চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ ও প্রাসঙ্গিকতা

এপিঠ
আগে চোখে পড়েনি যদিও, একটি অনলাইন গণমাধ্যম পরিবেশিত সংবাদ থেকে আজই জানতে পারলাম যে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রিতা দেওয়ান নামের একজন বাউল শিল্পীর বিরুদ্ধে ঢাকা বারের একজন উকিল আর একজন অভিনেতা ও পরিচালক যথাক্রমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পেনাল কোডের বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করেছেন।

এ বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে সংবাদ মাধ্যম থেকে আমরা আরও জানতে পারি যে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আগধল্যা গ্রামের শরিয়ত সরকার নামের একজন বাউল শিল্পীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। ৯ জানুয়ারি তাকে ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে এবং তিনি নিম্ন ও উচ্চ আদালত থেকে এখনও জামিন পাননি। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার ধামরাই উপজেলার রৌহাট্রেক এলাকায় এক অনুষ্ঠানে শরিয়ত সরকার বলেন যে ইসলামে কোথাও গানবাজনা হারাম করা হয়নি; ২৮ ডিসেম্বর ইউটিউবে তার এ বক্তব্য শুনে তার গ্রামের মাওলানা ফরিদুল ইসলাম ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।

গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী গত ২৯ জুলাই ২০১৬ তারিখে চুয়াডাঙ্গার উপজেলার গোবিন্দপুরে বাউলদের একটি আখড়ায় রাত ১২টা থেকে ১টা ৩০ পর্যন্ত আট-নয়জন যুবক হামলা চালিয়ে তাদের আখড়া পুড়িয়ে দেয় এবং বয়োবৃদ্ধ বাউলদেরকে গাছের সাথে বেঁধে তাদের চুল কেটে দেয়। এর কয়েকদিন আগে ১৬ জুলাই ২০১৬ জামাত-শিবিরের কর্মীরা একই জেলার জীবননগর উপজেলার একতারপুরে বাউলদের আখড়ায় ভাঙচুর চালায় এবং তিনজন বাউলকে কুপিয়ে যখম করে।
২০১৪ সালের ৮ আগস্ট মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের বাউল আবু বকর সিদ্দিককে মারধর করে চুল কেটে দেয়া হয়। প্রতিবাদ বাউলরা ১১ আগস্ট মানববন্ধন শেষে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন; তখনও পর্যন্ত ওই বাউলরা নিজ এলাকায় ফিরতে পারছিলেন না।

এর আগে ২০১১ সালের ৪ ও ৫ এপ্রিল রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চররামনগর গ্রামে লালন ভক্তদের দুদিনব্যাপী সাধুসংঘ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে স্থানীয় প্রভাবশালীরা হামলা চালায় ও ২৮ জন বাউলকে চুল-দাড়ি-গোঁফ কেটে দিয়ে স্থানীয় মসজিদে নিয়ে জোরপূর্বক তওবা করায়। এ ঘটনার নেতৃস্থানীয়দের একজন ছিলেন পার্শ্ববর্তী কালিকাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিউর রহমান নবাব। জানতে চাইলে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, এজন্য বাউলদের ‘অনৈসলামিক’ কর্মকাণ্ড দায়ী। তিনি বলেন, ‘মুসলিম ধর্মীয় রীতি না মেনে বাউলরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জিন্দা ফয়তা ও এক ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ অনুষ্ঠানের নামে মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করছিল। এটা এলাকার মুসুল্লিরা মেনে নিতে পারেননি।’

গত দশ বছরে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার বাইরেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি এরকম আরও অনেক ঘটনাই হয়তো ঘটে চলছে আমাদের জানাশোনার বাইরে। তার আগেও বাউলদের ওপর কিছু কিছু হামলা-নির্যাতনের কথা জানা যায়; তবে সম্প্রতি এদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় মৌলবাদী প্রচারণা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের ওপর আক্রমণের ঘটনাও।

২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, ঠাকুরগাওয়ের এক দম্পতি রাজমিস্ত্রি সোলায়মান ও তার স্ত্রী নূরজাহানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে একইসাথে কালীপূজা ও কোরান পাঠের অভিযোগে। সদর থানা পুলিশের ওসি মশিউর রহমান তখন জানান, ‘একজন ব্যক্তি একইসাথে দুই ধর্মের অনুসারী হতে পারেন না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার জন্য তাদের আটক করা হয়েছে।’ একজন ওসির কি স্পর্ধা যে সে একজন নাগরিকের বিশ্বাস বিষয়ে মতামত প্রদান করে!

অন্যদিকে ২০০৮ সালের অক্টোবরের কথা আমরা ভুলে যাইনি যে মোল্লাদের চাপের মুখে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সামনে থেকে লালন সাঁইসহ পাঁচজন বাউলের ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়েছিল। এর আগে পরেও দেশে ভাস্কর্য অপসারণ ও ভাঙচুরের একাধিক ঘটনা ঘটেছে।

এখানে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উল্লেখ না করে পারছি না। ২০০২ সালে আমি যখন একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করি, তখন ওই সংস্থার একজন কর্মকর্তা, যিনি সংস্থাটির চট্টগ্রাম কার্যালয়টি ব্যবহার করতেন হিজবুত তাহরিরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য, ঘটনাক্রমে একদিন আমাকে বলেছিলেন, তথাকথিত খিলাফত কায়েমের পর প্রথমেই তারা বাউলদেরকে জবাই করবেন।

বাংলাদেশে সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর ব্যাপকমাত্রায় ধারাবাহিকভাবে শত শত হামলা নির্যাতনের ঘটনাগুলোর কথা, বিশেষ করে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসনামলে যা আরও ব্যাপক মাত্রায় ঘটেছিল, আমরা এখানে আর বর্ণনা করছি না। তবে উপরে বর্ণিত কেইসগুলো থেকে একথা স্পষ্ট যে তৃণমূলে জামাত-শিবির, হিজবুত তাহরির (ও অন্যান্য জঙ্গী গোষ্ঠী), জাতীয় পার্টি, বিএনপি, আওয়ামী লীগে আশ্রিত ধর্মান্ধরা আর এমনকি প্রশাসনের কর্মচারিরা– সকলেই অপর ব্যক্তির বা জনগোষ্ঠীর ধর্ম পালনের স্বাধীনতার প্রতি ব্যাপকভাবে অসহিষ্ণু।

একসময় এই অসহিষ্ণুতার পেছনে ব্যাপক অংশের জাগতিক লোভ-লালসা থাকলেও সাম্প্রতিক দশকে আদর্শিক কারণ প্রধান হয়ে ওঠেছে। তা না হলে তারা চালচুলোহীন বাউলদের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করবে কেন? এখানে উল্লেখ্য, প্রতিটি ধর্মের যে তিনটি প্রধান উপাদান থাকে– বিশ্বাস, আচার ও অনুষ্ঠান (বিলিফ, রাইটস ও রিচুয়ালস)– সে বিবেচনায় বাউলরা একটি স্বতন্ত্র ধর্মীয় জনগোষ্ঠী। তাদের বিশ্বাস, আচার ও অনুষ্ঠান সম্পর্কে আমার ব্যাপক কোন ধারণা না থাকলেও এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে তাদের কাছে মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই; অসংখ্য গানে তারা উচ্চারণ করেছেন মানুষের মহত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও সার্বভৌমত্ব; তারা বলেছেন যে মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। চিরায়ত সনাতন বা চিরায়ত ইসলাম বা অপরাপর প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের চেয়ে তাদের বিশ্বাস, আচার ও অনুষ্ঠান পৃথক। সনাতন ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, সহজিয়া বৈষ্ণব মতবাদ ও ইসলামী সুফিবাদের প্রভাবে ও সেগুলোকেও উতরিয়ে এক নতুনতর ও উচ্চতর ধারা হিসেবে বিকশিত হয় বাউল ধারা। উনিশ ও বিশ শতকে এ ধারা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠলেও বিগত কয়েক শতক ধরেই এর বিকাশ ও উন্নয়ন ঘটেছে বাংলা লোকায়ত ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় ধারার সংস্কৃতি-সাহিত্যের মাধ্যমে। বাউল গানের সমান্তরালে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ– এ দাবি করলেও তা মনে হয় অযৌক্তিক হবে না মোটেই। বাউল গান বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বৃহত্তর গ্রামীণ জনগণের জীবন ও সংস্কৃতিকে, এমনকি নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও, ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। আর সে জন্যই জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউনেসকো ২০০৮ সালে বাউল গানকে ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’র তালিকায় স্থান দিয়েছে। এটা নিয়ে অবশ্য গবেষকদের ভিন্নমত রয়েছে যে ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি ঘোষণার মাধ্যমে বাউলদের নিজস্ব জীবনযাত্রাকে ধীরে ধীরে কোঅপটেড বা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

ওপিঠ
যেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে, আমার মতে তাদের মধ্যে সবচেয়ে হিংস্র ছিলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরি (সাকা চৌধুরি)। তার উদ্ধত ও বেপরোয়া আচরণ আমার মধ্যে এক ধরনের রাজনৈতিক-ভীতির উদ্রেক করতো। তার বিচারের সময় আমি প্রায়শই নিজেকে ও বন্ধুদের বলতাম যে সাকা চৌধুরির বিচারের রায় যেদিন কার্যকর হবে সেদিনই আমি বুঝবো যে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আসলেই ‘শেখের বেটি’। আদালতের রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন যে স্বাধীন দেশেও যুদ্ধপরাধীরা যত ক্ষমতাবান, হিংস্র, উদ্ধত ও বেপরোয়াই হোক না কেন তার রেহাই নেই।

সালটা মনে নেই। তবে সেটা গত শতকের শেষ দশকের ঘটনা। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তখন শেখ হাসিনা ও সাকা চৌধুরির মধ্যে এক ধরনের বিতর্ক চলছিল। সেসময় দৈনিক ইনকিলাবে সাকা চৌধুরির একটি সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়েছিল, চার পৃষ্ঠা জুড়ে, অনেকটা ক্রোড়পত্রের মতো করে। এটা প্রকাশের জন্য সাকা চৌধুরি দৈনিক ইনকিলাবকে ক্রোড়পত্রের বাণিজ্যিক হিসেবে টাকা দিয়েছিলেন নাকি দৈনিক ইনকিলাবের সাথে তার আদর্শিক ঐক্যের কারণে ওটা প্রকাশিত হয়েছিল তা আমার জানা নেই; তবে আমি এটা নিশ্চিত যে সাক্ষাৎকারের প্রশ্নগুলো সব সাকা চৌধুরি নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারটির মূল উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা ও বিদ্বেষ ছড়ানো। পুরো সাক্ষাৎকার জুড়ে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বারবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ইংরেজি হরফে অ্যাক্রোনিমের মতো করে বিএএল হিসেবে ছাপা (বলা) হয়েছিল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অফিশিয়ালি নামের অ্যাক্রোনিম হিসেবে ইংরেজিতে এএল লিখে থাকে।

প্রায় দেড়-দু’দশক আগের এ ঘটনাটি এখানে উল্লেখ করার প্রাসঙ্গিকতা কী? সেটা হল আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদে সরকার দলের হুইপ, যাকে আমি চিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই, আওয়ামী ছাত্রলীগের ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুন লিখে যিনি পার করেছেন জীবনের বড় একটা সময়– অত্যন্ত পরিশ্রমী ও নিবেদিতপ্রাণ সেই আবু সাঈদ আল মাহমুদ এমপি-র একটি সাম্প্রতিক বক্তব্য। সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশে মুসলমানদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী কী করেছেন তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছেন; এবং সেজন্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ তার নামের আগে হজরত উল্লেখ করতে চান। এ বক্তব্যের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বা অন্য কোন সংসদ সদস্য এ নিয়ে কোন কথা বলেননি।

অর্থাৎ তার প্রস্তাব আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশেষায়িত হবেন হজরত শেখ হাসিনা হিসেবে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে সুকৌশলে অনেক কথা-ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ হয়েছে। অনেকেই বলেছেন ‘হজরত’ হল ‘জনাব’ বা এ জাতীয় একটি সম্মানসূচক বিশেষণ, যার ব্যবহারে কোন ক্ষতি নেই।

এখানেই আমি সাকা চৌধুরির সেই ঔদ্ধত্য প্রসঙ্গে ফিরে যাবো। উর্দু-হিন্দিতে ‘বাল’ অর্থ চুল যা আমরা অহরহ শুনে থাকি সিনেমা-নাটক-গানে-কথপোকথনে। কিন্তু বাংলাদেশে এটি কথ্যভাষার একটি অশালীন-অশ্লীল শব্দ হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত। এ থেকে আমি এই বলতে চাচ্ছি যে ‘হজরত’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ যাই হোক না কেন, বাংলাদেশে এটা নবী-রসুল ছাড়াও ধর্মীয় নেতা ও মোল্লাদের নামের আগে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবু সাঈদ আল মাহমুদ বাংলাদেশে ‘হজরত’-এর অর্থ না জেনে বা এর ব্যাঞ্জনা না বুঝে যে এ বক্তব্য দিয়েছেন তা আমি মনে করি না। সত্যি বলতে কী, তার বক্তব্যে তিনি খুলাফায়ে রাশেদিনের উদাহরণ দিয়ে বিস্তারিতভাবে বলেছেন কীভাবে ‘হজরত শেখ হাসিনা’ ইসলামের ইতিহাসে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামের ইতিহাসে আর কোন রাষ্ট্রনায়ক এর আগে ইসলামের জন্য এত মহৎ কাজ করেননি।

প্রাসঙ্গিক
যে কোন সমাজেই দু’জন মানুষের একমত হওয়াও খুব কঠিন বিষয়; সেখানে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন একজন রাজনীতিককে যে কোন সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের জনগোষ্ঠীর অনেক ধরনের স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হয়; এ আমরা জানি। আর সেজন্যই হয়তো ২০০৬ সালে প্রাথমিকভাবে আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যে ও পরে ১৪ দলের মধ্যে ২৩ দফা চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর খেলাফত মজলিশের সাথে ৫ দফা চুক্তি সই করে। দুদিন পর ২৫ ডিসেম্বর ধানমন্ডির সুধা সদনে ১৪ দলের সভায় এ নিয়ে তীব্র মতবিরোধ হলে শেখ হাসিনা বলেন, সৎ ও মহৎ উদ্দেশ্য ও কৌশলগত কারণেই ওই ৫ দফা চুক্তি করা হয়েছে। হাসানুল হক ইনু, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, রাশেদ খান মেনন ও আওয়ামী লীগের অনেকেই বলেন, আওয়ামী লীগ ও খেলাফত মজলিশের ৫ দফা চুক্তি তাদের নিজস্ব ব্যাপার, তার সাথে ১৪ দলের কোন সম্পর্ক নেই; আমরা ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪ দল গঠন করেছি যার প্রথম দফা হল অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ গঠন করা।

বাংলাদেশে গত এক দশকে বাউলদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়েছে তা নিয়ে জাসদ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলের কোন বক্তব্য বা অফিশিয়াল বিবৃতি আমার চোখে পড়েনি। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের বাউল শিল্পী শরিয়ত সরকারকে গ্রেফতার সম্পর্কে গত ২২ জানুয়ারি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি জানান, চুল কাটা বা বাউলদের প্রতি কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেছেন, বাউল ঐতিহ্য যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

একই সাথে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, একজন বাউল শিল্পীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখানে বাউল গানের তো কোন দোষ নেই। বাউল গানে সম্পৃক্ত কেউ যদি কোন অপরাধে সম্পৃক্ত হন, তাহলেও আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তিনি আরও বলেন, প্রশ্নকর্তা কি এমন কোন গ্যারান্টি দিতে পারবেন যে বাউল গান করেছেন বলেই ওই শিল্পী কোন অপরাধে জড়িত নন! নিশ্চয়ই তিনি এমন কোন অপরাধ করেছেন যার জন্য তার বিরুদ্ধে এমন আইনী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

আমার মাথায় আসছে না আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কী করে নিশ্চিত হন যে নিশ্চয়ই তিনি (শরিয়ত সরকার) কোন অপরাধ করেছেন! বাউল শরিয়ত সরকারকে যে চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি বা অন্য কোন অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়নি বরং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা তো গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত, তা তিনি পাশ কাটিয়ে গেলেন কী করে? কী করে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই ওই বাউল এমন কোন অপরাধ করেছেন যার জন্য তার বিরুদ্ধে এমন আইনী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? প্রধানমন্ত্রী কি মনে করেন যে গানবাজনা হারাম এবং শরিয়ত সরকার গানবাজনাকে হারাম না বলায় অপরাধ করেছেন নিশ্চিত? প্রধানমন্ত্রী সংসদে বললেন, বাউল গানে সম্পৃক্তরা যেন এমন কোন কাজ না করেন যাতে বিশ্ব ঐতিহ্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে– তার মানে কী এই যে শরিয়ত সরকার বিশ্ব ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো কাজ করেছেন? তার মানে কি এই যে বাউলদেরেক মুসলিমদের মতো করে ধর্ম চর্চা করতে হবে? প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কি মনে করেন যে জাতীয় সঙ্গীত ও রণসঙ্গীতের সাথে তিনি ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি যে সালাম-অভিবাদন গ্রহণ করেন তা হারাম?

বাংলার লোক সঙ্গীতের তো বটেই, লোক সঙ্গীতের একটি ধারা বাউল গানেরও রয়েছে বিভিন্ন উপধারা। সর্বশেষ রীতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পেনাল কোডের বিভিন্ন ধারায় যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তার কারণ হল তার গাওয়া পালা গান। আমরা জানি পালা গানে অনেক সময় দুই শিল্পী বা দুই শিল্পীদল কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে গানে গানে বিতর্কে লিপ্ত হন। সৃষ্টিতত্ত্ব বা সমাজ-সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয়ে আয়োজিত হয় এসব বিতর্ক; শরিয়ত-মারেফত বিতর্কের কথা দেশের গ্রামীণ জনগণ খুব ভালো জানেন। বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় এসব লোকায়ত নান্দনিক চর্চার রয়েছে বিপুল ভূমিকা। আমরা যদি বাংলা লোকসংস্কৃতির এসব চর্চার বিরুদ্ধে অবস্থান নেই, তাহলে আমাদেরকে বন্ধ করে দিতে হবে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তিবিদ্যা, দর্শন ও পদার্থবিজ্ঞানের মতো বিষয়ে পাঠদান। আমরা জানি যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব বিষয় লোকসংস্কৃতি বা লোকসঙ্গীতের মতো মৌখিক নয়, বরং লিখিত; সুতরাং সে বিবেচনায় তথাকথিত ধর্মীয় অনুভূতি ওয়ালাদের তো আরো বেশি আঘাত পাবার কথা!

বাউল গান ও পালা গানসহ লোক সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা ও সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের প্রতি হামলা-মামলার ঘটনাগুলো ঘটছে তৃণমূলের ও শহুরে ধর্মান্ধ লোকজনের নেতৃত্বে; অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে মোল্লাদের নেতৃত্বে ও রাজনৈতিক কর্মীদের (আওয়ামী লীগের সহ) অংশগ্রহণে। ধর্মান্ধতা ঘাঁটি গেড়ে বসেছে রাজনীতিতে এবং সেজন্যই অনেক সংসদ সদস্যের মানসেও। ওয়াজ মাহফিলগুলোতে হরহামেশাই শোনা যায় বাউলবিরোধী বক্তব্য। অনেক মুসলিম লেখক-গবেষকও তাদের গবেষণাকর্মে নিরপেক্ষ থাকার বদলে জাজমেন্টাল হয়ে বাউলবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন।

এরকম একটি প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন একদিকে বাউল গানের পক্ষ নেন এবং অন্যদিকে একই সাথে গানের কন্টেন্ট বিবেচনায় তাদের ওপর প্রয়োগকৃত হামলা-মামলাকে সমর্থন দেন— আমি বুঝতে পারি না তিনি আসলে কোন অবস্থান নিচ্ছেন! এটা তো কোন কৌশলগত অবস্থান হতে পারে না। তিনি কি একই সাথে সবাইকে খুশি রাখতে চাচ্ছেন? যেমনটা তিনি করেছিলেন ১৪ দলের সাথে ২৩ দফা চুক্তির পাশাপাশি খেলাফত মজলিশের সাথে ৫ দফা চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে? খেলাফত মজলিশের সাথে সম্পাদিত চুক্তির অনেক বিষয় মেনে নিয়ে এবং এমনকি সেগুলোকে উতরিয়ে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে আরও বেশি করে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি প্রধানমন্ত্রী কি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন? তিনি কি সত্যিই ‘হজরত শেখ হাসিনা’ হতে চান? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি হজরত শেখ হাসিনা হিসেবে দেখতে চাই না; জননেত্রী শেখ হাসিনা হিসেবেই দেখতে চাই। আমি দেখতে চাই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলের মধ্যে সম্পাদিত ২৩ দফা চুক্তির আলোকে একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দেবেন। তাকে বিনয়ের সাথে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আওয়ামী লীগ কখনোই ইসলামী দল হিসেবে ভোট পায়নি ও এ দেশের ক্ষমতায় আসীন হয়নি; বরং বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ-যুদ্ধাপরাধবিরোধীতা ও গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনের শক্তি হিসেবেই জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছে।

১৪ দলের ২৩ দফা বাস্তবায়নের ম্যান্ডেট পেয়ে শেখ হাসিনা মাননীয় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সংসদ নেতা হিসেবে সংবিধান রক্ষা করার প্রধান নেতা তিনি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তিনি পাতাকাটা-ছেঁড়াফাটা সংবিধানকে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন; যদিও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিনি অনুমিত কৌশলগত কারণে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও রাষ্ট্রধর্ম হিসেব ইসলামকে সংবিধানে বহাল রেখেছেন।

বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলাম প্রাধান্য বিস্তার করে থাকলেও অন্যান্য ধর্ম পালনে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার রয়েছে। সংবিধানের চার মূলনীতির একটি হল ধর্মনিরপেক্ষতা। সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম; তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন। সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে (১) আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে এবং (খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে। একই অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে যে, (২) কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোনো ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম-সংক্রান্ত না হইলে তাঁহাকে কোনো ধর্মীয় শিক্ষাগ্রহণ কিংবা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উপাসনায় অংশগ্রহণ বা যোগদান করিতে হইবে না। একই সাথে সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা’র বিষয়ে বলা হয়েছে যে ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার, (ঘ) কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে।

সংবিধানের পাশাপাশি দেখা যাক বাংলাদেশের দণ্ডবিধি এসব বিষয়ে কী বলে। ২৯৫ ধারা অনুযায়ী কোনো বা যে কোনো বিশেষ ধর্মবোধে অবমাননা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে উপাসনালয়ের ক্ষতি সাধন বা অপবিত্র করা; ২৯৫(ক) ধারা অনুযায়ী কোনো বা যে কোনো বিশেষ ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে অবমাননা করে উক্ত যে কোনো ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোর আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বিদ্মেষাত্মক কাজ; ২৯৬ ধারা অনুযায়ী ধর্মীয় সমাবেশে গোলমাল সৃষ্টি; ২৯৭ ধারা অনুযায়ী সমাধিস্থান ইত্যাদিতে অনধিকার প্রবেশ; এবং ২৯৮ ধারা অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করার উদ্দেশ্যে শব্দ উচ্চারণ ও অঙ্গভঙ্গী— হল ধর্ম অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। ঔপনিবেশিক আমল থেকে চলমান এসব ধারার মধ্যে বাংলাদেশে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ২৯৮ ধারা; কেননা ২৯৫ থেকে ২৯৭ ধারায় কোনোক্রমেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাউকেই কোনদিন অভিযুক্ত করা সম্ভব নয়, এগুলো আধিপত্য বিস্তারকারী প্রধান ধর্মমতকেই সমর্থন করে। আর ২৯৮ ধারা অনুযায়ী আসলেই বোঝা যায় না কোন শব্দ বা কোন অঙ্গভঙ্গী একটি ধর্মানুভূতিকে আঘাত করে বা ধর্মানুভূতির সীমা আসলে কতদূর বিস্তৃত। আসলে দণ্ডবিধির এসব ধারাগুলো সবই ক্ষমতাধর ধর্মগুলোর পক্ষে সংখ্যালঘু বা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধর্মমতগুলোর বিরুদ্ধে। দণ্ডবিধির এ কুখ্যাত ২৯৮ ধারার সাথে সম্প্রতি যোগ হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

সবশেষে বলি, বাংলার হাজার বছরের লোকসংস্কৃতি, যা আমাদের জাতীয়তা বোধ ও জাতিসত্ত্বা নির্মাণ করেছে, চর্চায় কোন ধরনের বাধা আরোপন চলবে না। উপরন্তু, সংবিধানে নির্দিষ্ট রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতির একটি ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদের (ঘ) উপধারা, ৪১ অনুচ্ছেদের (১) (ক) ও (খ) উপধারা অনুসারে বাংলা লোক সংস্কৃতির বা লোক সঙ্গীতের একটি বিশেষ ধারা বাউল ধর্মমতের ওপরও কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা-মামলা পরিচালনা করা চলবে না। আশা করি আমাদের সংসদ নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলার লোকজীবন, লোকসংস্কৃতি ও লোকসঙ্গীত– বিশেষ করে বাউল ধর্ম ও বাউল গান, পালা গান, মারফতি গান– এসবের ওপর কোন হামলা-মামলা বরদাস্ত করবেন না; বরং সুরক্ষা করবেন।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)