চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘মৃত্যুভয়’ কাটিয়ে দুদকে মুসা বিন শমসের

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মুসা বিন শমসেরকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

বেলা ১১টায় তার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

এর আগে সকালে দুদকে হাজির হন আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। ৮টি বিলাশবহুল গাড়ির নিরাপত্তাবহর নিয়ে দুদকের মূল ফটকে আসেন তিনি। তবে ফটক বন্ধ থাকায় গাড়ি ও কয়েক ডজন দেহরক্ষীকে বাইরে রেখেই জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন মুসা।

গত ১৩ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা থাকলেও এর একদিন আগেই তিনি ‘ডেথ ফোবিয়া’সহ একাধিক রোগ দেখিয়ে সময়ের আবেদন জানান।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেছিলেন, ‘তার চাহিদা অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিন মাস পেছানো সম্ভব নয়। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দুদকে হাজির হতে হবে’।

এরপর ২৮ জানুয়ারি হাজির হতে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা তাকে নোটিশ পাঠান।সুইস ব্যাংকে অর্থ নিয়ে তদন্তের জন্য গত ৪ জানুয়ারি ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরকে দ্বিতীয়বারের মতো তলব করে দুদক।

দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে তাকে ১৩ জানুয়ারি বেলা ১১টায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। এ নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি সময়ের আবেদন জানান। এ আবেদন আমলে না নিয়ে দুদক ২৮ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার সময় বেধে দেয়।

এর আগে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর মুসাকে প্রথমবার জিজ্ঞাসাবাদ করে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা দুদক। ওই জিজ্ঞাসাবাদে সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার অর্থ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এরপর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ১৯ মে মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে দুদক।

এ নোটিশের প্রেক্ষিতে ৭ জুন দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন তিনি। সম্পদ বিবরণীতেও তিনি সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি প্রায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে) জব্দ অবস্থায় থাকার কথা উল্লেখ করেন। সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, মিসর, সিরিয়া ও পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের সরকারি প্রতিরক্ষা ক্রয়সংক্রান্ত পাওনা অর্থই সুইস ব্যাংকের মুসার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে।

সুইস ব্যাংকে ৯০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের (বাংলাদেশি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) অলঙ্কার জমার তথ্যও দেন তিনি। এছাড়া দেশে তার সম্পদের মধ্যে গুলশান ও বনানীতে দু’টি বাড়ি, সাভার ও গাজীপুরে এক হাজার ২০০ বিঘা জমির কথাও সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ রয়েছে।

২০১৪ সালের জুন মাসে ‘বিজনেস এশিয়া’ নামের একটি সাময়িকীর ঈদসংখ্যায় মুসাকে নিয়ে প্রকাশিত প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের সূত্র ধরে গত বছরের ৩ নভেম্বর কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে মুসার সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ওই সাময়িকীতে এই ব্যবসায়ীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তাঁর জীবনযাত্রা, আর্থিক সামর্থ্য ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করা হয়। ২০১৪ সালের শেষের দিকে মুসার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক।

২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর দুদক প্রথম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই জিজ্ঞাসাবাদে মুসা হীরার জুতা থেকে শুরু করে আপাদমস্তক মূল্যবান অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন। সঙ্গে ছিল নারী-পুরুষের অর্ধ শতাধিক এক দেহরক্ষী বহর।