প্রথম প্রয়াণ দিবসে খ্যাতিমান নাট্যকার মান্নান হীরাকে স্মরণ করলো বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ। মান্নান হীরা আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন এ সংগঠনের। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার হলে স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্মারক বক্তৃতা উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী। তার বক্তৃতার শিরোনাম ছিল ‘মান্নান হীরার নাটক রচনার প্রেরণা ও প্রেক্ষিত প্রসঙ্গ খেঁকশিয়াল’।
পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ গিয়াস। আলোচনায় অংশ নেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান, অভিনয়শিল্পী ঝুনা চৌধুরী, আজাদ আবুল কালাম, আখতারুজ্জামান, চন্দন রেজা, ফারজানা ছবি, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ, সাংবাদিক নজরুল কবির প্রমুখ।
বক্তৃতায় রতন সিদ্দিকী বলেন, ‘নাট্যকার মান্নান হীরার ভাবগত যে প্রাথমিক প্রেরণা ছিল তা সৃজনশীল প্রজ্ঞা অর্থাৎ প্রতিভার সহজাত তাড়না যা সকল সৃজনশীলের কমবেশি থাকে। এর বাইরে মান্নান হীরার নাটক রচনা ও নাট্যবিষয় নির্বাচনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা- সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার আদর্শিক প্রেরণা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ ও পাথেয় এবং মুক্তিযুদ্ধের মৌলচেতনা জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা ও প্রত্যয়কে মান্নান হীরা আমৃত্যু ধারণ করেছেন উচ্চারণ ও আচরণে। এই মুক্তিযুদ্ধের মীমাংসিত চেতনা ছিল তার শিল্পসৃজন অর্থাৎ নাটক রচনার প্রাত্যহিক প্রেরণা। যাপিত জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল তাঁর স্বপ্ন-সংগ্রাম। এর মধ্যে শ্রেণিহীন, শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতীজ্ঞা ছিল অগ্রগণ্য প্রেরণা। যাকে তিনি স্বীকার করে শান্তি পেতেন এবং নাটকে প্রতিফলিত করে স্বস্তি লাভ করতেন।’
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গেল বছরের ২৩ ডিসেম্বর মারা যান মান্নান হীরা। তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলির মধ্যে ‘ক্ষুদিরামের দেশে’, ‘জননী বীরাঙ্গনা’, ‘লাল জমিন’, ‘ভাগের মানুষ’, ‘ময়ূর সিংহাসন’,‘সাদা-কালো’।
২০০৬ সালে তিনি নাটক শ্রেণিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৪ সালে শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ তৈরি করেন। এছাড়া ‘গরম ভাতের গল্প’ ও ‘৭১-এর রঙপেন্সিল’ নামে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্যও পরিচালনা করেন তিনি।