বলছে, ইচ্ছা হলে চলে যাচ্ছে দেশের যেকোনো প্রান্তে। এদের ফেরার মানসিকতা নেই। আমাদের মতো এদের আলাদা কোনো সরকার নেই, বঙ্গবন্ধু বঙ্গতাজের মতো নেতা নেই। এরা ছন্নছাড়া, সুশিক্ষাহীন। এদের দেশ স্বাধীন করার মতো প্রবল ইচ্ছাশক্তিও কি আছে? থাকলে এভাবে ফাইট না করে কেউ চলে আসে?
শুরুতে আমরা কার্যকরীভাবে বাধা দেইনি, বরং উপরে না করলেও আসলে প্রবেশাধিকার দিয়েছি। ওদের পুরুষরা ভেবে দেখেছে, আমাদের তো মিয়ানমার থাকতে দেবে না, বাচ্চা-বউ রেখে সেনা চৌকিতে শেষ কামড় দেই। পালটা আক্রমণ হলে বাংলাদেশ তো আছেই। মিয়ানমারও দেখে, ধাওয়া দিলেই ওদের পালানোর জায়গা আছে। চুক্তিমতে বাংলাদেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অনেকটাই বাধ্য। ড্রোন এবং হেলিকপ্টার পাঠিয়ে, গুপ্তচর মারফত ঐ দেশের সরকার জেনেছে, আমরা ধর্মীয় বিবেচনায় হোক আর মানবিক দিক থেকেই, ওদের আশ্রয় দিয়েছি ও দিচ্ছি। তাই ওরাও দ্বিগুণ উৎসাহে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ওদিকে রোহিঙ্গাদের রাখতে চায় না ওখানে কেউ। কোনো কারণ ছাড়াই? নোবেলজয়ী সু চির মনটা যে কাঁদে না, তাঁর যে লজ্জা লাগে না, তা নয়। কিন্তু এখনও সেনাবাহিনীর হাতে দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল গণতন্ত্র চলে যাওয়ার ভয় আছে। তাছাড়া গৌতম বুদ্ধের অহিংস মতাদর্শের বৌদ্ধরাও মার খেয়ে জেনেছে, টিকে থাকতে হলে লড়াই করতে হয়। এসব ভেবেই সু চি চুপ আছেন। রোহিঙ্গাদের অপরিকল্পিত বংশবৃদ্ধি তাদের দেশের জাতিগত ও ধর্মীয় প্রাধান্য রক্ষার জন্য হুমকি, মনে করছেন তারা।
আর এদিকে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ, যেখানে আজকের প্রথম আলোর শিরোনাম অনুযায়ী ‘আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে’, কেবল একটু এগিয়ে যাচ্ছিলো দেশটা, তখনই মানবতার খাতিরে বাড়তি আনুমানিক ৫ লক্ষকে জায়গা দিতে হলো। আগেও এরা ইয়াবা পাঁচার করেছে, আমাদের আনসার ক্যাম্পে হামলা করে আনসার মেরেছে অস্ত্র লুট করেছে, আমাদের দেশের পাসপোর্টে বিদেশে গিয়ে দেশের সুনাম নষ্ট করেছে, আগামীতেও করবে। চালের দাম আকাশছোঁয়া, জঙ্গীদের প্রধান টার্গেট। নির্বাহী ও বিচার বিভাগীয় দ্বন্দ্ব, বন্যা। এর মাঝে এই বিপদ সরকারকে বড় ধাক্কা দিয়েছে।
ভাই, আমিতো আশু কোনো সমাধান দেখি না। চালের দাম ১০০ হলেও অবাক হবো না। অন্যের উপকার করতে গিয়ে নিজের অস্তিত্বই হুমকিতে আর কি। কিন্তু এ কথা ঠিক যে, বাংলাদেশ যে মানবতা দেখিয়েছে তা দৃষ্টান্তমূলক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এজন্য নোবেল দাবিদার কেনো হবেন না, সে প্রশ্ন আমি অনেক আগেই, সম্ভবত সবার আগে করেছি। সাথে সাথে এটাও বলছি, এই মানবতা দেখিয়ে জায়গা দেয়াটা আবার হীতে বিপরীত না হয়, সেদিকেও যেন আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখি।
আমার কথাগুলো একান্তই নিজস্ব ভাবনা, জানি ভালো লাগবে না অনেকের। কিন্তু, কিছুদিন গেলেই আপনারা কথাগুলোর মর্ম বুঝবেন। কষ্ট লাগবে, তখনও অনেকেই নিজের ভালো না বুঝে বোকামি করে অন্ধবিশ্বাসের চশমা পড়ে বসে থাকবেন। কিছু এলাকা অনেক সম্পদ ততদিনে আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। নিজ দেশের সংখ্যালঘুরা, কারো বন্ধু কারো সহকর্মী পালানোর পথ পাবে না। আসলেই অনেকটা উন্নয়নের দিকে হাঁটছিলাম আমরা, এভাবে হঠাৎ থমকে যেতে চাই না। কাজেই, যা করার এখনই করতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)