রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো জাতিগত নিধন বন্ধে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং-এর প্রতি আহবান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিদার নয়ের্ট এক বিবৃতিতে বলেন, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াংকে টেলিফোন করে টিলারসন ‘রাখাইন রাজ্যে চলা মানবিক সংকট এবং নৃশংসতার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘মন্ত্রী রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধে সরকারকে সহযোগিতা এবং এই সংকটে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে দেশে ফেরার সুযোগ করে দিতে বার্মার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহবান জানিয়েছে।’
এর আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সকল আমন্ত্রণ বাতিল করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপর চালানো নৃশংসতার জন্য কেউ দায়ী হলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা অপরিহার্য। (সেটা) যেকোন ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠান এবং নিরাপত্তায় নিযুক্ত সদস্য হোক না কেন? এর পরিপ্রেক্ষিতে চলমান সহিংসতা বন্ধে বার্মিজ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করা ও দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য সকল রকম সেনা সরঞ্জামাদি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে চলমান নিষেধাজ্ঞাসহ জবাবদিহিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।