চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান শহীদ পরিবারে সুনামির আঘাত

গত কয়েক মাসে একাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন কেউ কেউ। একজনকে রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিজয়ের মাসের ঠিক আগে অমর সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ডিসেম্বরে তিনি ব্যক্তিগত প্রতিবাদ হিসেবে কোন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন না, কোথাও কোন সাক্ষাতকারও দেবেন না। তার এ নীরব প্রতিবাদ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, রাষ্ট্র কিছু ক্ষেত্রে নীরব থাকলেও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমান বিশেষ করে শহীদ পরিবারগুলোর জন্য কতোটা বেদনার। সে কথা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বলেছেন আরেক শহীদকন্যা নুজহাত চৌধুরী। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে নুজহাত বলেছেন, ‘আমাদের বাবারা চলে গেছেন মাথা উঁচু করে। আমাদের মায়েরা কোনো অভিযোগ ছাড়াই, অনুযোগ ছাড়া চোখের জল গোপন করে দীর্ঘ ৪৫ বছর সংগ্রাম করছেন।’ ‘বাবার লাশ যখন ১৮ ডিসেম্বর পাওয়া গেলো, তার বুকটা ঝাঁঝরা ছিল। তার কপালে বেয়োনেট চার্জ করা হয়েছিল।বঙ্গবন্ধু কিন্তু দেশে নেমেই বলেছিলেন, ওরা আমার চোখের ডাক্তারকে কি মেরে ফেলেছে?’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে নুজহাত চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন: আপনারা বোঝেন কী না, আমাদের বাবারা হাসিমুখে মৃত্যুকে মেনে নিয়েছিল এই আত্মবিশ্বাসে যে, আপনাদের হাতে দেশটা দিয়ে গেলে দেশটা ভালো থাকবে।’ তৃণমূল নেতাদের কাছে মিনতি প্রকাশ করে নুজহাত বলেন, ‘আপনারা ক্ষমতার বিভিন্ন পদে আসীন আছেন। রাজনৈতিক কারণে হয়তো আপনাদের অনেক কিছু ম্যানেজ করতে হয়। অনেক আশা নিয়ে অনেক শোক আপনাদের হাতে সমর্পণ করেছি। আমাদের বাবাদের সারাজীবনের বিনিময়ে আমরা একটি সুন্দর দেশ চেয়েছি। সেই সুন্দর দেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব আপনাদের।’ তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ছোট ছোট আপস আপনার চেয়ারে বসে হয়তো কিছু নয়। একটা উপজেলা বা তৃণমূলের কাছে হয়তো এটা কিছু না। মহাসমুদ্রের বুকে যখন একটা সুনামি  হয় তখন মাঝ সমুদ্রে সেটা ২ বা ৩ ফিট। কিন্তু যখন তীরে আছড়ে পড়ে তখন সেটা ৭ মিটার বা ৭০ মিটার হয়।’ নেতাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অনেক ত্যাগ করে কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে আমাদের এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে।রাজনীতির কঠিন দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে হয়তো অনেক কিছু করতে হয়, ম্যানেজ করতে হয়। কিন্তু ছোট ছোট আপোষ সেই চেয়ারটিতে বসে হয়তো কিছু না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের লোকগুলো যারা রক্ত দিয়েছিলো এই দেশটার জন্য তাদের সম্মানে, তাদের আকাংখায় তাদের সপ্নে যে কী বিশাল সুনামি হয়ে যায় তা আমরা অনেক সময় বুঝি না।’ নুজহাত চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই আপনারা যদি সোনার বাংলা, বঙ্গবন্ধুর আর্দশের লোক হন তাহলে মুক্তিযোদ্ধার গায়ে কিভাবে রডের বাড়ি পড়ে। শহীদ সন্তানদের বুকে এটা যে কত বড় আঘাত। সম্মানে যে কত বড় অপমান। আশা করি আপনারা এটা বুঝবেন।’ বক্তৃতার প্রায় পুরোটা সময় নুজহাত নিজে কেঁদেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যদের কাঁদিয়েছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই তার কথায় আপ্লুত হয়েছেন। আমরা আশা করি তার কথার রেশটুকু নিয়ে ফিরে গেছেন তৃণমূলের নেতারা। নুজহাতের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের জীবিত প্রতিটি মৃক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সন্তানকে প্রাপ্য মর্যাদাটুকু দেওয়া হোক। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি না পেলেও মানসিক শান্তি নিয়ে গর্বের সঙ্গে বসবাস করুক প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। শহীদদের আত্মা শান্তি পাক।