ইন্টারন্যাশনাল সিম ও ফ্ল্যাশার ডিভাইস দিয়ে পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে চোরাই মোবাইল সেটগুলোর আইএমইআই নম্বর বদলে ফেলে একদল সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতিকারী।
চক্রটি মূলত ছিনতাই ও চোরাই মোবাইলগুলো অপরাধীদের কাছ থেকে অল্প টাকায় কিনে মোবাইল কেসিং, স্ক্রিন ও আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বেশি দামে বিক্রি করে অার্থিকভাবে লাভবান হত।
সোমবার রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে ৫৩১টি আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা চোরাই মোবাইল জব্দ, এসবের সঙ্গে জড়িত দুষ্কৃতি চক্রের ১৫ জনকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান – র্যাব।
আটকরা হলো, মো. মাসুদ লাকুরিয়া (১৮), মো. রাশেদ খান (২৪), মো. আনিস মোল্লা (২৮), মো. জাহিদুল ইসলাম (২১), মো. পলক (১৯), মো. রাশেদুল ইসলাম (২১), মো. নাঈম সরদার (১৮), মো. স্বপন (২৬), মো. মোতালেব (২৬), মো. রানা হামিদ (২২), মো. রিপন (৩৭), আব্দুল মান্নান (৩৯), মো. মাসুদ রানা (২৪), মো. নাজিম (২৬) এবং মো. কামাল হোসেন (২৭)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা ছয়টি ডিভাইস, কম্পিউটার, রাউটার, ডাটা কেবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে র্যাবের কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এমরানুল হাসান।
তিনি বলেন, সোমবার রাত সাতটার দিকে গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটের বিসমিল্লাহ টেলিকমে অভিযান চালিয়ে মো. মাসুদ লাকুরিয়াকে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা অবস্থায় আটক করা হয়। পরে মাসুদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে মাওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম মার্কেটের ১১টি দোকানে (আলী স্পোর্টস, সিমলা ইলেক্ট্রনিকস, সাকিব ইলেক্ট্রনিকস, আজমেরি ইলেক্ট্রনিকস, আবির ইলেক্ট্রনিকস, সুমাইয়া টেলিকম, ইলেক্ট্রনিকস কর্নার, আল-আমিন ইলেক্ট্রনিকস, রহমত ইলেক্ট্রনিকস ও সিটি ইলেক্ট্রনিকস) অভিযান চালিয়ে এ চক্রের আরো ১৪ জনকে আটক করা হয়।
এমরানুল হাসান বলেন, জব্দ করা ৫৩১টি সিমের কোনো বৈধ কাগজপত্র দোকানিরা দেখাতে পারেনি, তারা ইন্টারনেট থেকে কেনা একটি সফটওয়্যার দিয়ে আইএমইআই নম্বর পাল্টে দিত। এসব করতে তারা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফ্ল্যাশার ডিভাইস (ফ্যালকন, সিগমা, জেকেএফ) ও ইন্টারন্যাশনাল সিম ব্যবহার করত।
তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল সিম দিয়ে অাসামিরা সফটওয়্যারটিকে ইনস্টল করত, পরে স্ক্রিন পপ-আপ করে সেটের মডেল ও ব্র্যান্ডের নাম চাইলে তা দিত। সবশেষে সফটওয়্যারটি যখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট কিংবা আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন কোড চাইলে তা সাবমিট করত। পরে পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে চোরাই মোবাইল সেটগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলত চক্রের সদস্যরা।
র্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার আরো বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মাসুদ লাকুরিয়া জানায়, তার ওস্তাদের কাছ থেকে এই আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা শিখে। তার ওস্তাদ বর্তমানে দেশের বাইরে আছে। গত এ বছর ধরে সে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
এক প্রশ্নের জবাবে এমরানুল হাসান বলেন, মূলত কমদামি সেটগুলো দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকায় এবং দামি সেটগুলো সাত থেকে দশ হাজার টাকায় কিনে মোবাইল কেসিং, স্ক্রিন ও আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে পনেরো থেকে পঁচিশ হাজার টাকায় বিক্রি করত চক্রটি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন, এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি ইত্যাদি এসব নম্বর থেকে আপরাধীরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করে থাকত।
জব্দ করা মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন হওয়ায় প্রকৃত মালিকদের খুঁজে পাওয়া এখন আর সম্ভব নয় জানিয়ে এমরানুল হাসান বলেন: মোবাইলগুলো আমরা নিকটস্থ থানায় দিয়ে দিবো। পরে থানা পুলিশ সেগুলো ধ্বংস করবে।
এছাড়াও আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।