মানবতাবিরোধী বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে রাজনৈতিক কুটকৌশল বলে মনে করেন অনেকে। যেসব মানুষ স্বজন হারিয়েছেন তাঁদের চিন্তায় আবেগ অধিক, রাজনীতি কম। যারা বলেন, ভাবতেই পারেন তাঁরা। ভাবনার স্বাধীনতা থাকবে বলেই তো একাত্তরের গণহত্যা, বুদ্ধিজীবি হত্যা, ধর্ষন, লুট ইত্যাদি সংগঠিত হয়েছিলো। তাই না!
এ বিষয়ে আমার কিছু কথা আছে। সবাইকে বাদ দিয়ে আজ স্বার্থপরের মত আমার ভাবনা তাঁদের জানাতে চাই আজ। চাষীর ভাবনা বলে ভেবে নিবেন। কিছু মনে করবেন না আশা করি।
একজন আলতাফ মাহমুদ, তার ছেলেবেলা থেকে শুধুমাত্র বৈষম্যহীন সমাজ আর স্বাধীন মতাদর্শে দেশ গড়বার তাগিদে সারাটা জীবন মিছিলে, সংগ্রামে, আন্দোলন বা প্রতিবাদে দিন পার করেছেন। যে কিনা সংগীতের বৃত্তে নিজেকে গুটিয়ে না রেখে দেশ স্বাধীনে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছিলেন একাত্তরে।
তার অন্তর্ধান কী শুধুমাত্র গেরিলা সঙ্গীদের জীবন বাঁচানোর আবেগে হয়েছিলো! নাকি তার কোনো রকমেরই রাজনৈতিক মতাদর্শ ছিলো না! দশম শ্রেনীতে পড়বার সময় তিনি কেন মিছিল করতেন! হুলিয়া জারি হওয়ায় লুকিয়ে বেড়াতেন! নিজের পিতার রাজনৈতিক অবস্থান মেনে না নিয়ে, পালিয়ে কেন ঢাকা চলে এসেছিলেন? প্রশ্ন অনেক। বাবার জীবন যাপন জানবার পর আমার কাছে উত্তর সহজ লাগে। রাজনৈতিক ভাবনা থেকেই বাবা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন আগামীর জন্য। আবেগ ছাড়া এমন কাজ করা সম্ভব নয়। দেশের জন্য আবেগ, রাজনৈতিক ভাবনা থেকেই আসে। বাবাকে দিয়ে তারই প্রমান পেয়েছি আমি। দেশ নিয়ে ভাবনা শুধুমাত্র রাজনৈতিক সচেতনা থেকেই আসে। কুটকৌশলে পার্থক্য থাকে। কেউ নিজের জীবন দিয়ে আর কেউ অন্যের জীবন নিয়ে কৌশল প্রয়োগ করেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করবার বা রাজাকার হবার পথ রাজনৈতিক আবেগের প্রতিফলন। স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আগামীর জন্য স্বচ্ছ রাজনৈতিক ভাবনার পথ সুগম করবে জানি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)