চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

মোস্তাফিজ-রাব্বি ম্যাজিকে রাজশাহীর নাটকীয় জয়

রেকর্ড গড়া হল না চিটাগংয়ের

চট্টগ্রাম থেকে: বিপিএলে রেকর্ড রান তাড়ার মিশনে খুব কাছ থেকে ঘুরে এলো চিটাগং ভাইকিংস। দারুণ ব্যাটিংয়ের পরও তাদের লড়াই দেখেনি সফলতার মুখ, শেষ দুই ওভারে কামরুল ইসলাম রাব্বি ও মোস্তাফিজুর রহমান জ্বলে ওঠায়। স্বাগতিক দলকে ৭ রানে হারিয়ে সেরা চারের আশা ভালভাবেই বাঁচিয়ে রাখল মেহেদী হাসান মিরাজের রাজশাহী কিংস। ১০ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১০। শেষের দুটি ম্যাচ জিতলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে প্লে-অফ রাউন্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: রাজশাহী কিংস-১৯৮/৫, চিটাগং ভাইকিংস-১৯১/৮

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবার রাতের ম্যাচে ১৯৯ রানের পাহাড় ডিঙানোর খুব কাছে চলে গিয়েছিল চিটাগং। মোহাম্মদ শাহজাদ, ইয়াসির আলি রাব্বি, মুশফিকুর রহিম ও সিকান্দার রাজার দারুণ ব্যাটিং রান তাড়ার সর্বোচ্চটা টপকে জেতার আশা দেখায়। তবে তীরে এসে ডোবে ভাইকিংস-তরী।

শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ২১ রান। হাতে ৫ উইকেট। রাব্বি ৮ রান দিয়ে ওভারের শেষ বলে তুলে নেন নাজিবুল্লাহ জাদরানের উইকেট। ফুল লেন্থের বল উড়িয়ে মারেন এ বাঁহাতি। সীমানা দড়ির খুব কাছ থেকে দারুণ এক ক্যাচ নেন লরি ইভান্স।

মোস্তাফিজের জন্য শেষ ওভারে রেখে যান ১৩ রান। প্রথম বলেই এ পেসার ইয়র্কারে বোল্ড করেন রাজাকে। দুই চার দুই ছক্কায় ১৫ বলে ২৯ রান করেন এ জিম্বাবুইয়ান। দ্বিতীয় বলে রবিউল হক ২ রান নিয়ে ম্যাচে রাখেন চিটাগংকে। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দেন নাঈম হাসানকে। ক্রমেই কঠিন হতে থাকে সমীকরণ।

তিন বলে দরকার পড়ে ১০ রান। লেগবাই থেকে চতুর্থ বলে একটি রান দেন কাটার মাস্টার। পঞ্চম বলে সাজঘরে ফেরান রবিউলকে। আর শেষ বলে আবু জায়েদ রাহি নিতে পারেননি এক রানের বেশি। তাতে ব্যাটিংস্বর্গে নাটকীয়ভাবেই বন্দরনগরীতে ম্যাচ জিতে নেয় পদ্মাপাড়ের দলটি।

ঘরের মাঠে বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত শুরু করে চিটাগং। ২২ বলে ৪৯ রান করে পাওয়ার-প্লে কাজে লাগান ভাইকিংস ওপেনার শাহজাদ। তিনে নামা ইয়াসির ৩৮ বলে করে যান ৫৮। বিপিএলে টানা দুই ফিফটি পেলেন এ তরুণ। ২০ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলা অধিনায়ক মুশফিক আউট হলেও আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন রাজা। কিন্তু তাকে আউট করে শেষটায় সব হিসেবে পাল্টে দেন দুই কিংস পেসার।

চিটাগং জিতলে বিপিএলে রান তাড়ায় হতো নতুন রেকর্ড। ২০১৩ সালে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে রংপুর রাইডার্সের দেয়া ১৯৮ রানের লক্ষ্য ৬ বল হাতে রেখেই টপকায় সিলেট রয়্যালস। রান তাড়ার সেই রেকর্ড ভাঙার সুযোগ সামনে আসে বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে। যদিও শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

চট্টগ্রামে আসাই যেন ভুল হয়েছে চিটাগং ভাইকিংসের! ঘরের মাঠে নিজ দর্শকদের সামনে যেখানে জ্বলে ওঠার কথা, উল্টো বেধড়ক মার খেয়েছেন তাদের বোলাররা। আগের ম্যাচে রংপুর রাইডার্স গড়েছে বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের রেকর্ড, পরের দিন তাদের বিপক্ষে দুইশ ছুঁইছুঁই (১৯৮) সংগ্রহ পায় রাজশাহী।

হারানো জায়গার সঙ্গে ব্যাটিংয়ের শক্তি বাড়াতে উইন্ডিজ থেকে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জনসন চার্লসকে উড়িয়ে আনে রাজশাহী। চিটাগংয়ের বিপক্ষে নামিয়ে দেয়া হয় ওপেনিংয়ে। মুমিনুল হককে বাইরে রাখায় তার সঙ্গী একাদশে ফেরা সৌম্য সরকার।

শুরুটা খারাপ করেননি সৌম্য-চার্লস। পাওয়ার প্লেতে দুজনে মিলে তোলেন ৫০ রান। তারচেয়ে বড় বিষয় আবারও অনেকদিন পর ঝলক দেখা যাচ্ছিল সৌম্যের ব্যাটে।

কিন্তু নামের সুবিচার করতে পারেননি সৌম্য। পাওয়ার প্লের শেষ বলে খালেদ আহমেদকে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন মুশফিকুর রহিমের হাতে। যাওয়ার আগে তার ২০ বলে ৫ চারে ২৬ রানের ইনিংসটি হয়ে রইল আক্ষেপের বিষয়!

সৌম্যের থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু রাজশাহীকে সেই আক্ষেপে পুড়তে দেননি চার্লস ও এবারের বিপিএলে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান লরি ইভান্স। দুজনে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তুলেছেন ৭০ রান।

২৯ বলে ৩৬ করে ইভান্স ফিরলেও প্রথম ম্যাচেই ফিফটি তুলে নিয়েছেন চার্লস। আবু জায়েদ রাহির বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ার আগে ৪৩ বলে খেলেছেন ৫৫ রানের ইনিংস, যাতে ৫ চারের সঙ্গে ছক্কার মার ছিল ২টি।

শেষদিকে ক্রিস্টিয়ান জোঙ্কারের ১৭ বলে ৩৭ ও রায়ান টেন ডেসকাটের ১২ বলে ২৭ রানে জেগেছিল দুইশোর বেশি সংগ্রহ পাওয়ার সম্ভাবনা। দুইশর কাটা পেরোতে না পারলেও জয়ের ঠিকানা ঠিকই পেয়েছে তারা। বিপিএল ইতিহাসে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়ার ম্যাচ বিফলে যায়নি মিরাজদের।