টেস্টে তিন হাজার রান পেরিয়ে গেছেন। হায়দরাবাদে খেলছেন সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারের ৫২তম ম্যাচ। রান তোলার গড় ৩৩-এর ঘরে। কিন্তু ভারতকে পেলে যেনো অন্যভাবে জ্বলে ওঠেন মুশফিকুর রহিম। প্রিয় এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টেস্টে তার গড়টাও তাই অন্যসব প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো। রোববার দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে সেটারই ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন টাইগার অধিনায়ক।
মুশফিক যে মাপের ব্যাটসম্যান সেটা বোঝাতে ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানে রান তোলার গড়ের ঘরটি মোটেই যথেষ্ট নয়! বাংলাদেশের মিডল অর্ডার সামলাতে তিনি কিভাবে আত্মনিবেদন করে যাচ্ছেন সেটার বেশিরভাগটাই পরিসংখ্যানে লেখা থাকে না। যা লেখা থাকে সেটি তাই মুশফিককে বুঝতে যথেষ্টও নয়।
এই যেমন ভারতের বিপক্ষে আগের পাঁচ ইনিংসে প্রায় ৪৭ গড়ে রান তুলেছেন। সেটি কেবল টেস্টের সব প্রতিপক্ষের চেয়ে ভারতের বিপক্ষে সেরাটাই বোঝাবে। রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে দুর্দান্ত যে সেঞ্চুরিটি করলেন সেটি সম্পর্কে জানতেও এক সময় পরিসংখ্যানের দ্বারস্থই হতে হবে। যেখানে লেখা থাকবে না বিপদের সময় নেমে কতটা বুকচিতিয়ে লড়েছেন। শেষ পর্যন্ত ১২৭ রানে থেমেছেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে ফেরার সময়। উমেশ যাদবের বলে ফ্লিক করে এসেছে ২৩৪ বলের শতকটি। ভারতের বিপক্ষে ৬ ইনিংসে তার গড়টা এখন ৬২.৮০!
ভারতের বিপক্ষে মুশফিকের এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। সবমিলিয়ে টেস্টে পঞ্চম। দেশটির বিপক্ষে বাংলাদেশিদের মধ্যে আর কারো দুটি সেঞ্চুরি নেই। কোহলির দলের বিপক্ষে মুশফিকের আগের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল ১০১ রানের। অন্যদিকে টেস্টে বাংলাদেশিদের মধ্যে সেঞ্চুরিতে আশরাফুল (৬) ও তামিম ইকবালই (৮) এখন কেবল তার থেকে এগিয়ে থাকলেন।
মুশফিকের পাঁচটি সেঞ্চুরিতে অন্য একটি ভিন্নতাও থাকছে। তার ম্যাজিক ফিগারগুলি পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন দেশে। ভারতের বিপক্ষেই ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটি করেছিলেন চট্টগ্রামে। পরে বাংলাদেশকে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এনে দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায়। তৃতীয় শতকটি ওয়েস্ট ইন্ডিজে। আর হায়দরাবাদের আগে ওয়েলিংটনে এসেছিল ১৫৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি।
ওয়েলিংটনের পর হায়দরাবাদ। টানা দুই টেস্টে শতক। তৃতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিকও এখন অনন্য এই উচ্চতায়। আগের দুইজন তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক। তামিম ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবং ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলন। মুমিনুল ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েন।
অবশ্য ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশিদের মধ্যে সেরা ইনিংসটি এখনো মোহাম্মদ আশরাফুলের দখলে। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম টেস্টে অপরাজিত ১৫৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন অ্যাশ। এরপর ২০১০ সালে ঢাকা টেস্টে তামিমের ব্যাট থেকে এসেছিল ১৫১ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। তিনে থাকা আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ইনিংসটি আবার অনেক কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। ২০০০ সালের নভেম্বরে ঢাকায় আমিনুলের অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরিটি ছিল বাংলাদেশেরই টেস্ট অভিষেক ম্যাচে।