জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২০-এ শ্রেষ্ঠ গায়িকার পুরস্কার উঠেছে ‘চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ ২০০৯ এর চ্যাম্পিয়ন সংগীতশিল্পী কোনালের হাতে। সুপারস্টার শাকিব খান প্রযোজিত এসকে ফিল্মস-এর ‘বীর’ ছবির ‘ভালোবাসার মানুষ তুমি’ গানটিতে কণ্ঠ দেয়ার জন্য জনপ্রিয় এই শিল্পীর হাতে ওঠেছে দেশের সবচেয়ে মূল্যবান এই স্বীকৃতি। ২৩ মার্চ দুপুরে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী শিল্পীদের পুরস্কার বিতরণ করেন। পুরস্কারটি গ্রহণের পর মঙ্গলবার দুপুরে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় কোনালের..
প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করলেন। আগের রাতে এই উচ্ছ্বাসের কারণে ঠিকমতো ঘুম হয়েছে?
হা হা হা . . . সত্যি বলতে সেভাবে ঘুম হয়নি। খুব সকালে উঠেই তৈরি হয়ে পুরস্কার নিতে গিয়েছি। ভিতরে ভিতরে ভীষণ নার্ভাস ছিলাম, আনন্দিতও ছিলাম।
শিল্পী (গায়িকা) হিসেবে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেলেন। কেমন লাগছে?
জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পাওয়াটা একজন শিল্পীর জন্য বিশাল সম্মানজনক একটি অর্জন। ২০০৯ সালে ‘চ্যানেল আই-সেরা কণ্ঠ’র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। যদিও ভালোবাসার প্রতিদান দেয়া যায় না তবুও এখন মন হচ্ছে, মানুষের ভালোবাসার মূল্যায়ন হচ্ছে এই জাতীয় স্বীকৃতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সম্মানিত জুরি বোর্ড থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমাকে এই স্বীকৃতির জন্য মনোনীত করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার বাবাকে প্রচণ্ড মিস করছি। পুরস্কার নিতে মা ও ছোট ভাই আমার সঙ্গে গিয়েছিলেন। মেডেলটা হাতে পেয়ে যখন মাকে পরিয়েছি, উনি খুশিতে কাঁদছিলেন। শুধু এটুকু বলেছেন, আমার মা হিসেবে তিনি গর্বিত।
এর আগে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। এই পুরস্কার নেয়ার সময় ভেতরে ভেতরে কেমন অনুভব করছিলেন?
আমি আসলে মরুভূমির দেশ (কুয়েত) থেকে আসা একটি মেয়ে, প্রবাসী বাঙালি। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ওখানে স্থায়ীভাবে ছিলাম। ওখানে লাখ লাখ প্রবাসী বাঙালি যারা আছেন, আমার হাতের এই পুরস্কারের কারণে তাদের স্বপ্ন সত্যি করার সাহসটা আরও বাড়িয়ে দিতে পেরেছি। বিদেশে বসে বসে অনেকে কল্পনা করেন দেশের মানুষের জন্য বাংলা গান নিয়ে কাজ করবেন। সেই স্বপ্নট হয়তো উপযুক্ত প্ল্যাটফর্মের কারণে থেমে যায়। কিন্তু আমার মনে হয় একযুগের বেশি সময় ধরে গানের কারণে আমি মানুষের যে ভালোবাসা পাচ্ছি এবং আজ যে রাষ্ট্রীয় সম্মান পেলাম এটা অনেক প্রবাসী বাঙালির স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাহস যোগাবে, অনুপ্রাণিত করবে।
‘বীর’-এ যখন গানটির কণ্ঠ দিয়েছিলেন ভেবেছিলেন এমন সম্মাননা আসবে?
গানটি করলে কি পাবো না কি পাবো না এসব কিছুই মাথায় ছিল না, যে কোনো গান গাইবার সময় এসব থাকেও না। শাকিব ভাইয়া আমাকে গানটি গাইতে বলেছিলেন। আমি আমার মতো করে গেয়েছি। ‘বীর’ এসকে ফিল্মস এর ছবি। শাকিব ভাইয়া এই ছবির প্রযোজক। গানটিকে শাকিব ভাইয়া ও বুবলী ঠোঁট মিলিয়ে পারফর্ম করেছেন, আরও প্রাণবন্ত করেছেন। শাকিব ভাইয়ার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। উনি সবসময় আমাকে নিজের বোনের মতো স্নেহ করেন। তিনি আমার প্রতি ভীষণ আস্থাশীল। আজকে আমার এই প্রাপ্তিতে পরিচালক, মিউজিক ডিরেক্টর, গীতিকার, সুরকার, সহশিল্পীসহ প্রত্যেকের অবদান আছে। তবে আমি বলবো শাকিব ভাইয়ার অবদান একটু বেশি। পুরস্কার ঘোষণা হওয়ার পর ভাইয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি পাইনি তাতে কিছু মনে করিনি। আমার প্রযোজিত ছবিতে আমার বোন পুরস্কার পেয়েছে এতেই আমার আনন্দ কোনো অংশে কম নয়।’ তার এমন কথা ও উৎসাহ আমাকে ইমোশনাল করেছে।
পুরস্কার ঘোষণার পরে নানান জন নানা কথা বলছিলেন! মানসিকভাবে খারাপ লাগছিল?
আমার ভালোবাসার মানুষ এবং সাহস যোগানোর মানুষ এতো বেশি যে, তারা আমাকে অন্যকিছু নিয়ে মাথা ঘামাতেই দেয় না। কারণ, ভালোবাসার শক্তি হচ্ছে অশুভ শক্তির চেয়ে শক্তিশালী। আমার দর্শক, সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী থেকে শাকিব ভাইয়া সবাই আমাকে এতো পরিমাণে সাপোর্ট দিয়েছেন, অন্য দিকে মন ডাইভার্ট করার পরিস্থিতি আসেনি। তাছাড়া আমি আমার আসল কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে অন্যকিছু নিয়ে ভাবার সময় পাইনা। এই পুরস্কার আগামীর পথচলতে নিশ্চয়ই আরও বেশি অনুপ্রেরণা যোগাবে! আমাকে যতটা আনন্দ উৎসাহ দিয়েছে তেমনি আরও বেশি দায়িত্ববান হওয়ার তাগিদ দিয়েছে। আরও বেশি ভালো ভালো কাজ করার দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে দিয়েছে।