মিসবাহ-উল-হক ও ইউনিস খান। একদিকে দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটারের বিদায়ের মঞ্চ। অন্যদিকে পাকিস্তানের ইতিহাস গড়ার হাতছানি। জয় দিয়ে মিসবাহ-ইউনিসের বিদায় রাঙানোর কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছিল সফরকারীরা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালেন রোস্টার চেজ ও ১১ নম্বরে নামা শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। তখন ডমিনিকা টেস্টের আর মাত্র সাত বল বাকি। স্ট্রাইকে গ্যাব্রিয়েল। চেজ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শেষ ওভার মোকাবেলা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ‘মধুর’ ড্র এনে দেয়ার। কিন্তু ইয়াসির শাহর দুর্দান্ত এক ডেলিভারি গিয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে। উল্লাসে ফেটে পড়ে পাকিস্তান। রাঙিয়ে দেয় ‘মিসইউ’র বিদায়। গড়ে নতুন ইতিহাস।
টানটান উত্তেজনা, হতাশা, আক্ষেপ এবং অবশেষে বিজয়ের হাসি। মিসবাহ-ইউনিসের বিদায়টা এরচেয়ে রঙিন ও বর্ণিল হতে পারতো না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙে ১০১ রানের দারুণ জয় দিয়ে ইতিহাস গড়ে পাকিস্তান। প্রথমবারের মতো উইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় দলটি। হানিফ মোহাম্মদ, জাভেদ মিয়াঁদাদ ও ইমরান খানের মতো কিংবদন্তিরা যেটি পারেননি সেটি করে দেখিয়েছেন মিসবাহ-ইউনিস।
রোববার ডমিনিকা টেস্টের শেষ দিন ১ উইকেটে ৭ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইয়াসির ও মোহাম্মদ আমিরের দারুণ বোলিংয়ে ৯৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে নিজেদের পরাজয় ডেকে আনে ক্যারিবিয়ানরা। সেখান থেকে জেসন হোল্ডার, দেবেন্দ্র বিশু, আলঝারি জোসেফ এবং গ্যাব্রিয়েলকে নিয়ে লড়াকু জুটি গড়ে পাকিস্তানকে প্রায় হতাশ করেই দিচ্ছিলেন চেজ। তবে শেষ ওভারের আগের ওভারের শেষ বলের নাটকীয়তায় রোমাঞ্চকর জয় দিয়ে মিসবাহ-ইউনিসের বিদায়কে রঙিন করে দেন ইয়াসির। ৩০৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০২ রানে গুটিয়ে যায়।
প্রথম ইনিংসে আজহার আলির সেঞ্চুরি (১২৭), মিসবাহ (৫৯), বাবর আজম (৫৫) ও সরফরাজ আহমেদের (৫১) ফিফটিতে ৩৭৬ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে পাকিস্তান। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে রোস্টার চেজের ৬৯ রানের ইনিংসের ওপর ভর করে ২৪৭ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১২৯ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ উইকেটে ১৭৪ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ৩০৪ রানের বড় লক্ষ্য দাঁড়ায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হার এড়াতে প্রায় ৬ ঘণ্টা দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেন চেজ। তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। কিন্তু ২৩৯ বলে ১১০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলার পরও সতীর্থদের ব্যর্থতায় পরাজিত দলেই থাকতে হল চেজকে। তবে দুই ইনিংসেই লড়াকু ব্যাটিং করার সুবাদে ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গেছে এই ক্যারিবিয়ান তারকার ঝুলিতেই।
দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৫টি উইকেট নেন প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেয়া ইয়াসির। এছাড়া হাসান আলি ৩টি এবং আমির ও মোহাম্মদ আব্বাস নেন একটি করে উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পিচে পেসাররা আধিপত্য দেখালেও ব্যতিক্রম ছিলেন ইয়াসির। দুর্দান্ত স্পিনে তিন টেস্টে সর্বোচ্চ ২৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন এই পাকিস্তানি লেগস্পিনার। দারুণ বোলিংয়ের পুরস্কারস্বরূপ সিরিজ-সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন ইয়াসির।
বিদায়ী টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৯ রান করা মিসবাহ দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে আউট হন ২ রান করে। অন্যদিকে বিদায়ী টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইউনিস ১৮ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ৩৫ রান।
চার ম্যাচ টি-টুয়েন্টি সিরিজ ৩-১ ব্যবধানের জয় দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ শুরু করে পাকিস্তান। এরপর ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় পায় সরফরাজের দল। ডমিনিকা টেস্ট জিতে তিন ম্যাচ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে পকেটে পুরল মিসবাহ-ইউনিসের দল।