১৯৭১ এর ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের নামে সর্বাত্মক আক্রমণে দিশেহারা নিরস্ত্র মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয়ের জন্য ছুটে গিয়েছিলো। তাদের ফিরিয়ে দেয়নি বন্ধুদেশ। প্রায় এক কোটি শরনার্থীকে আশ্রয় দিয়ে পরম মমতায় বুকে তুলে নিয়েছিলো ভারত। কেবল সীমান্ত খুলে দিয়েই নয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য ভারত সরকারকে চাপ দিতে ২৭ মার্চ ত্রিপুরায় হরতালও হয়েছিল।
২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে সারাদেশে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর ২৬ শে মার্চ সন্ধ্যা থেকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের আক্রান্ত নারী-পুরুষ ত্রিপুরায় আশ্রয় নিতে শুরু করেন। সীমান্ত দিয়ে ছুটে আসা হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় দিতে আশে-পাশের স্কুল কলেজ খুলে দেয়া হয়, করা হয় আশ্রয় শিবির।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য কমরেড গৌতম দাস বলেন, তখন আমাদের সমস্ত স্কুল ঘরগুলো আশ্রয় শিবির হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আমরাই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সরকারের কাছে আমরা দাবি করেছিলাম সমগ্র সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে যাতে অবাধে আক্রান্ত মানুষগুলো প্রবেশ করতে পারে এবং তাদেরকে আশ্রয় দেয়া যায়। ত্রিপুরায় আমরা যারা বসবাস করি তাদের অধিকাংশের মূল হচ্ছে বাংলাদেশে। কারও জন্ম এখানে, কারও আত্মীয় স্বজন এখানে, একটা নাড়ির টান ছিলো। সেদিক থেকে আমাদের আবেগটা ছিলো অত্যন্ত বেশি। মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেয়াটা আমাদের নৈতিক-মানবিক দায়িত্বতো বটেই আত্মীয়তার বন্ধনের জন্যই আমরা আরো বেশি এখানে নিয়োজিত হয়েছিলাম।
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সিপিআইএম’এর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক পি সুন্দরাইয়া এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষনাকে সমর্থন জানান এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বর্বর গণহত্যার নিন্দা করেন। বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই’এর ডাকে ঐদিনই ত্রিপুরায় হরতাল ডাকা হয়। সেদিনের হরতালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে গণমিছিলে সরাসরি নেতৃত্ব নেন ত্রিপুরার এই বাম নেতা।
কমরেড গৌতম দাস বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবিতে প্রথম সাধারণ ধর্মঘট ডাকায় সমগ্র ত্রিপুরার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে গিয়েছিলো। স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা শেখ মুজিবর রহমান তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। সেটাকে পূর্ণ সমর্থন জানান এবং ভারত সরকারের কাছে দাবি জানান যাতে সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হয় বাংলাদেশকে।
২৭ মার্চ ত্রিপুরায় হরতালকারীদের প্রতিনিধিদল রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে গিয়ে ত্রিপুরা সীমান্ত বাংলাদেশের শরনার্থীদের জন্য খুলে দেয়ার দাবি জানান।