চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে গত বছরের তুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৬৩.৬০% এবং প্রাণহানি বেড়েছে ৭১.৩৫%। গত বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ১০১১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০২৬ জন নিহত হয়েছিল।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের জরিপে পাওয়া এ তথ্য খুবই ভয়াবহ। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে, আর এতে যেভাবে তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে, তা নিয়ে সচেতন মহলের মধ্যে ক্রমেই ক্ষোভ এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। কোনোভাবেই যেন এ দুর্ঘটনার লাগাম টানা যাচ্ছে না।
বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫ লাখ মোটরসাইকেল চলছে। শুধু রাজধানীতেই চলছে ১২ লাখের বেশি। মানসম্মত গণপরিবহনের অভাব এবং যানজটের কারণে মোটরসাইকেলের ব্যবহার অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। মোটরসাইকেল বাড়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত চালকের সংখ্যা সে হারে বাড়ছে না। চালক সবার কাছে একটি করে লাইসেন্স থাকলেও তা আসলে কতোটা কাজে লাগছে, তার উত্তর হয়তো মৃত্যু আর দুর্ঘটনার সংখ্যা থেকে বোঝা যাচ্ছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা মহাসড়কে বেশি ঘটছে। অধিকাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ ও বাসের ধাক্কা, চাপা ও মুখোমুখি সংঘর্ষে। তাছাড়া মোটরসাইকেল চালকদের অধিকাংশই কিশোর-যুবক। তরুণরা বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে।
নানা আলোচিত ঘটনার পরে দেশের সড়কে কড়াকড়ি ও নতুন নতুন আইন এলেও খুব একটা পরিবর্তন যে হচ্ছে না, তা প্রতি মাসে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা দেখের বোঝা যাচ্ছে। অদক্ষ চালক, সড়কের বেহাল অবস্থা, সড়কে বেপরোয়া যান চালানো, ওভারটেক করাসহ নানা কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়ে থাকেন বিভিন্ন সময়ে।
হেলমেট পরিধান করা, ২ জনের বেশি মোটরসাইকেলে না ওঠাসহ নানা নিয়ম থাকলেও সড়ক-মহাসড়কে অহরহ নিয়ম ভঙ্গ করে চলছে মোটরসাইকেল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নানা তৎপরতা থাকলেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আর দুর্ঘটনার শিকার হওয়া মোটরসাইকেল চালকদের অধিকাংশই তরুণ। সড়ক নিরাপত্তায় কাজ করা বিশেষজ্ঞ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ জনগণসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া খুবই জরুরি। তা না হলে গরীব-মধ্যবিত্তের নাগালে থাকা মোটরসাইকেলকে মৃত্যুযান হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে অবস্থা বিবেচনায়।