শেষপর্যন্ত আশঙ্কার চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিলো মোস্তাফিজুর রহমানের চোট। আফগানিস্তান সিরিজ থেকেই ছিটকে গেছেন বাঁহাতি পেসার। আইপিএল থেকে বয়ে নিয়ে আসা পায়ের ইনজুরি সারতে সময় লাগবে দু-তিন সপ্তাহ। জুনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজে উড়াল দেবে বাংলাদেশ দল। প্রত্যাশা, সেখানে ফিট ফিজকে পাওয়ার।
আইপিএল খেলতে যেয়ে আগেও চোট নিয়ে ফিরেছেন মোস্তাফিজ। সেই ধাক্কা দুবছরেও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ২০১৬ সালে হায়দরাবাদকে চ্যাম্পিয়ন করিয়ে এসে চোটে পড়েছিলেন। আইপিএলের পরপরই সাসেক্সে খেলার সময় কাঁধের চোট মারাত্মক আকার নেয় তার। তখন অস্ত্রোপচার করাতে হয়। টাইগার পেসার সেই চোট কাটিয়ে চেনারূপে ফিরতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন এখনও। এবার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে খেলে নতুন করে বয়ে আনলেন পায়ের চোট।
যে চোটে পড়েছেন
বাঁ-পায়ের বুড়ো আঙুলে চোট পেয়েছেন মোস্তাফিজ।
যেদিন, যেভাবে চোটে পড়লেন
২০ মে, প্লে-অফের টিকিট পেতে দিল্লির বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে নামে মুম্বাই। টানা ৬ ম্যাচ খেলে একাদশের বাইরে ছিটকে যাওয়া মোস্তাফিজ ডাক পেয়েছিলেন সেদিন। ম্যাচে উইকেটের দেখা পাননি টাইগার পেসার, ৪ ওভারে খরচ ৩৪ রান। সঙ্গে বয়ে আনেন চোট।
ওই ম্যাচে মোস্তাফিজ বল হাতে পান চতুর্থ ওভারে। প্রথম বলেই উইকেট আসে রানআউটে। ফিজের দুর্দান্ত ওভারটি শেষ হয় ৩ রান দিয়ে। পরে ষষ্ঠ ওভারে ডাক পান, করেন ৭ রানের ওভার। আবার যখন বল হাতে পেলেন, ইনিংসের ১৫তম ওভার চলে। সেই ওভারেই বিপত্তি।
ফিজ প্রথম বলে ডট করান রিশভ পান্টকে। পরের বলে ছয় হাঁকান এ বাঁহাতি। তৃতীয় বলে সোজা ব্যাটে খেলেছিলেন পান্ট, সেই ড্রাইভটি পা দিয়ে ঠেকাতে যেয়ে আঘাত নিয়ে মাটিতে বসে পড়েন মোস্তাফিজ। স্থির হয়ে যায় টিভিতে চোখ রাখা বাংলাদেশি সমর্থকদের দৃষ্টি! টিভিস্ক্রিনে ফিজের বেদনার্ত মুখ দেখে শুরুতে পরিস্থিতি বেশ জটিল বলেই মনে হচ্ছিল।
ব্যাটসম্যানরা তখন প্রান্ত বদলে ব্যস্ত। আর মোস্তাফিজ ক্রিজের পাশে বসা। সতীর্থরা ছুটে এসেছেন ততক্ষণে। ফিজ জুতা-মোজা খুলে ফেলেন। টাচলাইন থেকে ছুটে আসেন মুম্বাইয়ের ফিজিও। খানিক সেবা-যত্ন চলে। শঙ্কা কাটিয়ে অবশ্য দ্রুতই বোলিং মার্কে ফেরেন মোস্তাফিজ। স্বস্তি ফেরে। পরের তিনটি বল স্বাভাবিক রিদমেই করেন। ১৩ রানের ওভার ছিল।
দলের প্রয়োজনের সময় চার ওভারের কোটাও পূরণ করেন ফিজ। ১৮তম ওভারে আবার বল হাতে পান, ১১ রান দেন। স্পেলের শেষ ওভারে বোলিং করার সময় কোনো অস্বস্তিও লক্ষ্য করা যায়নি। যদিও সেই ম্যাচের ঘটনাই কাল হয়ে দাঁড়াল।
চোটের কথা যেভাবে সামনে আসে
দল প্লে-অফে জায়গা নিতে পারেনি। দিল্লি ম্যাচই শেষ খেলা ছিল মুম্বাইয়ের। ফিজও দেরি করেননি। ২১ মে, পরেরদিন সন্ধ্যায় দেশে ফেরেন। টানা খেলে এলেন, এদিকে জাতীয় দলের ক্যাম্প চলছে, মোস্তাফিজ যোগ দেবেন নাকি কয়েকদিনের ছুটিতে যাবেন সেটি নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইন প্রশ্ন রাখেন খালেদ মাহমুদ সুজন বরাবর। তিনি নিশ্চিত না করতে পারলেও ফিজের বিশ্রামের ইঙ্গিত দেন, ‘সে তো বিশ্রাম ডিজার্ভ করে। কারণ ওখানে ম্যাচ খেলেছে, অনুশীলন করেছে। আমাদের মনে হয় সবাই ভালো টাচে আছে।’
গত শনিবার অনুশীলনে যোগ দেন মোস্তাফিজ। ওয়ার্মআপ করলেও বল হাতে নেননি সেদিন। পরেরদিন সিরিজ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত হেড কোচ কোর্টনি ওয়ালশ জানান, মোস্তাফিজের বাঁ-পায়ের সম্মুখভাগে চোট রয়েছে।
ওয়ালশ সেদিন আফগান সিরিজে ৩ জুনের প্রথম টি-টুয়েন্টির আগেই মোস্তাফিজের পুরোপুরি ফিট হয়ে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদ জানান, ‘ওর (মোস্তাফিজ) পায়ের সম্মুখভাগে সামান্য সমস্যা আছে। শতভাগ ফিট নয়। আইপিএলে পায়ের আঙুলে একটু আঘাত পেয়েছে। গতকাল যখন রিপোর্ট করেছে, শতভাগ ফিট ছিল না। স্বস্তির ব্যাপার, এটা কাঁধের চোট নয়।’ সঙ্গে ফিজকে দুদিনের বিশ্রাম দেয়ার কথা জানান ক্যারিবীয় কিংবদন্তি।
আফগান সিরিজ থেকেই ছিটকে গেলেন
মঙ্গলবার সকালে ভারতের দেরাদুনগামী বিমানে চড়েছে টাইগার দল। সফরের ১০ ঘণ্টা আগে বিসিবি জানায় সিরিজে মোস্তাফিজের না খেলার কথা। বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম সোমবার রাতে জানান, ‘বাঁ-পায়ে এক্স-রে করার পর মোস্তাফিজকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।’
বিসিবির চিকিৎসক যা বলছেন
ভারতগামী বিমানে না ওঠানোর সিদ্ধান্তের পর ফিজকে নিয়ে বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘মোস্তাফিজের বুড়ো আঙুলে সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে। চোট পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। খেললে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তিন সপ্তাহের বিশ্রাম দেয়া হয়েছে তাকে।’
বাংলাদেশের পরের সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সফরে মুস্তাফিজকে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বিসিবির এ চিকিৎসক। আপাতত নিজেকে ঠিকঠাক করে তোলার পুনর্বাসনে কাজ করবেন কাটার মাস্টার।
সংশ্লিষ্টরা যা ভেবেছিলেন
আইপিএলে খেলার মধ্যে থাকায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে পারফর্ম করা সহজ হবে ভেবে মোস্তাফিজকে নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত ছিল বাংলাদেশ। এখন দুশ্চিন্তা কয়েকগুণ বেড়ে গেল।
যেমন ছিল মোস্তাফিজের এবারের আইপিএল
হায়দরাবাদ ছেড়ে দেয়ায় মোস্তাফিজকে দলে ভেড়ায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। নতুন দলে শুরুতে টানা ৬ ম্যাচ খেলার পর একাদশ থেকে ছিটকে যান। প্রত্যাশা মেটাতে না পারার জেরে দীর্ঘ বিরতি। টুর্নামেন্টে নিজেদের শেষ ম্যাচে ডাক পান ফিজ। ছিলেন নিজের ছায়া হয়েই। এলেন চোট নিয়ে। তারকা ঠাসা ইন্ডিয়ান্সরাও প্লে-অফে আসতে পারেনি এবার।
মুম্বাইয়ের ১৪ ম্যাচে ঠিক অর্ধেক খেলার সুযোগ পেয়েছেন মোস্তাফিজ। ৭ ম্যাচে এই বাঁহাতি পেসারের সংগ্রহ ৭ উইকেট। করেছেন মোট ২৭.৩ ওভার। ৩২.৮৫ গড়ে সেরা ২৪ রানে ৩ উইকেট। ইকোনমি আটের উপর, ৮.৩৬!
শুরুটা আস্থা নিয়েই হয়েছিল। প্রথম কয়েক ম্যাচে স্পেলের শুরুর ওভারগুলো দুর্দান্ত করেছিলেন। কিন্তু সেই ম্যাচগুলোতেই আবার শেষের দিকে ডাক পেয়ে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। রান ডিফেন্ডের সময় ১৯তম বা ২০তম ওভার করতে এসে দলকে জয় এনে দিতে পারেননি। তাতে অবশ্য প্রতিপক্ষের কৃতিত্বের সঙ্গে ছিল মোস্তাফিজের সতীর্থ বোলারদের ব্যর্থতাও। বুমরাহ-পান্ডিয়ারা মোস্তাফিজের আগের ওভারগুলোতে বেশি রান দিয়ে চাপ বাড়িয়ে গেছেন, পরে ফিজের ওপর চড়াও চয়ে ম্যাচ হাত করে নিয়েছে প্রতিপক্ষ।