তিনি বার্সেলোনার জার্সিতে ভুরিভুরি শিরোপা জিতেছেন। কিন্তু দু’গাল বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়েছে আর্জেন্টিনাকে কোন বড় শিরোপা এনে দিতে না পারার দুঃখ। রাশিয়া বিশ্বকাপে সেই বেদনা লাঘবের একটা চেষ্টা দেবেন বলে অবসব ভেঙে ফিরেছেন মেসি। কিন্তু তার এক হঠাত নিষেধাজ্ঞায় আর্জেন্টিনার এখন বিশ্বকাপ যাত্রাই শঙ্কার মুখে। মেসির চার ম্যাচের এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অবশ্য ভীষণ ক্ষুব্ধ দেশটির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। তারা মেসিকে ঘিরে হওয়া পুরো প্রক্রিয়াটার সঙ্গে একমত নয় জানিয়ে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আর্জেন্টিনা আশা করছে আপিল করে শাস্তি কিছুটা কমানো যাবে। তাতে দ্রুতই ফিরে পাওয়া যাবে মেসিকে। দলকে রাশিয়ার টিকিট এনে দিতে তখন সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেবেন অধিনায়ক। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সেক্রেটারি হোর্হে মিয়াদস্কি আপিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মিয়াদস্কি ফিফার সিদ্ধান্ত আর সেটির প্রক্রিয়া নিয়ে আর্জেন্টাইন ফেডারেশনের বিস্মিত হওয়ার কথা টেনে বলেছেন, ‘ম্যাচের মাত্র কয়েকঘণ্টা আগে পুরো বিষয়টি যেভাবে করা হয়েছে তাতে আমরা ভীষণ ক্ষুব্ধ। ফিফার শাস্তির বিরুদ্ধে আমরা আপিল করবো।’
অতীতের কিছু উদাহরণ থেকে শাস্তি কমার আশা দেখছে আর্জেন্টিনার ফেডারেশনও। সেইসঙ্গে দলপতির পাশেই থাকছে তারা। পুরো বিষয়টি নিয়ে মেসিও ব্যথিত বলে জানিয়েছে, ‘বিষয়টি নিয়ে মেসি ব্যথিত, আমরাও। বিষয়টা যেভাবে করা হয়েছে সেটির সঙ্গে আমরা কোনভাবেই একমত নই।’
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ যাত্রার স্বপ্নটা মেসিকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছিল। এক ম্যাচ আগেই তার গোলে চিলিকে হারিয়ে টেবিলের তিনে উঠে স্বস্তিতে ছিল এগার্ডো বাউজার দল। বুধবার রাতে বলিভিয়ার কাছে হেরে আবার পাঁচে নেমে গেছে মেসিরা।
ম্যাচে খেলতে পারেননি মেসি। ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার নোটিশ পান তিনি। চিলির ম্যাচে লাইন্সম্যানের সঙ্গে ‘অখেলোয়াড়সুলভ আচরণে’র কারণে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। এই ধাক্কা সামলে নিতে পারেনি আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপে যাওয়ায়ই এখন শঙ্কার মুখে। হাতে মাত্র চার ম্যাচ। শাস্তি না কমলে যার তিনটি খেলতে পারবেন না মেসি।
ঘটনার সূত্রপাত বিশ্বকাপ বাছাইয়ে গত বৃহস্পতিবার চিলির বিপক্ষের ম্যাচে। মেসির বিরুদ্ধে ‘অশ্রাব্য গালি’র অভিযোগ তোলেন লাইন্সম্যান মার্সেলো ফন গাসে। খেলার শেষ সময়ে মেসি তাকে রাগান্বিত কণ্ঠে গালাগালি এবং চিৎকার করেছেন বলে দাবি গাসের। অভিযোগের তীব্রতা আরো বাড়ে ম্যাচ শেষে অফিসিয়ালদের সঙ্গে মেসির হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানানোয়।
পরে আর্জেন্টাইন অধিনায়কের বক্তব্য জানতে চেয়ে দেশটির ফেডারেশনকে নোটিশ পাঠায় ফিফা। শেষ পর্যন্ত অভিযোগের ভিত্তি পাওয়ায় মঙ্গলবার এক বিবৃতির মাধ্যমে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
শুধু নিষিদ্ধই নয়। ৮১১১ ইউএস ডলার জরিমানাও করা হয়েছে মেসিকে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বলিভিয়া ম্যাচ খেলা হলো না। সামনে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে উরুগুয়ে, ভেনেজুয়েলা এবং পেরুর বিপক্ষেও খেলা হবে না যদি শাস্তি ছোট হয়ে না আসে। পাঁচবারের বর্ষসেরা তারকাকে ছাড়া আর্জেন্টিনা রাশিয়ার টিকিট পাবে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন!