বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি জড়িত থাকার কথা ‘স্বীকার করেছে’ দাবি করে পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলন মিন্নির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর আগে, না পরে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
এছাড়া পুলিশ লাইনে নিয়ে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ, তাকে গ্রেপ্তার, আদালতে হাজির করা এবং রিমান্ডের সুনির্দিষ্ট তথ্য সম্পূরক আবেদনে যুক্ত করতে বলা হয়েছে।
মিন্নির জামিন আবেদনের আংশিক শুনানির এক পর্যায়ে সোমবার মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্নার প্রতি এই নির্দেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এবং মঙ্গলবার বেলা ২টায় আবার এই জামিন আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আজ আদালতে মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। সঙ্গে ছিলেন এম মঈনুল ইসলাম ও মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন।
এর আগে গত ৮ আগস্ট বিচারপতি শেখ মো: জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে এই জামিন আবেদন ফেরত নেন মিন্নির আইনজীবী। ওইদিন হাইকোর্ট বেঞ্চ মিন্নিকে জামিন না দিয়ে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করতে চেয়ে বলেন: জামিন দিতে হলে আগে এ মামলার ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দী দেখতে হবে। তাই আমরা শুধু রুল জারি করতে পারি।
তখন মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না মিন্নির জন্য জামিন প্রার্থনা করলে আদালত বলেন: “আমরা এখন রুল দিতে পারি অন্যথায় আপনারা আবেদনটি ‘টেক ব্যাক’ করতে পারেন। তখন মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন: ‘‘ওকে, আমরা জামিন আবেদনটি (ফেরত নিচ্ছি) ‘টেক ব্যাক’ করছি।’’
গত ৪ আগস্ট এই মামলায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন মিন্নি। এর আগে গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। তার আগে গত ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালত মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যার ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হলে সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশাকে। কিন্তু আয়েশার শ্বশুর মামলার ১৮ দিন পর গত ১৩ জুলাই এই হত্যাকাণ্ডে আয়েশা জড়িত এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করার পর মামলাটির তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়।
পরবর্তীতে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় মিন্নিকে। আর এই মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
এদিকে গত ২ জুলাই এই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।
অন্যদিকে গত ১৮ জুলাই দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বরগুনার এসপি মারুফ হোসেন বলেন: এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী এবং মিন্নির কথা থেকে পাওয়া সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মিন্নিকে এ মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিন্নি এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতেন। শুরু থেকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে যা যা প্রয়োজন, সব ধরনের মিটিং করেছেন হত্যাকারীদের সঙ্গে। মিন্নি নিজেও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে খুনিদের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথন হয়েছে।