এ পি জে আবুল কালাম বলেছিলেন, স্বপ্ন সেটা নয়, যা তুমি ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না। তেমনি এক স্বপ্নবাজ মানুষ আতিকা রোমা। যে স্বপ্ন দেখেছে নারীর চলাচলের স্বাধীনতার, যে পাবলিক প্লেস পুরুষ অধিকার করে আছে একচ্ছত্রভাবে যুগের পর যুগ সেখানে নারীর সবল পদচারণার, একজন দুজন নয়, স্কুটি চালিয়ে রাজপথ কাঁপিয়ে বেড়ানো অসংখ্য নারীর। শত দুর্ভোগ সয়েও গণপরিবহনের মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে নারীর নিজের একটা বাহনের।
রোমা শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে থাকেনি। চাকরি বাকরি ছেড়ে দিয়ে সমস্ত একাগ্রতা নিয়ে খুলেছে একটি স্কুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র “যাবো বহুদূর”। কিন্তু একটি মুক্ত মাঠের অভাবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি চালিয়ে নেয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এতো বড় শহরে উচ্চ মূল্য দিয়েও মেয়েদের স্কুটি প্রশিক্ষণের জন্য একটি খোলা মাঠ বা জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি মেয়েদের জন্য এবং সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি মালিকানাধীন, কোনটাই পাওয়া যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ যখনই শোনে মেয়েরা স্কুটি শিখবে তখনই বেঁকে বসে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিলো। কিন্তু ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মন গলানো যায়নি। এমনকি মন্ত্রীর সুপারিশও উনাকে টলাতে পারনি। একই অভিজ্ঞতা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাথে যোগাযোগ করে। জায়গা আছে, কিন্তু সেটা ‘যাবো বহুদূর’ কে দেয়া যাবে না।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি যেখানে শুরু হয়েছিলো সেই জায়গাটাও আর পাওয়া যাচ্ছে না। ১২ ব্যাচে ৬৪ জনকে শেখানোর পরই সেই জায়গাটা হাতছাড়া হয়েছে। এমন আহামরি কোন জায়গা নয় যদিও, একটি পুরোনো বাড়ির পরিত্যক্ত অংশ, যেটা রোমা নিজের খরচে পরিস্কার করে নিয়েছিলো। ভাড়াও গুনেছে অনেক বেশি। তবুও সেটা আর দিতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ। এ এক অদ্ভুত ত্রিশঙ্কু অবস্থা। প্রশিক্ষণ দেয়ার সকল যোগাড় আছে, উৎসাহী শিক্ষার্থীরও অভাব নেই, তবু স্কুলটি চালিয়ে নেয়া যাচ্ছে না।
আমি ‘যাবো বহুদূর’ এর প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। স্কুটি চালানোর সাথে সাথে শিখেছি রাস্তায় নামার আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির খুঁটিনাটি। কি কি কাগজপত্র লাগবে, নিরাপত্তার জন্য করণীয় কি, ট্রাফিক আইনগুলো কেমন, স্কুটির যত্ন কেমন করে নিতে হয়, রাস্তায় হঠাৎ স্কুটি বিগড়ে গেলে কি করতে হবে, এমনকি পোশাক আশাকের সাবধানতাও। প্রত্যেকটি প্রয়োজনীয় ছোট থেকে বড় বিষয় অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে শিখিয়েছে রোমা এবং আরো দুজন প্রশিক্ষক।
একটা খোলা জায়গার অভাবে কি তবে থেমে যাবে ‘যাবো বহুদূর’? না, যাবে না। রোমা থামতে চাইলেও আমরা ওকে থামতে দেবো না। ওর স্বপ্নের জ্বালানি যুগিয়ে যাবো সাধ্যমতো। আমরা জানি মেয়েদের এগিয়ে চলার পথটা কখনোই মসৃণ নয়। ফুটবল, ক্রিকেটসহ নানা ক্ষেত্রে মেয়েদের সফলতা অর্জন করতে হয়েছে, হচ্ছে এমন সব প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করেই।
কারো খোঁজে যদি স্কুলটি চালিয়ে নেয়ার মতো কোন মাঠের খবর থাকে, তাহলে সেটা রোমাকে জানানোর জন্য সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ রইলো। যাবো বহুদুরকে জানান এখানে: https://www.facebook.com/amijabobohudur/
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)