চৌধুরি ফরিদ ও সারওয়ার আজম মানিক: ঘূর্ণিঝড় মোরা’র তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে ৩, রাঙ্গামাটিতে ২ এবং ভোলার মনপুরায় ১ জন মারা গেছেন। এছাড়া ঝড়ে উপকূলের বহু বাড়িঘর ও গাছপালার ক্ষতি হয়েছে।
এর মধ্যে শুধু কক্সবাজারে ২০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় কবলিত বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জরুরী ত্রাণ নিয়ে নৌবাহিনীর জাহাজ ২টি জাহাজ সেন্টমার্টিন ও কুতুবদিয়ার পথে যাচ্ছে। ত্রাণবাহী জাহাজ দু’টির নাম সমুদ্র অভিযান ও খাদেম।
ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে ভিয়েনা সফররত ঢাকার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এর ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী জরুরী ত্রাণ নিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোরা কবলিত এলাকা সেন্টমার্টিন এবং কুতুবদিয়ার উদ্দেশে জাহাজ পাঠানোর নির্দেশ দিলেন।
ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার আগেই সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ তথ্য জানান।
চট্টগ্রাম : এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশেন এবং ফায়ার সার্বিসের সমন্বয়ের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালনের জন্য ‘মোরা ‘ র তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান খুব কম হয়েছে বলে দাবি করে চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন ‘আমরা তৎতপর ছিলাম, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন,চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশেন,এবং ফায়ার সার্বিসের সমন্বয়ে আমরা দায়িত্ব পালন করার কারণে যতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিলো ততটুকু ক্ষয়ক্ষতি এখনো পর্যন্ত হয়নি।
এদিকে চট্রগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়,রাস্তার উপর ঝড়ে পড়ে থাকা গাছ পরিস্কার করে রাস্তা চলাচলের চেষ্টা করছি।বড় কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এখন পর্যন্ত হয়নি। তবে চট্রগ্রামের আনোয়ারা বাঁশখালি এবং কর্ণফুলিতে বড় বড় গাছ পড়েছে।তবে জেলা প্রশাসক এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও ফায়ার সার্বিসের ডিজি সবসময় তদারকি করছে। আমরা এখনো পরিস্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মাঝামাঝি কুতুবদিয়া উপকুলে আঘাত করে দুর্বল হয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় ’মোরা’। ঘূর্ণিঝড় মোরা’র তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে কক্সবাজারে ২০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় কবলিত বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
কক্সবাজারে প্রান হারিয়েছে ২ নারী সহ ৩জন। আহত হয়েছে ৩০ জন। চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী জানান, চকরিয়ায় গাছ চাপা পড়ে রহমত উল্লাহ (৫০) ও সায়রা খাতুন (৫৫) নামের দু’জনের মৃত্যু হয়। রহমত উল্লাহ ডুলাহাজারা পূর্বজুমখালী এলাকার আব্দুল জব্বারের পুত্র এবং সায়রা খাতুন বড় ভেওলা ইউনিয়নের সিকদার পাড়া এলাকার মৃত নুরুল আলমের স্ত্রী। রাতে বাতাসে গাছ ভেঙ্গে বাড়িতে চাপা পড়লে এই দু’জনের মৃত্য হয়। এসব পৃথক ঘটনায় ৩০ জন আহতবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কক্সবাজার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের একটি আশ্রয় কেন্দ্রে এসে ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ে স্টোক করে মরিয়ম বেগম (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি নুনিয়ারছড়া এলাকার বদিউল আলমের স্ত্রী।
কক্সবাজারে ৭ টি ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ রয়েছে ২১ মাঝি মাল্লা। ২০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ ও বিপুল পরিমাণ গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে কক্সবাজারের কয়েকটি এলাকায়। প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের দেয়া হয়েছে ১শ মেট্রিক টন চাল।
ঘুর্নিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে কক্সবাজার কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ২০ হাজার বাড়ী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশপাশি রাস্তা ঘাটের ও ক্ষতি হয় বলে জেলা প্রশাসকের ত্রান শাখা থেকে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশী বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমেই দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দরে মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।