চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘যুদ্ধবিমানের টহলে হটেছে আরাকান আর্মি, অভিযান চলবে’

বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সমন্বিত অভিযানের পাশাপাশি বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিমানের টহলের ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। যত দিন প্রয়োজন, ওই এলাকায় অভিযান চলবে বলেও জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিলখানায় বিজিবি প্রধান সাংবাদিকদের কাছে বান্দরবান সীমান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ ছাড়া তিনি সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি উত্তরণে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কেও সাংবাদিকদের জানান।

বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চলাফেরা করতে পারে, তবে কারও পক্ষে সেখানে ঘাঁটি তৈরি করে অবস্থান করার সুযোগ নেই বলেও জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক।

মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সদস্যরা গত বুধবার (২৬ আগস্ট) সকালে বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরে বড় মদক সীমান্তচৌকিতে এবং দলিয়ন পাড়া সীমান্তচৌকির একটি টহল দলের উপর হামলা চালায়। এসময় বিজিবি সদস্যরাও পাল্টা গুলি চালায়। 

মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, থানচিতে ১০ থেকে ১২ প্লাটুন বিজিবি ও ৪ থেকে ৫ প্লাটুন সেনাসদস্য মোতায়েন করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া দিয়ে মিয়ানমার তাদের সীমান্ত বন্ধ করে নজরদারি বাড়িয়েছে।

বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘সীমান্তে গত বুধবার যা ঘটেছে, তার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না এবং এমন ধরণের আক্রমণ ছিলো পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত। কারণ, সীমান্তে এখন জঙ্গিবাদ দমনের মতো কোনো পরিবেশ বিরাজ করছে না এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও কোনো ধরণের যুদ্ধ পরিস্থিতি নেই।’

এধরণের হামলার নেপথ্যে বেশ কিছু সম্ভ্যাব্য কারণের কথাও উল্লেখ করে বিজিবি’র ডিজি আরো নিশ্চিত তথ্য উদঘাটনে তদন্ত কমিটির কাজ চলছে বলে জানান।

আরাকান আর্মির চালানো হামলার পেছনে উল্লেখযোগ্য কারণের মধ্যে গত কয়েকদিনে পার্বত্য এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিজিবির উদ্ধার করা ১০ টিরও বেশি ঘোড়া জব্দ করার ঘটনাও হতে পারে বলে তিনি জানান।

মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, অভিযানে দুর্গম এলাকা ঘুরে আরাকান আর্মির ব্যবহৃত রাইফেলের গুলি, শেল ও কোমরের বেল্ট উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও সেখানে আলামত থেকে ধারণা করা যায়, জলপাই রঙের পোশাক পরা অন্তত ৮ থেকে ১০ জন সেখানে আহত হয়েছেন।

বিজিবির মহাপরিচালকের মতে, আরাকান আর্মির যে দলটির সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে, তাদের সংখ্যা ৫০ জন বা এর কমবেশি হতে পারে।

সীমান্তে প্রতিবেশী দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটির উপস্থিতি আছে কি না, জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ওই এলাকায় চলাফেরা করতে পারে, সেটা অস্বীকার করছি না। তবে কারও পক্ষে সেখানে ঘাঁটি তৈরি করে অবস্থান করার সুযোগ নেই। আমরা দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি।’

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ যৌথ অভিযান চালানোর কথা ভাবছে কি না জানতে চাইলে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, ‘তারা তাদের সীমান্তে, আমরা আমাদের সীমান্তে অভিযান চালাব। এটিকে এক হিসেবে সমন্বিত অভিযান বলা যায়।’

হামলার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে সম্প্রতি আরাকান আর্মির মালামাল বহনের কাজে ব্যবহৃত ১০টি ঘোড়া আটকের ঘটনাটি সামনে এসেছে। এর জের ধরেই তারা বিজিবির ওপর হামলা চালায়।

যৌথ অভিযানে এরই মধ্যে রাঙামাটি রাজস্থলী এলাকা থেকে আরাকান আর্মির সহযোগী অং ওং রাখাইনকে আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে গত বুধবার রাতে উপজেলার নয়াঝিরিপাড়া এলাকার একটি ভবন থেকে তাকে আটক করা হয়। এ সময় সেখান থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পোশাকের কাপড় (৩০ গজ), আরাকান আর্মির পোশাক, তিনটি ল্যাপটপ, দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা, ছোট ভিডিও ক্যামেরা, মুঠোফোন, মডেম, দুটি ঘোড়া ও তিনটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।