বিগত কয়েক দশক ধরে সৃজনে, কর্মে, চিন্তায়, মননে, প্রজ্ঞায় যিনি ধ্রুবতারা হয়ে এদেশকে আলোকিত করে যাচ্ছেন তিনি অধ্যাপক যতীন সরকার। যুগপৎ প্রাবন্ধিক, চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সমালোচক ও গবেষক এই মানুষটির ৮৩তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে নিজের বাসভবন কেন্দুয়ার ‘বানপ্রস্থে’ অবসর জীবন যাপন করছেন।
যতীন সরকারের নামের সঙ্গে, লেখার সঙ্গে পরিচয় ছিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে। কিন্তু তার সঙ্গে সরাসরি পরিচয় হয় ১৯৯৫ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে ‘গণ সাহায্য সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে ময়মনসিংহ যাবার পর। পেশাগত কারণে তখন ময়মনসিংহে দুই বছর কাটিয়েছিলাম। যেহেতু তিনি কলেজে অধ্যাপনা করতেন, তাই ময়মনসিংহে সবাই তাকে স্যার বলতেন। সঙ্গত কারণে আমিও তাকে স্যার বলতাম। এমন শিক্ষককে স্যার না বললে যে পুরো সমাজের অকল্যাণ!
মূলত কর্মসূত্রেই যতীন স্যারের সঙ্গে পরিচয়। যতীন স্যারের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় হবে, অথচ কেউ তার প্রতি মুগ্ধ হবেন না-তা হয় না, হতে পারে না। আমিও প্রথম পরিচয়েই স্যারের ভক্ত হয়ে উঠেছিলাম। তখন এমন একটা অভ্যাস গড়ে উঠেছিল, যে প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যায় স্যারের হিন্দুপল্লীর সেই ছোট্ট বাসায় যেতাম। আড্ডা, হাস্যরস, সাহিত্য, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলত আলোচনা। এই আনন্দাসরে নিয়মিত উপস্থিত হতে আমি একটু কুণ্ঠিত হতাম, মাসিমার কথা ভেবে। প্রায়ই বেশি রাত হয়ে যেত। স্যার পীড়াপীড়ি করতেন রাতের খাবারের জন্য। আর এই ধকলটা শেষপর্যন্ত মাসিমার কাঁধে বর্তাতো।
প্রাণরসে টইটম্বুর এমন হাস্যেজ্জ্বল প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব আমি জীবনে দ্বিতীয়টি দেখিনি। তিনি যেমন হাসতে পারেন, তেমন হাসাতে। লৌকিক বাংলার হাসির হেন কোনো উপাদান নেই যা যতীন স্যার জানেন না। কেন্দুয়ার আঞ্চলিক টানে কথা বলেন, কিন্তু যা বলেন উচ্চস্বরে এবং জোর দিয়ে বলেন। ইতিহাস, সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য, দর্শন, লৌকিক ঐতিহ্য এসব বিষয় নিয়ে যতীন স্যারের চেয়ে পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখা বাংলা ভাষায় আর কে লিখেছে? স্যারের লেখা প্রাঞ্জল, তার বাংলা অন্য কাউকে অনুবাদ করে দিতে হয় না! জ্ঞান, প্রজ্ঞা, রসবোধ, জীবনবোধ-সব কিছুই যতীন স্যারের অসাধারণ। যতীন স্যার আমার কাছে একজন জ্ঞান তাপস। জীবন্ত অ্যান-সাইক্লোপিডিয়া। বইয়ের আদর্শ আর জীবনের আদর্শ-এই দুইকে এক করে জীবনচর্চাকারী হিসেবে যতীন স্যারের বাইরে দ্বিতীয়জনকে দেখিনি। ইহজাগতিক লোভ-লাভ, এমনকি খ্যাতির মোহ ত্যাগ করে সারাজীবন মফস্বলে কীভাবে কাটিয়ে দেয়া যায়-যতীন স্যার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের বাংলা সাহিত্যের সাবেক এই শিক্ষক দীর্ঘ কাল ধরে মননশীল সাহিত্য চর্চা, বাম রাজনীতি এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। তিনি দুইবার বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি হয়েছেন। এছাড়া কর্মী, সংগঠক ও অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের। দীর্ঘ ১৮ মাস জেল খেটেছেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পর। যতীন সরকারের প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে, তার পঞ্চাশ বছর বয়সে। প্রথম বইয়ের নাম ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’। এরপর একে একে প্রকাশিত হয়-অর্ধশতাধিক বই।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে বাংলাদেশের কবিগান, বাঙালির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সংগ্রাম, মানবমন, মানবধর্ম ও সমাজবিপ্লব, দ্বিজাতিতত্ত্ব, নিয়তিবাদ ও বিজ্ঞান-চেতনা, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী সমাচার, আমাদের চিন্তাচর্চার দিক-দিগন্ত, রাজনীতি ও দুর্নীতি বিষয়ক কথাবার্তা, ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের ভূত ভবিষ্যৎ, পাকিস্তানের ভূত দর্শন, ভাষা সংস্কৃতি উৎস নিয়ে ভাবনা চিন্তা, প্রাকৃতজনের জীবনদর্শন, সত্য যে কঠিন, আমার রবীন্দ্র অবলোকন, কালের কপোল তলে, প্রান্তিক ভাবনা পুঞ্জ, ব্যাকরণের ভয় অকারণ ইত্যাদি।
এ প্রবন্ধ গ্রন্থগুলোর পাশাপাশি শিশুদের জন্য সুপাঠ্য একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘গল্পে গল্পে ব্যাকরণ’ বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে এবং ব্যাকরণ গ্রন্থের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
বাংলা একাডেমির জীবনী গ্রন্থমালার মধ্যে চারটি গ্রন্থ রচনা করেন তিনি। সেগুলো হচ্ছে, ‘কেদারনাথ মজুমদার’, ‘চন্দ্রকুমার দে’, ‘হরিচরণ আচার্য’, ‘সিরাজউদ্দিন কাসিমপুরী’। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী’, ‘প্রসঙ্গ মৌলবাদ’ ও ‘জালাল গীতিকা সমগ্র’। এর মধ্যে নন্দিত প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘জালাল গীতিকা সমগ্র’ বাংলাসাহিত্যে নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য সম্পাদনা। এছাড়া যতীন সরকার রচনাসমগ্র নামে ৬টি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।
বাঙালির বুদ্ধির মুক্তি ও চেতনার বিকাশে সমর্পিত এই চিন্তাবিদ পাকিস্তানের ইতিহাস রচনায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তার ‘পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু দর্শন’ নামক অনবদ্য গ্রন্থে। ইতিহাস, সমাজ, রাষ্ট্র, সাহিত্য, লৌকিক ঐতিহ্য ইত্যকার বিষয় নিয়ে তার মর্মভেদী লেখাগুলি সচেতন পাঠকের নজর কেড়েছে।
তার লেখালেখি শুধু সাহিত্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, দর্শন ও ধর্মের বিস্তৃত জগতেও তার অবাধ বিচরণ। গেল পাঁচ দশকে তার রচনা এ দেশের সমাজ-রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভাষ্যে পরিণত হয়েছে। চিন্তার স্পষ্টতায়, বিশ্লেষণের তীক্ষ্ণতায়, বক্তব্যের ঋজুতায় ও জীবন দর্শনের বলিষ্ঠতায় তার প্রবন্ধ হয়ে উঠেছে সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। অসম্ভব বিনয়ী অথচ জেদি এই মানুষটি প্রায়ই বলতেন, ‘আমি প্রতিভাবান নই। আমি কষ্ট করে লিখি। যা লিখি তাও আবার পড়ে আমারই পছন্দ হয় না। এসব কারণে ভরসা পাইনি এবং এখনও পাই না। অন্যরা হয়ত ভদ্রতা বশত প্রশংসা করে।’
যতীন সরকার ‘সংস্কৃতিকে রাজনীতির চূড়ায় বসিয়ে সংস্কৃতির মধ্যে যে অনুশীলনজাত মননগত উৎকর্ষ ও মূল্যচেতনা রয়েছে তা দিয়ে রাজনীতিকে আলোকিত করার কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, রাজনীতিকে পরিশোধিত করতে হলে, মুক্তিযুদ্ধের পিছু হটে-যাওয়া মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হলে, ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে এবং এরকম আরো অনেক করণীয় সম্পন্ন করতে হলে সাংস্কৃতিক জাগরণের কোনো বিকল্প নেই। যতীন স্যারের আস্থা ছিল জনগণের সংস্কৃতিতে। তিনি সংস্কৃতির দীপশিখা দিয়ে গণচেতনার জাগরণ ঘটাতে চেয়েছেন, নগর ও গ্রামের সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা দূর করে একটি অখণ্ড, আনন্দময় গণসংস্কৃতি গড়ে তুলতে চেয়েছেন। তিনি তার বেশিরভাগ লেখায় ঐতিহ্যচিন্তার শস্যগুলোকে কুড়িয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। তিনি মনে করেন, ঐতিহ্যবাহী ও লোকায়ত জীবনদর্শন, তার বিদ্রোহী ও প্রতিবাদী চেতনা, তার অন্তর্গত যুক্তিশীলতা আমাদের সাংস্কৃতিক পুনর্গঠনে খুবই মূল্যবান সামগ্রী।
ধর্ম বিষয়ে যতীন স্যারের কিছু ভাবনা এ সময়ের পটভূমিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, ধর্মের ব্যাপারে সাধারণভাবে আমাদের সেক্যুলার রাজনীতিক এবং প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা ও অসচেতনতা রয়েছে। আমাদের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীরা ধর্মের পর্যালোচনার দায়িত্ব না নেওয়ায় তার সুযোগ গ্রহণ করছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রবক্তারা। ধর্মের নানারকম মনগড়া ব্যাখ্যা প্রচার করে তারা সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে। সাদা চোখেই দেখা যায়, আমাদের প্রগতিশীল মহলে ধর্ম সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এবং নির্লিপ্ততা যথেষ্ট রয়েছে। অন্তত ধর্মের দিকে চোখ বুঁজে থেকে তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে চাওয়া প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের কাছে কোনোমতেই কাম্য নয়।
যতীন স্যারের জীবন, কর্ম ও লেখালেখিতে একটা সামাজিক দায়বোধের ব্যাপার আছে। বিশেষ করে লেখালেখি তার কাছে ‘চেতনা জাগানোর কাজ, মানুষের দৃষ্টি এবং ভাষাকে স্বচ্ছ করে তোলার কাজ, নীরবতার সংস্কৃতিকে ভেঙে দেওয়ার কাজ। ফলে তার নিজের দৃষ্টি এবং ভাষাও স্বচ্ছ। তথ্য এবং যুক্তির ফাঁকে ফাঁকে তিনি মাঝে মাঝে কিছুটা কথামৃতে-র ধরনে রূপকধর্মী গল্প কিংবা প্রবাদ উদ্ধৃত করেন’ যা তার বক্তব্যকে আরো হৃদয়গ্রাহী করে তোলে।
স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ড. এনামুল হক স্বর্ণপদক, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পরস্কার, প্রথম আলো বর্ষসেরা বই পুরস্কার, মনিরউদ্দিন ইউসুফ স্মৃতিপদক, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব সাহিত্যপদক, আলতাব আলী হাসু পুরস্কারসহ বেশকিছু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তারপরও মনে হয়, তিনি যেন জাতীয় পরিমণ্ডলে অনেকটা উপেক্ষিতই থেকে গেলেন! তিনি অসংখ্য ফরমাল অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়েছেন। পত্রপত্রিকায় কলাম লিখেছেন। তার বক্তৃতা কিংবা কলামগুলো সমকালীন হয়েও চিরকালীন। চিন্তার স্বাতন্ত্র্য এবং মৌলিকত্ব খুঁজে পাওয়া যায় তার প্রতিটি লেখা ও বক্তৃতায়। কিন্তু তার অবদান ও যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়ন হয়েছে বলে মনে হয় না। এমনকি তার বিভিন্ন বই নিয়ে, তার লেখালেখি নিয়েও তেমন ভালো কোনো আলোচনা হয়নি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে, লেখক-সমালোচক-গবেষকদের কাছে তিনি কেন জানি ব্রাত্যই রয়ে গেলেন!
ময়মনসিংহের আরেক কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব গোলাম সামদানী কোরায়শী সম্পর্কে যতীন স্যার লিখেছিলেন, ‘তার জীবন ভাবনা তথা জীবন দর্শন ও ব্যক্তি স্বরূপকে কোনও বইয়ে বা লেখায় পুরোপুরি খুঁজে পাওয়া যাবে না। এজন্য প্রয়োজন ছিল একজন বসওয়েলের। গোলাম সামদানীর জীবৎকালে আমরা কেউই তার বসওয়েলের দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। যদি করতাম তাহলে বাঙালি পাঠক একজন এদেশীয় জনসনকে পেয়ে যেত। নানা আড্ডায় ও বৈঠকে তিনি যে সব সিরিয়াস কথা বলেছেন কিংবা হালকা চুটকি ঝেড়েছেন অথবা নানা ঘটনায় নানান ধরনের প্রতিক্রিয়ার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, সেসবের বিবরণ রেকর্ড করা থাকলে বর্তমান প্রজন্মের মানুষ একজন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের মডেল পেতে পারত।’
আমি নিজে যতীন স্যারকে যতটুকু দেখেছি, চিনেছি, তাতে মনে হয়েছে, তার (যতীন স্যার) সম্পর্কে উল্লিখিত মন্তব্যটি আরও বেশি প্রযোজ্য! কিন্তু আমরা কেউই সেই দায়িত্বটি পালন করিনি! এ জন্য ভীষণ আফসোস হয়!
ব্যক্তিগতভাবে যতীন স্যারকে আমি মিস করি। ভীষণ রকম ভাবে মিস করি। জ্ঞানী-পণ্ডিত, সৎ, আদর্শনিষ্ঠ, নির্লোভ, নিরহংকার, যাপিত জীবন নিয়ে তৃপ্ত এমন উচ্ছ্বল-প্রাণরসে টইটম্বুর মানুষ আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি।
আমার দেখা অন্যতম সেরা বাঙালি ব্যক্তিত্ব যতীন স্যারের ৮৩তম জন্মদিনে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা! আমার হৃদয়ের সবটুকু শ্রদ্ধা তার জন্য। স্যার শতায়ু হোন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)