বৃক্ষরাজির শাখায়িত পল্লবে ফোটা ফুলের বাহারী রঙ-বর্ণ-গন্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশকে দিয়েছে এক মায়াময় রূপ।
যে রূপে মুগ্ধ হয়ে কবি কবিতা লিখেছেন, চিত্রকার তার রঙ তুলির ছোঁয়ায় এঁকেছেন নানা প্রতিচ্ছবি, আলোকচিত্রী ধারণ করেছেন তার ক্যামেরার ফ্রেমে আর প্রকৃতির প্রেমিকদের মন ঘুরে বেড়িয়েছেন দিগন্তের শেষ সীমায়।
সেই দিগন্ত জুড়ে মায়াময় সবুজ প্রান্তরের অনাবিল ঘাস, মাটির গন্ধ, পাখির কলতান, বহমান নদী ও ঝর্ণার স্রোতধারার মাঝে আমরা প্রতিনিয়ত খুঁজে পাই অফুরন্ত জীবনী শক্তি। এ প্রকৃতির অফুরন্ত সৌন্দর্য ভাণ্ডারের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে ফুল।
ফুলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বিশ্বজনীন। ফুল ছোট-বড়, ধর্ম-গোত্র-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের কাছে এ এক অনন্য পবিত্র স্বর্গীয় উপাদান। বিশ্বের সকল ভাষা-ভাষী, সকল শ্রেণি পেশার মানুষ তাদের সকল প্রকার শুভ ও পবিত্রতার কাজে ফুলকে বেছে নিয়েছে অতি আপন নিয়মে। ফুলের উপস্থিতি ব্যতীত কোনো অনুষ্ঠানই যেনো সম্পূর্ণ হয় না।
আমাদের দেশের ঋতু বৈচিত্র, মাটি, আবহাওয়া, জলবায়ু, ভূমি, শ্রেণিবিন্যাস, জল-স্থলে যেখানেই চোখ মেলি, সেখানেই বারো মাস দেখতে পাওয়া যায় নানান রঙ গন্ধ সুবাসের কতোইনা ফুলের সমাহার।
ফুল গবেষকদের মতে, আমাদের দেশে প্রায় পাঁচ হাজার প্রজাতির ফুল ফুটে। এ বিপুল সমাহারের মাঝ থেকে আমরা কোনো কোনো ফুলকে একটু বেশি কদর করি, কোনো কোনো ফুলকে একটু কম, আবার আজও কোনো কোনো ফুলকে তেমন মূল্যায়িত করা হয়নি। যাকে আমরা বুনো ফুল হিসেবে আখ্যায়িত করি।
এরই মাঝে আবার অনেক বিদেশী ফুল ইতোমধ্যে আমাদের দেশে স্থান করে নিয়েছে। আকর্ষণীয় রঙ-রূপ-গন্ধ ও বৈশিষ্ট্যগত ভিন্নতার জন্য কিছু ফুলের কদর বেশি।
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ফুটেছে নানান ধরণের ফুল। বিভিন্ন ধরণের এবং বাহারি রঙের শতশত ফুল ভরিয়ে দিচ্ছে ক্যাম্পাসের সকলের মন। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ গাছও বেড়ে উঠছে এই ক্যাম্পাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগেট, মসজিদ সংলগ্ন রাস্তা, ভিসির বাংলো, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, মেইন গেটসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত রাস্তার পাশে রয়েছে বাহারি সব ফুল। এই সব ফুল দেখতে বাইরে থেকে অনেক মানুষ আসছে এবং তারা ফুলের সাথে ছবি তুলতেও ভুল করছে না।
বালুময় এই ভূমিতে ফুল ফোটানোর মতো অসাধ্য এই কাজটি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. খোন্দকার মো. নাসিরউদ্দিন। শত ব্যস্ততার মাঝেও যার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে বিশাল এই সবুজের সমারোহ।
৫৫ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুইটি বাবলা গাছ ও কয়েকটি খেজুর গাছ ব্যতিত চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো গাছ ছিল না। কিন্তু এরই মধ্যে ক্যাম্পাসে বেশ কিছু গাছ বেড়ে উঠেছে। গাছ না হওয়ার প্রধান কারণ, কৃষি জমিতে বালু ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে।
তাই সবার বিশ্বাস ছিল বালুর উপর গাছপালা লাগানো খুব একটা ভালো ফল বয়ে আনবে না। এর আগে ২০১৩ সালেও এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো, যার ফলাফল শূন্য।
এখানে বনায়ন সৃষ্টি অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল, যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালুর চার বছরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বনায়ন সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর দুই পাশে ওষধি গাছ, ফলদ বৃক্ষ যেমন আম, খেজুর, নারিকেল গাছ ও বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ রয়েছে।