রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করে রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুতদের পাশে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস। সংকট সমাধানে বিশ্বকে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে দেয়া ভাষণে পোপ বাংলাদেশের মানবিক অবস্থানের প্রশংসা করেন।
খ্রিস্ট ধর্মবলাম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস বঙ্গভবনে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ। পোপ এবং ভ্যাটিকানের রাষ্ট্র প্রধান; দুই পরিচয়েই বাংলাদেশ সফর করা পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে শুরুতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি।
সেসময় বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গা ইস্যুতে যাতে মিয়ানমারকে চাপ অব্যাহত রাখে সেজন্য পোপের ভূমিকা আশা করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান। পোপকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে দেওয়া বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পোপ ফ্রান্সিসসহ বিশ্ব নেতাদের সহযোগিতা চান। পরে দরবার হলে মন্ত্রি পরিষদের সদস্য, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারা।
আমন্ত্রণ জানানোয় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তৃতা শুরু করা পোপ; বাংলাদেশকে ‘নবীন’ রাষ্ট্র উল্লেখ করে বলেন, পোপদের হৃদয়ে এই দেশের জন্য সবসময়ই বিশেষ স্থান আছে। বাংলাদেশকে তিনি ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে জেনেছেন উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশের সব ধর্মের সহাবস্থানের প্রশংসা করেন। স্মরণ করেন গুলশান ট্র্যাজেডির কথাও। মুখে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করলেও মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দেওয়ায় সাধুবাদ জানান তিনি।
আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির দেওয়া ভোজে যোগ দেন পোপ ফ্রান্সিস। সফরে পোপ ফ্রান্সিসের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের কর্মসূচি না থাকলেও ঢাকায় রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তার আলোচনার কথা রয়েছে।
পোপ ফ্রান্সিস আরো বলেন: গত কয়েক মাসে রাখাইন থেকে আসা বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে এবং তাদের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সমাজ উদার মন এবং অসাধারণ ঐক্যের পরিচয় দিয়েছে। এটা ছোট কোনো বিষয় নয়, বরং পুরো বিশ্বের সামনেই উদাহরণ। পুরো পরিস্থিতি, মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট এবং শিবিরগুলোতে থাকা আমাদের ভাই-বোন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু, তাদের ঝুঁকির গুরুত্ব বুঝতে আমাদের বাকি নেই। কঠিন এই সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তবে শুধু রাজনৈতিক বিষয় সমাধানই নয়, বাংলাদেশে দ্রুত মানবিক সহায়তাও দিতে হবে।
আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির দেওয়া ভোজে যোগ দেন পোপ ফ্রান্সিস।
সফরসূচি অনুযায়ী ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে বঙ্গভবনে পৌঁছান তিনি। সাড়ে ৫টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
এর আগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এবং সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান পোপ ফ্রান্সিস।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে ইয়াংগুন থেকে তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে ঢাকায় ঢাকা পৌঁছান পোপ। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এসময় তাকে ৩ বাহিনীর গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এরপর তিনি সাভার স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
আগামী ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় বিভিন্ন রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি।
১৯৮৬ সালে পোপ জন পলের সফরের ৩১ বছর পর বাংলাদেশে এসেছেন খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা।বাংলাদেশে পোপকে স্বাগত জানাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং খৃষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকে নানা আয়োজন করা হয়েছে।
সংকটের শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সহানুভূতিশীল পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরকে এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে, মিয়ানমার সফরে পোপ ফ্রান্সিস এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেননি।