চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ময়মনসিংহে চাষী পর্যায়ে মাছের বাজার

মাছ উৎপাদনে পৃথিবীর চার নম্বর আসনটি বাংলাদেশের। এ অর্জনের প্রমাণ দেয় ময়মনসিংহের গত বিশ বছরের মাছ চাষ বিপ্লব। এখানে অসংখ্য চাষী তৈরি হলেও মাছ বাজারজাত করার প্রশ্নে ক’দিন আগেও বাজার আর পাইকারদের মুখাপেক্ষী ছিলেন চাষীরা।

এই বঞ্চনা কাটিয়ে উঠতেই মাছচাষী হাশেম ব্যাপারী বছরখানেক আগে বাজার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। হাশেম জানান, এর আগে অনেক দূরের বাজারে মাছ নিয়ে যেতে পরিবহনখাতে অনেক ব্যয় হতো। শুধু তাই নয়, এত দূরে নিয়ে যেতে যেতে মাছ নষ্ট হয়ে যেত। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা চাষীরা যে দামে বিক্রি করতেন তার চেয়ে অনেক বেশি টাকার লাভ করত।

এ কারণেই চাষীদের সুবিধার্থে হাশেম বাজার গড়ার উদ্যোগ নেন।

প্রতিদিন দুপুর থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় বাজারে সমাগম ঘটছে চার উপজেলার মাছচাষীর। বাজারে আসা মাছচাষীরা জানান, আগে চাষীদের মাছ বিক্রির জন্য পাইকারদের কাছে যেতে হতো। এখন পাইকাররাই তাদের কাছে আসে। এখন নিজেরাই সরাসরি বাজারে বিক্রি করতে পারায় মাছের ভালো দাম পাচ্ছেন তারা।

অন্যদিকে ক্রেতারাও লাভবান হচ্ছেন এই বাজার থেকে। তারা জানান, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনতে পারায় তারা কম দামে তাজা মাছ নিতে পারছেন। স্থানীয় বাজার হওয়াতে আনুষঙ্গিক সব খরচই কমে যায় বলে মনে করেন মাছ চাষ উদ্যোক্তা নূরুল হক।

বাজারে প্রতিদিন ভীড় জমছে মাছ পাইকার ও ব্যবসায়ীদের। বলছেন, এই চাষী বাজার গড়ে ওঠায় তারাও লাভবান। তাদের মতে, এই বাজারের ফলে ক্রেতা-বিক্রেতা দু’জনেরই উপকার হচ্ছে। বেশিক্ষণ বসেও থাকতে হচ্ছে না। অল্প সময়েই মাছ বিক্রি করে বিক্রেতারা চলে যেতে পারেন।

বাজারকে ঘিরে বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে অনেকের। বাজারে মাছের আড়তের পাশাপাশি একটি বরফের কলও দিয়েছেন বলে জানান এক মাছ ব্যবসায়ী।

তবে ক্রেতা-বিক্রেতার সুবিধার জন্য বাজারের অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি উদ্যোক্তাদের। তারা জানান, বাজারের জন্য নিজস্ব পানির ব্যবস্থা নেই, বসার ঘর নেই। বৃষ্টিতে ভিজেই মাছ বিক্রি করতে হয় তাদের। নর্দমার ব্যবস্থা ও বাজারের মেঝে পাকা হলে এবং গাড়ি আসার ব্যবস্থা হলে সবারই খুব সুবিধা হবে বলে জানান ক্রেতা-বিক্রেতা ও উদ্যোক্তারা।

এই বাজারের মাধ্যমে চাষীদের স্বপ্ন পূরণের উদ্যোগ নিতে হয়েছে চাষীদেরকেই। চাষী উৎপাদক হয়ে নিজের ক্ষমতায়ন বা আর্থিকভাবে লাভবান কোনোটাই হতে পারতেন না। এটা সম্ভব হয়েছে বাজারের মাধ্যমে। চাষীদের এই বাজারের সম্প্রসারণ হতে পারে পুরো বাংলাদেশ জুড়ে। তাদের আশা, এই উদ্যোগ এগিয়ে নিতে সাহায্যের হাত বাড়াবে সরকার ও প্রশাসন।